Friday, November 8, 2024
Homeরাজনীতিআওয়ামীলীগ২ কোটি টাকার বিনিময়ে নমিনেশন পান রতন

২ কোটি টাকার বিনিময়ে নমিনেশন পান রতন

 

 

 

বিশেষ প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জ-১ আসনে টানা তিনবারের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন সাধারণ একজন ডিপ্লোমা প্রকৌশলী থেকে কীভাবে এমপি হয়ে আলাদিনের চেরাগ পেলেন, তা সামনে এনেছেন সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল হুদা মুকুট। তিনি বলেছেন, ধর্মপাশা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করতে চেয়েছিলেন রতন। এর আগেই ২০০৮ সালের নির্বাচনে দুই কোটি টাকার বিনিময়ে দলীয় মনোনয়ন এনেছিলেন তিনি।

 

গত বুধবার সন্ধ্যায় সুনামগঞ্জ-১ (তাহিরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশা ও মধ্যনগর) আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রনজিত চন্দ্র সরকারের সমর্থনে আয়োজিত এক নির্বাচনী সভায় এসব কথা বলেন নুরুল হুদা মুকুট। জামালগঞ্জ উপজেলার সাচনা বাজারে এই সমাবেশ হয়। এতে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী, সুনামগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নোমান বখ্‌ত পলিনসহ স্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

 

নুরুল হুদা মুকুট বলেন, ‘প্রথম এমপি ইলেকশনের মনোনয়ন পাওয়ার ১৫ দিন আগে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন আমার বাসায় গিয়েছিলেন। আমাকে সালাম করে বলেছিলেন, ভাই সাহেব, আমি তো উপজেলা ইলেকশন করব। উপজেলা চেয়ারম্যান হব। আপনি আমাকে ধর্মপাশা আওয়ামী লীগের একটা মেম্বারশিপ দেন। আমি তখন জেলা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি, মতিউর রহমান সাহেব ছিলেন প্রেসিডেন্ট। মেম্বারশিপ নেওয়ার জন্য আমার কাছ থেকে একটা প্যাডে দস্তখত নিয়ে যান।

এর পর তিনি মতিউর রহমান সাহেবের বাসায় যান, মতিউর রহমান সাহেব উনাকে (রতন) বাসা থেকে বের করে দেন। দুই দিন পর উনি এসে আমাকে বললেন, ভাই সাহেব, আপনি তো পেছনে পড়ে গেছেন। আমি দুই কোটি টাকার বিনিময়ে নমিনেশন নিয়ে এসেছি। কানাডার সিটিজেন উনার বন্ধুকে একটা গাড়ি উপহার দিয়ে নমিনেশন নিয়ে এসেছেন।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘ওই আসনে সে সময় জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ও সৈয়দ রফিকের মধ্যে কম্পিটিশন চলছিল নমিনেশনের জন্য। নেত্রী বিরক্ত হয়েছিলেন দুইজনের কম্পিটিশন দেখে।

তিনি সরোয়ার সাহেবকে বললেন, দেখো কাউকে পাওয়া যায় কিনা। সরোয়ার সাহেব বললেন, নেত্রী, আমরা ওই এলাকার সবচেয়ে যোগ্য একজন ইঞ্জিনিয়ারকে পেয়েছি। অথচ উনি একজন ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার।’

 

তিনি (রতন) আমাকে বললেন, আমি তো ওই এলাকার কোনো মানুষকে চিনি না। আপনি আমাকে পরিচয় করিয়ে দেন। আমি তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হোসেন খান ও সম্পাদক অমল করকে ডেকে পরিচয় করিয়ে দিই।

তারপর উনি বললেন, ‘ভাই সাহেব, আমার কাছে কোনো টাকা নেই। আপনি আমাকে টাকা দেন। এক মাস পর দিয়ে দেব। আমি দুই লাখ টাকা উনাকে হাওলাত দিলাম। তাহিরপুরে অনেক মানুষের কাছ থেকে এক লাখ, দুই লাখ, পাঁচ লাখ টাকা করে ধার করে নির্বাচন করেছেন রতন।’

 

নুরুল হুদা মুকুট বলেন, রতনের এখন ধর্মপাশায় তিনটি বাড়ি। ঢাকায় বিরাট অট্টালিকা আছে। ঢাকায় ফ্ল্যাট আছে এক স্ত্রীর নামে, আরেকটা আরেক স্ত্রীর নামে। কানাডাতে বড় স্ত্রীর নামে একটা বাড়ি আছে।

 

নুরুল হুদা মুকুট নেতাকর্মীর উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার পকেটের টাকা, আমার পকেটের টাকা নিয়ে উনি আপনাদের ডেভেলপমেন্ট না করে, উন্নয়ন না করে নিজের উন্নয়ন করেছেন; নিজের ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন এবং ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতনে পরিণত হয়েছেন। আজ ওনার টাকার কোনো অভাব নেই।’ তিনি অভিযোগ করেন, ‘আজ রতন বহু মানুষকে টাকা দিয়ে কিনছেন। জামালগঞ্জেও এই টাকা অনেকের পকেটে গেছে।’

 

জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘ধর্মনিরপেক্ষতা যারা মানে না, তারা আমার নেত্রীর দল করতে পারে না। জামালগঞ্জ আওয়ামী লীগের এসব নেতাকে দলে রাখা যাবে না। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে জীবনযাপন করছি। আমরা প্রগতিশীল রাজনীতি, জননেত্রী শেখ হাসিনার রাজনীতি করি।

আমাদের চলাফেরা দেখে বুঝতে পারবে না– কে হিন্দু, কে মুসলমান। আমাদের ইসলাম ধর্মে যার যার ধর্ম পালনের কথা বলা আছে। কারও ধর্মের ওপর আঘাত করবেন না। কারও ধর্মের ওপর আঘাত করা যাবে না– এটি শিখেছি আমরা।’

 

মোয়াজ্জেম হোসেন রতনের বাড়ি ধর্মপাশা উপজেলার নওধার গ্রামে। তিনি ২০০৮ সালে প্রথম এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। নুরুল হুদা মুকুটের বক্তব্য প্রসঙ্গে মন্তব্য জানতে চাইলে মোয়াজ্জেম হোসেন রতন বলেন, তিনি (মুকুট) মনগড়া কথা বলেছেন। কারও বানানো কথা উপস্থাপন করেছেন। এসব কথার কোনো সত্যতা নেই। আমি এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাই।

 

সুনামগঞ্জ-১ আসনে এবার আটজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আছেন তিনজন। রণজিত সরকার ও মোয়াজ্জেম হোসেন রতন ছাড়া স্বতন্ত্র অন্যজন হলেন জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য সেলিম আহমদ। এখানে তিন প্রার্থীই সমানতালে প্রচার চালাচ্ছেন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments