Saturday, November 23, 2024
Homeরাজনীতিআওয়ামীলীগএমপি হতে দৌড়ঝাঁপ নেত্রী-অভিনেত্রীদের, আ.লীগের সংরক্ষিত নারী আসন

এমপি হতে দৌড়ঝাঁপ নেত্রী-অভিনেত্রীদের, আ.লীগের সংরক্ষিত নারী আসন

বিশেষ প্রতিনিধি:

 

 

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেষ হওয়ার পর এবার সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে নারী প্রার্থীদের। তাদের মধ্যে আছেন মহিলা লীগ, যুব মহিলা লীগসহ আন্দোলন-সংগ্রমে দলের জন্য নিবেদিত সাবেক ছাত্রনেত্রী।

তেমনি আছেন সংস্কৃতি অঙ্গনের তারকা শিল্পী ও অভিনেত্রীরাও। একাদশ বা আগে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের এমপিদের অনেকেই আবার চান এমপি হতে।

শিক্ষক, উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশাজীবী সংগঠনের নারী নেত্রীরাও চান ক্ষমতাসীন দলের সু-নজর। তাদের অনেকেই আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। যোগ দিচ্ছেন গণভবনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। ধরনা দিচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতা-মন্ত্রীদের কাছেও। জানাচ্ছেন আন্দোলন ও নির্বাচনে দলের পক্ষে ভূমিকার কথা।

 

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নের ক্ষেত্রে তৃণমূল থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত নারীদের মূল্যায়ন করা হতে পারে। মনোনয়ন পেয়েও জোট বা শরিকদের জন্য আসন ছেড়ে দেওয়া এবং যোগ্যতায় এগিয়ে থাকার পরেও যাদের নানা কারণে দলের মনোনয়ন দেওয়া সম্ভব হয়নি এমন নারী নেত্রীরা এগিয়ে থাকবেন সংরক্ষিত আসনে দলীয় মনোনয়নে।

আওয়ামী লীগের দুর্দিনের ত্যাগী ও নিবেদিত প্রয়াত নেতা-মন্ত্রীদের স্ত্রী-কন্যাদের যারা রাজনীতিতে সম্পৃক্ত তারাও পেতে পারেন দলের সমর্থন। একই সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তির সমাজের বিশিষ্টজনদেরও সংরক্ষিত আসনে এমপি বানিয়ে স্বীকৃতি দেবে আওয়ামী লীগ। বিবেচনায় এগিয়ে থাকবেন অভিনেত্রী-শিল্পী-ব্যবসায়ী-সমাজকর্মীসহ দলের প্রয়োজনে কাজ করা তারকরাও।

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য এবং জাতীয় সংসদের উপনেতা মতিয়া চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, এটা নিয়ে নতুন কোনো চমকের কিছু নেই।

অতীতে যেভাবে হয়েছে এবারও সেভাবেই যথাযথ বিধি-বিধান অনুযায়ী সংসক্ষিত নারী আসনের সংসদ-সদস্য নির্বাচিত করা হবে। এটা সম্পূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় হবে বলেও জানান তিনি।

 

জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী লিটন যুগান্তরকে বলেন, এটা একটা নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে হয়। আগ্রহীরা আবেদন ফরম পূরণ করে আবেদন করবেন। যাচাই-বাছাই হবে। এখানে এমপিরা ভোট দেবেন। এভাবেই সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি নির্বাচিত হন।

 

নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ যুগান্তরকে বলেন, নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ইসি সচিবালয় এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন নির্বাচন কমিশন।

 

সংবিধান অনুযায়ী একটি রাজনৈতিক দলের ৬ জন নির্বাচিত সংসদ-সদস্য থাকলে ওই দল থেকে একজন প্রার্থী সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ-সদস্য হবেন। সে হিসাবে আওয়ামী লীগ ৩৭টি ও জাতীয় পার্টি দুজন নারী সংসদ-সদস্য পাবেন।

আর এবারের সংসদে ৬২ জন স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য রয়েছেন, সেই হিসাবে এরা সম্মিলিতভাবে ১০ জন সংরক্ষিত নারী সদস্য পাবেন। তবে স্বতন্ত্ররা জোটগত সিদ্ধান্ত না নিতে পারলে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল এই ১০ সংরক্ষিত আসনে নারী সংসদ-সদস্য নির্বাচিত করবেন।

 

আইন অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলের গেজেট প্রকাশের ৯০ দিনের মধ্যে জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। ৯ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের গেজেট প্রকাশিত হওয়ায় আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে সংরক্ষিত আসনের নির্বাচন করতে হবে।

প্রথাগতভাবে সংরক্ষিত নারী আসনে সাধারণত আসনের চেয়ে বেশি প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা না দেওয়ায় দল বা জোট মনোনীত প্রার্থীরা বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। ফলে সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হতে আগ্রহীরা নিজেদের দল বা জোটের নেতাদের কাছেই ধরনা দিচ্ছেন। নানাভাবে চেষ্টা করছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সু-দৃষ্টি আকর্ষণের।

