লাইফস্টাইল:
মানবদেহের ত্বকের সমস্যা চিরায়ত। তবে যত্ন নিলে ত্বকের সমস্যার সমাধান করা সম্ভব। ত্বকের যত্নের নানা উপাদানের মধ্যে খুব জনপ্রিয় উপাদান গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। মুখের ত্বকের মৃত কোষ দূর করা ছাড়াও ত্বকের আরও পাঁচটি সমস্যা দূর করার ক্ষমতা আছে এই উপাদানের। আসুন সেগুলোই জেনে নেওয়া যাক।
ডার্মাটোলজিস্টরা বলেন, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড একধরনের আলফা হাইড্রোক্সি অ্যাসিড। এটি কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েটর হিসেবে বেশি কার্যকর। তাই এই কাজেই এটির ব্যবহার বেশি হয়। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড খুব কোমলভাবে ত্বকের উপরিভাগ থেকে মৃত কোষ দূর করে। এ ছাড়াও এটি ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখতে ও ত্বকের কোলাজেন উৎপাদন বাড়াতেও অনেক কার্যকর। মুখ ত্বক ছাড়াও শরীরের বিভিন্ন স্থানে হওয়া অন্তত পাঁচটি সমস্যার সমাধান দিতে পারে বহু গুণে গুণান্বিত গ্লাইকোলিক অ্যাসিড।
ব্যাকনে বা পিঠের ব্রণ সারাতে :
মানবদেহে শুধু মুখের ত্বকে নয়, শরীরের আরও অন্যান্য ত্বকেও ব্রণ হতে পারে। মুখের পর সবচেয়ে বেশি ব্রণ দেখা দেয় পিঠে। কারণ, এখানেও মুখের মতো ঘাম, ময়লা, অতিরিক্ত সিবাম জমে রোমকূপ বন্ধ করে দেয়। ত্বকের এই বিরক্তিকর সমস্যা থেকে সমাধান পেতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিডের থেকে ভালো উপাদান খুবই কার্যকরী। এটি শুধু ত্বকের ওপরে জমে থাকা মৃত কোষই দূর করে না, রোমকূপ গভীরভাবে পরিষ্কার করে ব্রণ দূর করে। যাদের পিঠে ব্রণ হয়েছে, তারা সপ্তাহে তিন দিন গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করলে ভালো ফল পাবেন। আর ব্রণ সেরে যাওয়ার পর এটি প্রতিরোধে সপ্তাহে অন্তত দুই দিন ব্যবহার করলে ব্রণ দূর হয়ে যাবে।
ফাটা পায়ের পরিচর্যা :
শীতের সময়ে পায়ের গোড়ালি ফাটা ত্বকের স্বাভাবিক একটি সমস্যা। অনেকেরই এই সমস্যা রয়েছে। পায়ে ফাটার একটি দারুণ সমাধান পাওয়া গেছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। এখানে অনেক বিউটি ইনফ্লুয়েন্সারকে ফাটা গোড়ালিতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে দেখা গেছে। তাছাড়া ডার্মাটোলজিস্টরাও এই ট্রেন্ডকে দিয়েছেন সবুজসংকেত। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড খুব কোমলভাবে মৃত চামড়া দূর করে পায়ের গোড়ালি মসৃণ করে তোলে। এক্ষেত্রে প্রথমে এটি ব্যবহার করে মিনিট দুই অপেক্ষা করতে হবে। এরপর এর ওপরেই ময়েশ্চারাইজার ক্রিম বা লোশন লাগাতে হবে। আর এভাবেই পা ফাটা থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
আন্ডারআর্ম এর যত্ন নিন :
ডার্মাটোলজিস্টদের মতে, আন্ডারআর্ম বা বগলের যাবতীয় সমস্যার এক সমাধান হলো গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। অনেকের আন্ডারআর্মে হাইপারপিগমেন্টেশনের সমস্যা থাকে। এটি কমাতে নাকি ম্যাজিকের মতো কাজ করে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। এ ছাড়া ঘামের দুর্গন্ধ রোধে ডিওডোরেন্ট হিসেবে ব্যবহার করা যায় গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। এই কায়দাটাও পাওয়া গেছে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে। ঘামের দুর্গন্ধ রোধের এই পদ্ধতিকে ডার্মাটোলজিস্টরাও ‘হ্যাঁ’ ভোট দিয়েছেন। তাদের মতে, গ্লাইকোলিক অ্যাসিড মৃত কোষ দূর করে, তাই আন্ডারআর্মে কোনো ব্যাকটেরিয়া জমতে পারে না। মূলত ব্যাকটেরিয়ার কারণেই ঘামের দুর্গন্ধ হয়। এ ছাড়া আন্ডারআর্মে ভুলভাবে শেভিংয়ের পর ইনগ্রোন হেয়ার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গ্লাইকোলিক অ্যাসিড দিয়ে এক্সফোলিয়েট করলে এটি হওয়ার ঝুঁকি থাকে না বললেই চলে।
স্ট্রবেরি লেগ সারাতে করণীয় :
ত্বকের এক অদ্ভুত সমস্যা হলো স্ট্রবেরি লেগ। অনেক সময় শেভিংয়ের পর পায়ে কিছু দাগ ফুটে ওঠে। সাধারণত শেভ করার পর চুলের ফলিকল বা আটকে থাকা রোমকূপ বাতাসের সংস্পর্শে চলে আসে। তখন এটি অক্সিডাইজ হয়ে এমন কালো দাগ দেখা দেয়। এই ফুটে ওঠা কালো দাগ দেখতে অনেকটা স্ট্রবেরির গায়ে থাকা বীজের মতো মনে হয়। তাই এই ত্বক সমস্যার নাম দেওয়া হয়েছে স্ট্রবেরি লেগ। এই সমস্যা সমাধানে অন্যতম কার্যকর পদ্ধতি হলো কেমিক্যাল এক্সফোলিয়েশন। এই জন্য ব্যবহার করতে পারেন গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। সপ্তাহে অন্তত দুই দিন পায়ের ত্বক গ্লাইকোলিক অ্যাসিড দিয়ে এক্সফোলিয়েট করলে এর উপরিভাগে জমতে থাকা মৃত কোষ সরাতে সহায়তা করে। এ ছাড়া গ্লাইকোলিক অ্যাসিড আছে, এমন বডি ওয়াশ বা বডি লোশন ব্যবহার করলেও এ সমস্যা থেকে সমাধান পাওয়া যায় বলে ডার্মাটোলজিস্টরা পরামর্শ দেন।
মাথার ত্বকের খুশকি কমাবেন যেভাবে :
মাথার ত্বক থেকে খুশকি তাড়াতে ব্যবহার করা যায় গ্লাইকোলিক অ্যাসিড। এটি মাথার ত্বক এক্সফোলিয়েট করে খুশকি দূর করতে সাহায্য করে। অনেক বছর ধরে ট্রাইকোলজিস্টরা (চুলরোগবিশেষজ্ঞ) মাথার ত্বকের সোরাইসিস বা সেবোরিক ডার্মাটাইটিসের চিকিৎসায় এই অ্যাসিড ব্যবহার করে আসছেন। কারণ, এতে রয়েছে অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল উপাদান। এটা ত্বকে ইস্ট ও ব্যাকটেরিয়া রোধে সহায়তা করে। আর তাই খুশকি ঠেকাতে গ্লাইকোলিক অ্যাসিড ব্যবহার করতে পারেন। তবে অবশ্যই সপ্তাহে দুই দিনের বেশি নয়।
মডেল : কণ্ঠশিল্পী আনিসা তালুকদার।