Friday, November 8, 2024
Homeসারাদেশবিশ্ব ইজতেমা শুরু কাল, দলে দলে আসছেন মুসল্লি

বিশ্ব ইজতেমা শুরু কাল, দলে দলে আসছেন মুসল্লি

বিশেষ প্রতিনিধি:

 

 

গাজীপুরের টঙ্গীর তুরাগ তীরে কাল শুরু হচ্ছে তাবলিগ জামাতের ৫৭তম বিশ্ব ইজতেমার প্রথম পর্ব। এতে অংশ নিতে দলে দলে আসছেন মুসল্লিরা। বুধবার সকাল থেকেই দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে শুরু করে বিদেশ থেকেও তাবলিগ অনুসারীরা ময়দানে জড়ো হতে থাকেন। বাস, ট্রাক ও পিকআপে করে প্রয়োজনীয় মালামাল নিয়ে আসছেন অনেকে। এরপর তারা যার যার নির্ধারিত খিত্তায় অবস্থান নিচ্ছেন।

 

এরইমধ্যে ইজতেমার সার্বিক প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। ময়দানে মুসল্লিদের অবাধ প্রবেশ নিশ্চিত করতে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের সদস্যরা তুরাগ নদে ৫টি এবং বিআইডব্লিউটিএ ১টি ভাসমান পন্টুন সেতু নির্মাণ করেছে। এছাড়া ১৬০ একর জমির ওপর নির্মিত সুবিশাল প্যান্ডেলের কাজ, খুঁটিতে নম্বর প্লেট, খিত্তা নম্বর, জুড়নেওয়ালি জামাতের কামরা, মুকাব্বির মঞ্চ, বয়ান মঞ্চ, তাশকিল কামরা, বধির সাথীদের জন্য বিশেষ কামরা, পাহারা ও এস্তেকবালের (অভ্যর্থনা) জামাত তৈরি, হালকা নম্বর বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে চট স্বল্পতার কারণে এবার অধিকাংশ খিত্তার শামিয়ানা বিভিন্ন জেলার তাবলিগের সাথীরা নিজ নিজ দায়িত্বে টানিয়েছেন।

 

 

ইজতেমা ময়দানের মাইকের জিম্মাদার প্রকৌশলী আশরাফ আলী জানান, মুসল্লিদের সুষ্ঠুভাবে বয়ান শোনার জন্য পুরো ময়দানে শব্দ প্রতিধ্বনিরোধক প্রায় ২শ বিশেষ ছাতা মাইক, ৫০টি ইউনিসেফ (প্রতিধ্বনি প্রতিরোধক) মাইকসহ প্রায় আড়াইশটি মাইক স্থাপন করা হয়েছে।

 

জানা গেছে, কাল বাদ ফজর আ’ম বয়ানের মধ্যদিয়ে শুরু হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি জোহরের নামাজের আগে আখেরি মোনাজাতের মধ্যদিয়ে শেষ হবে ইজতেমার প্রথম পর্ব।

 

দেশ-বিদেশের মুসল্লিদের অবস্থান : বুধবার থেকেই লাখ লাখ দেশি-বিদেশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লি ময়দানে তাদের নিজ নিজ খিত্তায় অবস্থান নিয়েছেন। সিরাজগঞ্জের বেলকুচি থেকে লাল মিয়া, হাসান আলী, আসলাম মিয়া, মাহিম ও বাবুলসহ ১৭ জনের একটি জামাত ময়দানে এসেছে।

 

আইনশৃঙ্খলা জোরদার : ময়দানের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আজ থেকে প্রায় ৬ হাজার পুলিশসহ র‌্যাব, সাদা পোশাকধারী বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় ১৫ হাজার সদস্য মোতায়েন থাকবে। নিরাপত্তা জোরদার করতে র‌্যাবের কমিউনিকেশন উইং, পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ১৭টি প্রবেশপথসহ চারপাশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে তিন শতাধিক ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বুধবার ইজতেমা ময়দান পরিদর্শন শেষে পুলিশের মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন ও র‌্যাবের মহাপরিচালক এম খুরশীদ হোসেন এসব তথ্য জানান।

 

ময়দানে জেলাভিত্তিক খিত্তা : গাজীপুর-খিত্তা ১, টঙ্গী-২, ৩ ও ৪, ঢাকার মিরপুর-৫ ও ৬, সাভার-৭ ও ৮, মোহাম্মদপুর-৯, কেরানীগঞ্জ-১০ ও ১১, কাকরাইল-১২ থেকে ১৫ ও ১৮, ২০, ২১, যাত্রাবাড়ী-১৬ ও ২৮, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২২, নওগাঁ-২৩, নাটোর-২৪, টাঙ্গাইল-২৫, ঢাকার নবাবগঞ্জ-২৬, ধামরাই-২৭, সিরাজগঞ্জ-২৯, ঢাকার দোহার-৩০, রংপুর-৩১, নীলফামারী-৩২, জয়পুরহাট-৩৩, গাইবান্ধা-৩৪, বগুড়া-৩৫, লালমনিরহাট-৩৬, দিনাজপুর-৩৭, নারায়ণগঞ্জ-৩৮ ও ৩৯, নড়াইল-৪০, মুন্সীগঞ্জ-৪১, বরিশাল-৪২, ঝালকাঠি-৪৩, ভোলা-৪৪, নরসিংদী-৪৫, যশোর-৪৬, সাতক্ষীরা-৪৭, বাগেরহাট-৪৮, চুয়াডাঙ্গা-৪৯, মেহেরপুর-৫০, জামালপুর-৫১ ও ৫২, ময়মনসিংহ-৫৩ ও ৫৫, কুষ্টিয়া-৫৪, শেরপুর-৫৬, নেত্রকোনা-৫৭, কিশোরগঞ্জ-৫৮, গোপালগঞ্জ-৫৯, খাগড়াছড়ি-৬০, রাঙামাটি-৬১, ফরিদপুর-৬২, বান্দরবান-৬৩, কক্সবাজার-৬৪, পিরোজপুর-৬৫, হবিগঞ্জ-৬৬, সিলেট-৬৭, সুনামগঞ্জ-৬৮, ফেনী-৬৯, নোয়াখালী-৭০, লক্ষ্মীপুর-৭১, চাঁদপুর-৭২, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৭৩, খুলনা-৭৪, পটুয়াখালী-৭৫, বরগুনা-৭৬, চট্টগ্রাম-৭৭ ও ৭৮, কুমিল্লা-৭৯। এছাড়া তুরাগ নদের পশ্চিম পাড়ের ময়দানে ঝিনাইদহ-৮০, মাগুড়া-৮১, কুড়িগ্রাম-৮২, ঠাকুরগাঁও-৮৩, পাবনা-৮৪, মানিকগঞ্জ-৮৫, মৌলভীবাজার-৮৬, পঞ্চগড়-৮৭, মাদারীপুর-৮৮, শরীয়তপুর-৮৯, রাজবাড়ি-৯০। বধিরদের জন্য ৯১নং খিত্তা রাখা হয়েছে। এছাড়াও ১০১ থেকে ১০৫ পর্যন্ত ৫টি খিত্তা সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। বিদেশি মেহমানরা বরাবরের মতো এবারও ময়দানের উত্তর-পশ্চিম কোণে তাদের জন্য নির্ধারিত স্থানে অবস্থান নিয়েছেন।

 

২৭৫ কিমি. হেঁটে ইজতেমায় : কুষ্টিয়ার মিরপুরের কল্যাণপুর গ্রাম থেকে ২৭৫ কিলোমিটার হেঁটে ইজতেমায় এসেছেন রাজু আহমেদ (৬০) নামের এক মুসল্লি। তিনি যুগান্তরকে জানান, আল্লাহকে রাজি-খুশি করার জন্য কুষ্টিয়া থেকে টানা ৫ দিন হেঁটে বুধবার টঙ্গীর ময়দানে এসেছেন। জিকির আসকার, তাসবিহ-তাহলিল ও নফল ইবাদত করে সময় কাটাবেন। রোববার আখেরি মোনাজাত শেষে বাড়ি ফিরবেন।

 

মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম : টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, টঙ্গী সরকারি হাসপাতালে ইজতেমা উপলক্ষ্যে অস্থায়ীভাবে শয্যা সংখ্যা বাড়ানো হবে। সেই সঙ্গে মুসল্লিদের স্বাস্থ্যসেবায় বক্ষব্যাধি/অ্যাজমা ইউনিট, হৃদরোগ, ট্রমা (অর্থোপেডিক), বার্ন, ডায়রিয়া ইউনিট, স্যানিটেশন টিম ও ২০টি অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়াও চক্ষু, মেডিসিন ও সার্জারিসহ বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞসহ ১০০ চিকিৎসক রোস্টার অনুযায়ী চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত থাকবেন। হাসপাতালের চিকিৎসকসহ সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে।

 

দুই মুসল্লির মৃত্যু : টঙ্গীতে বুধবার দুই মুসল্লির মৃত্যু হয়েছে। এদের মধ্যে একজন ইজতেমায় আসার পথে এবং অপরজন ইজতেমায় অংশগ্রহণের পর মারা গেছেন। নিহতরা হলেন-চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সদরের চৌহদ্দীটোলা গ্রামের সাইফুল ইসলামের ছেলে জামান (৪০) ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার ধামাউরা গ্রামের মৃত বুদু মিয়ার ছেলে ইউনুছ মিয়া (৬০)। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার ভোর ৫টায় জামান ইজতেমায় আসেন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে টঙ্গী শহিদ আহসান উল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। এর আগে দুপুরে ইজতেমায় আসার পথে মীরের বাজার এলাকায় অসুস্থ হয়ে পড়েন ইউনুস মিয়া। তাকে হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments