Sunday, November 24, 2024
Homeসিলেট বিভাগসিলেটে ইদানীং বাড়ছে কুষ্ঠরোগী

সিলেটে ইদানীং বাড়ছে কুষ্ঠরোগী

বিশেষ প্রতিনিধি:

সিলেটে কুষ্ঠরোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গত বছর জেলায় কুষ্ঠরোগী শনাক্ত হয়েছিল ৭৯ জন। যা গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। শনাক্তদের মধ্যে ২৮ জন নারী ও পুরুষের সংখ্যা ৫১ জন। চলতি বছরে জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখের মধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে দুজনের। আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে চা-বাগানের শ্রমিকের সংখ্যা বেশি।

 

এ অবস্থায় সিলেটে আজ রোববার পালন করা হবে বিশ্ব কুষ্ঠ দিবস। প্রতিবছর জানুয়ারি মাসের শেষ রোববার এ দিবস পালন করা হয়। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘আত্মমর্যাদার পরিবেশ, কুষ্ঠ-কলঙ্কের হবে শেষ।’ দিবসটি উপলক্ষে সিলেট সিভিল সার্জন কার্যালয়ের আয়োজনে রোববার সকাল ১০টায় শোভাযাত্রা ও আলোচনা সভা হবে। আয়োজনের পৃষ্ঠপোষকতা করছে কুষ্ঠরোগ নিয়ে কাজ করা বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা লেপ্রা বাংলাদেশ।

 

সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতাল এবং লেপ্রা বাংলাদেশের তথ্যমতে, জেলায় কুষ্ঠরোগ শনাক্ত হওয়া রোগীদের মধ্যে ৬৫ শতাংশই চা–বাগানের শ্রমিক পরিবারের। দেশের কুষ্ঠ চিকিৎসার সরকারি ৩টি হাসপাতালের মধ্যে সিলেটের ৮০ শয্যার কুষ্ঠ হাসপাতাল অন্যতম। ৮০ শয্যার হাসপাতাল হলেও সিলেটের হাসপাতালটিতে শয্যাসংখ্যা রয়েছে ৪৮টি। তিনটি ওয়ার্ডে গতকাল শনিবার সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ১৫ জন। এ ছাড়া প্রতিদিন গড়ে ১০ থেকে ১৩ জন হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নেন।

 

কুষ্ঠ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯ সালে জেলায় কুষ্ঠরোগী ছিল ৪৬ জন। ২০২০ সালে ১৯ জন, ২০২১ সালে ৩৭ ও ২০২২ সালে ৩৬ জন শনাক্ত হয়।

 

কুষ্ঠ হাসপাতালের চিকিৎসকেরা বলছেন, কুষ্ঠরোগ ছোঁয়াচে নয়, মৃদু সংক্রামক। জীবাণুর মাধ্যমে এর সংক্রমণ হয়। এ জীবাণু হাঁচি-কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। প্রথমে চামড়ায় হালকা ফ্যাকাশে বাদামি বা লালচে অনুভূতিহীন দাগ, যেখানে চুলকায় না, ঘামে না এবং ওই স্থানে লোম থাকে না। মুখে, ঘাড়ে বা বুকে-পিঠে ব্যথাহীন দানা বা গুটি, কানের লতি ফুলে যাওয়া, হাত-পা চোখে অনুভূতি না পেলে দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার কথা জানান চিকিৎসকেরা।

 

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন জন্মেজয় দত্ত বলেন, কুষ্ঠরোগী বেশি শনাক্ত হচ্ছেন, এর মানে এই নয় যে রোগের সংক্রমণ বাড়ছে। আগেও অনেকে কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হতেন, তবে তাঁরা শনাক্ত হতেন না। এখন মানুষের সচেতনতা বাড়ছে, তাঁরা চিকিৎসা নিতে আসছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আগামী ২০৩০ সালের মধ্যে কুষ্ঠরোগ নির্মূল করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য বিভাগ এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার সমন্বয়ে কার্যক্রম বাড়ানোয় সুফল এসেছে।

 

চা-শ্রমিকেরা বেশি আক্রান্ত

সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মির্জা ওমর বেগ বলেন, চা–বাগানের শ্রমিকদের মধ্যে এ রোগের প্রবণতা বেশি। তাঁদের মধ্যে সচেতনতার অভাব রয়েছে। চা–বাগানের অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের কারণে তাঁদের মধ্যে সংক্রমণের হার বেশি। দ্রুত শনাক্ত এবং নিয়ম অনুযায়ী ওষুধ খেলে কুষ্ঠরোগী সম্পূর্ণ সুস্থ হন। দ্রুত চিকিৎসা না নিলে বিকলাঙ্গ হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থাকে।

 

সিলেটের হিলুয়াছড়া চা–বাগানের এক শ্রমিকের (৮৫) প্রায় ১০ বছর আগে কুষ্ঠরোগ শনাক্ত হয়। প্রায় তিন বছর আগে তাঁর মেয়েরও (৩৮) এ রোগ দেখা দেয়। একই বাগানের আরও দুজন এ রোগে আক্রান্ত। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের শরীরে চামড়ায় প্রথমে ফ্যাকাশে হয়ে যাওয়া দাগ দেখা যায়। পরে সেটি কুষ্ঠরোগ হিসেবে শনাক্ত হয়েছে। ওষুধ খেয়ে এখন তাঁরা সুস্থ আছেন।

 

শ্রীমঙ্গলের এক তরুণ (২৬) সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতালে শনিবার চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁদের পরিবারের তিনজন কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

 

নানা সংকটে সিলেট কুষ্ঠ হাসপাতাল

এ হাসপাতালে সহকারী স্টাফ নার্স হিসেবে পাঁচটি পদ থাকলেও সব পদই শূন্য। অফিস সহায়কের ৯টি পদ থাকলেও এর বিপরীতে লোক নেই। কুষ্ঠরোগীদের জন্য বিশেষ জুতা তৈরির জন্য একজন কর্মী থাকার কথা হাসপাতালে, এই পদটি ২০২১ সাল থেকে শূন্য।

 

হাসপাতালের কুষ্ঠরোগ শনাক্তের অণুবীক্ষণ যন্ত্র থাকলেও সেটি বহু বছরের পুরোনো। রয়েছে বিশুদ্ধ খাবার ও দৈনন্দিন ব্যবহারের পানির সংকট। পানিসংকট সমাধানে সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল এবং সিলেট সিটি করপোরেশনের কাছে একাধিকবার লিখিত আবেদন জানিয়েছেন কুষ্ঠ হাসপাতালের জুনিয়র কনসালট্যান্ট মির্জা ওমর বেগ। সর্বশেষ গত ১৮ নভেম্বর স্বাস্থ্য প্রকৌশল এবং ১৮ আগস্ট সিলেট সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেওয়া হয়।

 

সিলেট বিভাগীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের সহকারী প্রকৌশলী মো. ইউসুফ আলী বলেন, পানিসংকট সমাধানে তাঁদের কাছে লিখিত আবেদন জানানোর বিষয়টি তাঁর জানা নেই। তিনি খোঁজ নিয়ে দেখবেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments