Friday, November 8, 2024
Homeস্বাস্থ্য ও চিকিৎসাঠান্ডাজনিত রোগে কাবু শিশু-বয়স্করা

ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু শিশু-বয়স্করা

 

 

 

স্বাস্থ্যসেবা প্রতিদিন:

২৪ ঘণ্টায় হাসপাতালে ভর্তি ৩১০১ জন * শিশুকে গরম কাপড় পরিধান ও বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ।

 

দেশে পৌষের শেষ এবং মাঘের শুরুতে শীতের তীব্রতা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও বয়স্করা ঠান্ডাজানিত রোগে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চার জেলায় মৃদু শৈত্যপ্রবাহ চলছে। এর সঙ্গে উত্তরের হিমেল হাওয়া ও ঘন কুয়াশায় সারা দেশে বইছে হাড় কাঁপানো কনকনে ঠান্ডা।

 

জনস্বাস্থ্যবিদরা বলছেন, শিশু ও বয়স্কদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনামূলক কম থাকায় তারা সহজে ঠান্ডাজনিত রোগে কাবু হয়ে পড়ছে। অনেকের শারীরিক অবস্থার দ্রুত অবনতি হওয়ায় হাসপাতালে ভর্তি করতে হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা ছাড়াও জেলা-উপজেলার একাধিক চিকিৎসক-নার্স, রোগী ও অভিভাবকের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুসারে, শুধু ১৩ জানুয়ারি সারা দেশে নিউমোনিয়া, ক্রনিক ব্রংকাইটিস, ডায়রিয়া ও শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণের মতো শীতকালীন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৩ হাজার ১০১ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা বিভাগে ৬৭৭, ময়মনসিংহে ২৪১, চট্টগ্রামে ৭৮৬, রাজশাহীতে ১৭৮, রংপুরে ২৫৫, খুলনায় ৪৮০, বরিশালে ২৭৬ এবং সিলেটে ২০৮ জন ভর্তি হয়েছেন। এ সময় একজনের মৃত্যু হয়েছে।

 

সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এক মাসে ঠান্ডাজনিত রোগে আড়াই লাখের বেশি মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়ায় ৩২ জন মারা গেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেশব্যাপী রোগীদের তথ্যের রেকর্ড থেকে জানা যায়, শীতকালীন অসুস্থতা হিসাবে শ্বাসতন্ত্রের রোগ ও ডায়রিয়া বড় আকারে দেখা দিয়েছে। ১৫ নভেম্বর থেকে ১৩ জানুয়ারি এ রোগে ২ লাখ ৩৩ হাজার ৩১৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। এর মধ্যে ৬১ হাজার ৯২৪ জন তীব্র শ্বাসতন্ত্রের সংক্রমণ এবং ১ লাখ ৭১ হাজার ৩৯৪ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন।

 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসংশ্লিষ্টরা আমাদের কে জানান, শিশু শীতকালীন ফ্লু ও আরএস ভাইরাসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। যেমন: সর্দি-কাশি, জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, ব্রংকিওলাইটিসে বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। অনেকে ইনফ্লুয়েঞ্জা, নিউমোনিয়া, রেসেপিরেটরি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন, অ্যাজমাজনিত পালমোনারি প্রবলেম, জ্বর ও কোল্ড ডায়রিয়া নিয়ে হাসপাতালে আসছে। শিশু ও বয়স্কদের প্রতি বাড়তি সতর্কতার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

ঠান্ডাজ্বরে আক্রান্ত হয়ে মানিকগঞ্জের মুন্নু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঁচদিন ভর্তি ছিল ১০ বছর বয়সি শিশু ফাহাদ। সেখানে তার ফুসফুসে পানি জমে অক্সিজেন লেভেল কমতে শুরু করে। সঙ্গে শ্বাসকষ্ট দেখা দেওয়ায় চিকিৎসকরা ‘পেডিয়াট্রিক ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট’ (পিআইসিইউ) সাপোর্টের প্রয়োজন বলে জানান। শিশুটির মামা আশরাফুল আকাশ বলেন, পরিস্থিতি ক্রমেই অবনতি হওয়ায় শনিবার শ্যামলীর বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটে এনেছি। কিন্তু পিআইসিইউ বেড ফাঁকা না থাকায় ভাগিনাকে তৃতীয় তলার ৩০৮নং বিছানায় ভর্তি রাখা হয়েছে। পিআইসিইউ খালি হলেই সেখানে নেওয়া হবে।