 

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পরেও তিন নেত্রীকে জোট ও শরিকদের জন্য আসন ছাড়তে হয়েছিল- তারা হলেন- লক্ষ্মীপুর-৪ আসনে ফরিদুন্নাহার লাইলী, গাইবান্ধা-১ আসনে আফরুজা বারী ও গাইবান্ধা-২ আসনে মাহবুব আরা বেগম গিনি। সংরক্ষিত নারী আসনে তাদের এবার দেখা যেতে পারে।

মহিলা আওয়ামী লীগ এবং যুব মহিলা লীগের বর্তমান ও সাবেক শীর্ষ নেত্রীরাও আছেন সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়ন দৌড়ে। তাদের মধ্যে মহিলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মেহের আফরোজ চুমকি দলীয় মনোনয়ন পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থীর কাছে হেরে গেছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক শবনম জাহান শিলা একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী এমপি।

 

আলোচনায় আছেন যুব মহিলা লীগ সভাপতি ডেইজী সরোয়ার ও সাধারণ সম্পাদক শারমীন সুলতানা লিলি। যুব মহিলা লীগের সাবেক দুই শীর্ষ নেত্রী নাজমা আক্তার ও অপু উকিল সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি ছিলেন। এছাড়া মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুব মহিলা লীগের আরও বেশ কিছু নেত্রী দলীয় মনোনয়ন চেয়ে পাননি।

তারা চেষ্টা করছেন সংরক্ষিত নারী আসনের জন্য। আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক শাম্মী আহমেদ দলের মনোনয়ন পেলেও দ্বৈত নাগরিকত্বের জটিলতার কারণে নির্বাচন করতে পারেননি। সংরক্ষিত নারী আসনের আলোচনায় তার নামও শোনা যাচ্ছে।

 

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের মধ্যে যারা মনোনয়নবঞ্চিত হয়েছিলেন এমন নেত্রীদের মধ্যে মুন্নুজান সুফিয়ানের নাম রয়েছে আলোচনায়।

আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচনে হেরে যাওয়া দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সানজিদা খানমও চাইছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি হতে। এছাড়া আওয়ামী লীগের দুর্দিনের ত্যাগী নেতাদের পরিবারের যোগ্য সদস্যদের অনেকের নামও আসছে সংরক্ষিত আসনের এমপি পদের আলোচনায়।

 

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপিদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে নাটোর-৪ আসনের প্রয়াত এমপি আব্দুল কুদ্দুসের মেয়ে যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী কুহেলী কুদ্দুস মুক্তি, সুলতানা কামালের ভাতিজি আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য নেহরিন মোস্তফা দিশি।

শহিদ পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শহিদ আলতাফ মাহমুদের মেয়ে শাওন মাহমুদ, শহিদুল্লাহ কায়সারের মেয়ে শমী কায়সার আছেন আলোচনায়।

 

এছাড়া অভিনেত্রী তারিন জাহান, অরুণা বিশ্বাস, তানভীন সুইটি, রোকেয়া প্রাচী, চিত্রনায়িকা অপু বিশ্বাস, নিপুণ আক্তারসহ চলচ্চিত্র অঙ্গনের আরও বেশ কিছু জনপ্রিয় ও পরিচিত মুখও আওয়ামী লীগের সংরক্ষিত নারী আসনের মনোনয়নের আলোচনায়।

এছাড়া সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য অভিনেত্রী তারানা হালিম, সাবেক সংরক্ষিত এবং সংসদীয় আসনের এমপি জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী মমতাজ, দলের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নির্বাচন করে হেরে যাওয়ার চিত্রনায়িকা মাহিয়া মাহিও রয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি হওয়ার দৌড়ে।

 

জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম যুগান্তরকে বলেন, প্রথমত দলের ত্যাগী ও যোগ্য নেতাকর্মীরা প্রাধান্য পায়। বিশেষ করে মহিলা আওয়ামী লীগ ও যুবলীগের সঙ্গে যারা কাজ করেন তারা থাকেন। তাদের ত্যাগ এবং সাংগঠনিক দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। অগ্নি-সন্ত্রাস এবং বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যা থাকেন।

শহিদ পরিবারের সদস্যরাও থাকেন। সমাজকর্মী বা এনজিও কর্মীসহ বিভিন্ন পেশার খ্যাতিমান যারা তারা থাকতে পারেন। তাদের যোগ্যতা, জনপ্রিয়তা ও গ্রহণযোগ্যতা বিবেচনায় নেওয়া হয়। সব কিছু বিবেচনায় নিয়েই সংরক্ষিত নারী আসনে দলের মনোনয়ন দেওয়া হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments