বিশেষ প্রতিনিধি:
হবিগঞ্জের পইল গ্রামে প্রতিবছরের মতো এবারো মাছের মেলা বসেছে। পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে এ মেলা দুই শতাধিক বছর ধরে চলে আসছে। মেলার প্রধান আকর্ষণ বিভিন্ন প্রজাতির মিঠাপানির মাছ। এখানে দেখা মেলে বিলুপ্ত প্রায় অনেক মাছেরও।
এবারের মেলায় প্রায় ৭০ কেজি ওজনের একটি বাঘাইড় মাছ উঠেছে। যার দাম হাঁকেন বিক্রেতা ১ লাখ ২০ হাজার টাকা। এটিই মেলায় আগত মানুষদের আকৃষ্ট করেছে বেশি।
এছাড়াও বিশালাকৃতির বোয়াল ও কাতল মাছের দেখা মেলে। এসব মাছ দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন মেলায় আসা নারী, পুরুষ, শিশুদের। অনেকেই বড় বড় মাছগুলো দেখেন আর ছবি তুলেন।
মেলায় আসা সবচেয়ে বড় বাঘাইর মাছের মালিক বাহুবল উপজেলার ভেড়াখাল গ্রামের বাসিন্দা ইসলাম উদ্দিন বলেন, মাছটি তিনি সিলেট থেকে নিয়ে এসেছেন। এটি সিলেটের সুরমা নদীর মাছ। আমি মাছটির ১ লাখ ২০ হাজার টাকা দাম চাচ্ছি। এটি বাজারের এবারের সবচেয়ে বড় মাছ। এর ওজন প্রায় ৭০ কেজি।
সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফেরদৌস আরা বেগম জানান, প্রতি বছরের ন্যায় এবারো পইল মাছের মেলা বসেছে। আমরা এবারো এসেছি; কিন্তু এবার মাছের দাম অতিরিক্ত চাওয়া হচ্ছে।
সিনিয়র সাংবাদিক মো. ফজলুর রহমান বলেন, প্রতি বছর পহেলা মাঘ এখানে মাছের মেলা বসে। মেলায় আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে ক্রেতা এবং মাছ বিক্রেতারা আসেন। এ মেলাকে কেন্দ্র একটি উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
লন্ডন প্রবাসী নবীগঞ্জ উপজেলার বাউসা গ্রামের বাসিন্দা সালিক মিয়া শাহ জানান, তিনি ৩ দিন পূর্বে ইংল্যান্ড থেকে দেশে এসেছেন। সোমবার তিনি মেলায় এসেছেন। একটি মাছও কিনেছেন। মেলা দেখতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত বোধ করছেন বলে জানান।
মেলা উদযাপন কমিটির উপদেষ্টা মো. তাজুল ইসলাম বলেন, প্রায় দুই শতাধিক বছর ধরে এখানে মাছের মেলা চলছে। কখনো কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এখানে জুয়াসহ অসামাজিক কাজের কোনো সুযোগ নেই। আমাদের ভলান্টিয়াররা সার্বক্ষণিক নজরদারি করছেন।
তিনি বলেন, মেলা উপলক্ষে আমাদের গ্রামের হিন্দু, মুসলিম সব পরিবারে উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আত্মীয়স্বজনরা আসেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, মেলায় বৃহৎ আকারের বোয়াল, আইড়, চিতল, গজার, রুই, কাতলা, কার্ফুসহ বিভিন্ন প্রজাতির বড় বড় মাছ উঠেছে। দুপুরের পর থেকে মুলত: মেলায় লোক সমাগম শুরু হয়। শুধু হবিগঞ্জ নয়, আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে মেলায় মানুষ আসেন।
সোমবার থেকে শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হয় মঙ্গলবার দুপুরে। মেলায় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের পাশাপাশি পুলিশও মোতায়েন করা হয়। প্রতি বছর মেলায় কয়েক কোটি টাকার মাছ বিক্রি করা হয়ে থাকে।