 

শিশু হাসপাতাল ও ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. জাহাঙ্গীর আলম আমাদের কে বলেন, শীতকালে স্বাভাবিকভাবেই ঠান্ডাজনিত মৌসুমি রোগব্যাধি বাড়ে। এ হাসপাতালেও রোগী আসছে। তবে সংখ্যা অস্বাভাবিকভাবে বাড়েনি। তিনি জানান, নভেম্বরে ঠান্ডাজনিত রোগ নিয়ে ৩৮৮, ডিসেম্বরে ৪২৫ এবং জানুয়ারির ১২ দিনে ১৭০ শিশু ভর্তি হয়েছে। বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে আসা রোগীর অভিভাবকরা বেশির ভাগই নিউমোনিয়া, ইনফ্লুয়েঞ্জা, সর্দি-কাশি, শাসকষ্টের কথা বলছেন। চিকিৎসকরা শারীরিক অবস্থা দেখে ভর্তি করছেন। বাকিদের চিকিৎসা পরামর্শ দিয়ে বাড়ি পাঠাচ্ছেন। কিছু কিছু রোগীর শারীরিক অবস্থা জটিল হওয়ায় পিআইসিইউতে রাখা হচ্ছে।

 

ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদ আমাদের কে বলেন, অন্যসব হাসপাতালের মতো এ হাসপাতালে শীতকালীন রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা এখন বেশি। ঢামেকের বহির্বিভাগ ও জরুরি বিভাগে আসা শিশুদের বেশির ভাগই জ্বর, ঠান্ডা, কাশি, নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস এবং কোল্ড ডায়রিয়ায় ভোগছে। অনেককে অবজারভেশনে রাখা হচ্ছে। জরুরি বিভাগে আসা রোগীদের পরিস্থিতি বুঝে ভর্তি এবং বহির্বিভাগের রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে বাড়িতে পাঠানো হচ্ছে।

 

অধ্যাপক ডা. ইফফাত আরা শামসাদের পরামর্শ-ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের ঘন ঘন স্তন্যপান করানো উচিত। আর বেশি বয়সি শিশুদের বুকের দুধ ছাড়াও মৌসুমি সবজি, ফল খাওয়ানো দরকার। তিনি আরও বলেন, ঠান্ডা-কাশি হলেই ফার্মেসি থেকে শিশুকে অ্যান্টিবায়োটিক খাওয়ানো যাবে না। পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. আবু মো. শফিকুল হাসান সিলেটের কাগজ কে বলেন, শীতের শুরু থেকে উত্তরবঙ্গের অন্যসব জেলার মতো পাবনা জেলা সদর হাসপাতালেও ঠান্ডাজনিত রোগী বেড়েছে।

কিছুদিন ধরে শীতজনিত রোগীর চাপ বেশি। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। শিশুর ক্ষেত্রে শ্বাসতন্ত্রের তীব্র সংক্রমণ (অ্যাকিউট রেসপিরেটরি ইনফেকশন) বেশি দেখা যাচ্ছে। অতিরিক্ত ঠান্ডায় স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগীও আসছে। হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটে ৭২টি শয্যার মধ্যে অর্ধেকের বেশি ঠান্ডাজনিত রোগী ভর্তি রয়েছে। যাদের বেশির ভাগের বয়স পঞ্চাশের ওপরে। অধ্যাপক ডা. আবু মো. শফিকুল হাসান আরও বলেন, ছোট-বড় সবাইকে সুস্থ রাখতে শীতের কাপড় পরতে হবে, মাথা ঢেকে রাখতে হবে।

শিশুর মাথায় ঠান্ডা লাগানো যাবে না এবং বাড়ির বাইরে শিশুদের নিয়ে অহেতুক ঘোরাঘুরি করা যাবে না। শিশুর পাঁজরের নিচের অংশ দেবে যাওয়া, জ্বর, শ্বাস নেওয়ার সময় শব্দ, বমি, নিউমোনিয়ার এসব লক্ষণের প্রতি সতর্ক থাকতে হবে। এসব লক্ষণ দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের কাছে নিতে হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments