সাজ্জাদ মাহমুদ মনির, সুনামগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক থানার ওসি মো. শাহ আলমের কর্মদক্ষতায় বদলে গেছে ছাতক থানার সার্বিক চিত্র। পাচ্ছেন শ্রেষ্ঠত্বের পুরুষ্কার। উন্নতি হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির। সম্প্রতি থানায় কমতে শুরু করেছে মিথ্যা মামলা রুজুর সংখ্যা।
নিয়মিত অভিযানে বেড়েছে পরোয়ানাভুক্ত আসামি গ্রেপ্তারের সংখ্যা। পুলিশের কঠোর নজরদারিতে কমেছে উপজেলায় চুরি-ডাকাতি, ছিনতাই ও দস্যুতার মতো ঘটনা।
২৩সালের ৭ আগষ্টে ছাতক থানার ওসি মোহাম্মদ শাহ আলম (আইজিপি ব্যাজপ্রাপ্ত) যোগদানের পর থেকে এখন পর্যন্ত ৯৫টি সাজা পরোয়ানা খারিজ করা হয়েছে ও দুর্ধর্ষ ৬জন আন্তঃজেলা ডাকাত সর্দারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
বিগত বছর ও চলতি বছরের জানুয়ারী পর্যন্ত অপরাধ পরিসংখ্যান যাচাই করে এ তথ্য পাওয়া গেছে। তাছাড়াও বর্তমানে ছাতক থানা দালাল মুক্ত হওয়ায় স্থানীয়রা আইনি সেবা পেতে অনেকটা স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন সেবা গ্রহীতারা। যার বড় সাফল্য হিসেবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোন রকমের সংঘাত ছাড়া সুষ্ঠ সুন্দর হয়েছিল।
২৩সালের অক্টোবর হতে ডিসেম্বর পর্যন্ত কর্মমূল্যায়ন হিসেবে সিলেট বিভাগের মধ্যে শ্রেষ্ঠ নির্বাচিত হয়েছেন ছাতক সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার রণজয় চন্দ্র মল্লিক, ছাতক থানার সর্ব্বোচ্চ ওয়ারেন্ট তামিলকারী অফিসার এএসআই মো. মারুফ আল মুকিত ও স্ক্রুলেস মামলা উদঘাটন কারী ছাতক থানার এসআই সৈয়দ গোলাম সারোয়ার।
তাছাড়াও সুনামগঞ্জ জেলা পুলিশের মাসিক কল্যাণ সভায় নভেম্বর মাসের ছাতক থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা নিযন্ত্রণ, মামলা রুজুসহ সার্বিক বিবেচনায় তৃতীয় বারের মতো শ্রেষ্টত্ব অর্জনকারী হিসেবে ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি শাহ আলমকে পুরস্কৃত করা হয়েছে।
থানার অপরাধ পরিসংখ্যান হিসাব অনুযায়ী শাহ আলমের যোগদানের পর থেকে-২০২৩ সালের আগস্ট মাস থেকে ২৪ সালের জানুয়ারী মাস পর্যন্ত কোন ডাকাতি কিংবা দস্যুতার ঘটনা ঘটেনি।
খুন ৫টি, ধর্ষণ ৬টি, গবাদি পশু চুরি ১টি, অস্ত্র আইন ৩টি, চোরাচালান ২১টি, মাদক ১২টি, ১৯টি মহিষ উদ্ধার, ২শ বোতল ভারতীয় মদ, ৩০কেজি গাজা, প্রায় ১৩শ বস্তা চিনি ও ১৪০বস্তা পেয়াঁজ জব্দ, যৌতুক/সিধেল চুরি/মোবাইল চুরি/ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন/ সড়ক দুর্ঘটনা/ ১০টি সহ অন্যান্য আইনে ওই বছরের ৬ মাসে মোট মামলা রজু করা হয়েছিল ১৩৪টি।
নিষ্পত্তি করা হয়েছে ১৭৬টি। একই সময়ে থানা পুলিশের অভিযানে মোট গ্রেপ্তার করা হয়েছিলে ১৬৮ জনকে। মোট গ্রেপ্তারি পরোয়ানা তামিল করা হয়েছে মোট ৮৫টি। এর মধ্যে জিআর/সিআর মামলায় ৩০টি ও সাজাপ্রাপ্ত ২৮ জন আসামি গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আদালতে মোট নন এফআইআর প্রসিকিউশন দেওয়া হয়েছে ১১০টি।
এছাড়াও ভারতীয় পিয়াঁজ, চিনি, নাসির বিড়ি, গাজা, বিদেশী মদ ও শাড়ী জব্দ করা হয় ১কোটি ২৩লক্ষ ৩২হাজার ৭৩৫টাকার অবৈধ পন্য।
২০২৩ সালের জানুয়ারী থেকে জুলাই মাস পর্যন্ত ওসি মাইনুল জাকির থাকাকালীন সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি ঘটেছিল। মোট ৭ মাসে মামলা রুজু হয়েছে মাত্র ১৯১টি।
এর মধ্যে খুন ৮টি, ধর্ষণ ৭টি, গবাদি পশু চুরি ৫টি, পুলিশ আক্রান্ত ২টি, চোরাচালান ১০টি, মাদক ১৫টি, পুলিশ আক্রান্ত/ যৌতুক/সিধেল চুরি/মোবাইল চুরি/ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন/ সড়ক দুর্ঘটনা/ ১১টি সহ অন্যান্য মামলা রুজু করা হয়।
নিষ্পত্তি করা হয় ১৮৬টি। তাছাড়াও ভারতীয় চিনি, নাসির বিড়ি, গাজা, বিদেশী মদ জব্দ করা হয় ৮লক্ষ ১০হাজার টাকার অবৈধ পন্য।
এদিকে, মামলার রুজুর বিষয়ে কঠোর যাচাই-বাছাইর কারণে ইদানিং মিথ্যা মামলা থেকেও রেহাই পাচ্ছেন স্থানীয় জনসাধারণ। পুলিশ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিতই বিট পুলিশিংয়ের মাধ্যমে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে মাইকিং এর কারনে বড় রকমের দাঙ্গা-হাঙ্গামার ঘটনাও নাই বল্লেই চলে এছাড়াও এলাকার বিভিন্ন হাট বাজারে গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে আলোচনা পর্যালোচনার কারণে কমেছে হামলা মামলার প্রবণতা।
সর্বশেষ চলতি মাসের ৫ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত পুলিশের বিশেষ অভিযানে ভারতীয় পণ্য পিয়াঁজ, চিনি সহ ৭জন আসামিকে গ্রেপ্তারসহ টিউবওয়েল চুরির পণ্য উদ্ধার করা হয়েছে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, আমি থানায় যোগদানের পর দীর্ঘদিনের পুরনো বেশ কিছু বিরোধের বিষয় আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। হাতে চলমান মামলা রয়েছে মাত্র ৩৫টি।
সমাজের সকল শ্রেণি-পেশার লোকজনের সহযোগিতায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যার বড় দৃষ্টান্ত দ্বাদশ নির্বাচনে কোন রকমের সংঘাত ছাড়াই সুষ্ট সফল নির্বাচন করতে পেরেছি।