ইসলামী জীবন:
ঘণ্টা যায় দিন আসে। দিন যায় সপ্তাহ আসে, সপ্তাহ যায় মাস আসে। মাস যায়, কেটে যায় বছর। আমাদের সামনে উদয় হয় নতুন একটি বছর।
এভাবেই আমাদের জীবন থেকে বিদায় নিতে চলেছে আরেকটি বছর! শেষ হতে যাচ্ছে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়! পৃথিবীর ইতিহাসে যুক্ত হতে যাচ্ছে নানা ট্র্যাজেডি, জয়-পরাজয় এবং উত্থান-পতনের ঘটনাপ্রবাহ।
প্রায় প্রতিটি ঘরে, অফিসে এবং প্রতিষ্ঠানে শুরু হয়ে গেছে ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের তৎপরতা। নববর্ষপ্রেমীরা নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নানা আয়োজনের।
কিন্তু একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের লক্ষ্য তো শুধু দিন, মাস আর বছর পরম্পরায় জীবনাবসান নয়।
আমাদের কিছু করণীয় ও বর্জনের মধ্য দিয়ে নিজেকে অনন্ত-অসীম কালের জন্য প্রস্তুত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য। সে ক্ষেত্রে এই যে একটি বছর অতিক্রান্ত হতে চলল এই সময়ে একটিবার কি ভেবে দেখেছি যে একটি বছর মানে আমাদের জীবন থেকে তিন কোটি ১৫ লাখ ৩৬ হাজার সেকেন্ড, পাঁচ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ মিনিট, আট হাজার ৭৬০ ঘণ্টা, ৫৫ সপ্তাহ, ৩৬৫ দিন, ১২ মাস সময় হারিয়ে গেল।
এ সময়ে দোকানদার, ক্যাশিয়ার, ব্যাংকার এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যখন তাদের নিজ নিজ লাভ-লোকসানের হিসাব কষতে ব্যস্ত; তখন কি একজন মুসলিম হিসেবে আমরা আমাদের অনন্ত-অসীম কালের জীবনের পাথেয় সংগ্রহে প্রাপ্তি ও ব্যর্থতার হিসাব মিলিয়েছি? হেলাখেলা আর অনর্থক ক্রিয়াকর্মে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময়গুলো বিনষ্ট করার কারণে আমাদেরকে কি আল্লাহর আদালতে হিসাবের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে না? মহান আল্লাহ বলেন, ‘মহিমাময় সেই সত্তা, যার কুদরতি হাতে গোটা রাজত্ব। তিনি সব কিছুর ওপর পরিপূর্ণ ক্ষমতাবান।
তিনি মওত ও হায়াতকে সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য যে আমলে তোমাদের মধ্যে কে সর্বোত্তম। তিনি পরিপূর্ণ ক্ষমতার মালিক, অতি ক্ষমাশীল।’ (সুরা : মূলক, আয়াত : ১-২)
মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘বুদ্ধিমান ব্যক্তি সেই, যে নিজের জীবনের হিসাব রাখে এবং মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য আমল করে।’ (তিরমিজি : ২৪৫৯)
সুতরাং একজন মুসলিম হিসেবে আমাদের দায়িত্ব তো বছর সমাপনান্তে এক বছরের জীবন ডায়েরি খুলে বসা। ডায়েরিতে থাকা কৃত অপরাধগুলো চিহ্নিত করে কান্নায় বুক ভাসানো।
আর ভবিষ্যৎ জীবনকে পরিশুদ্ধ রাখার জন্য প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া।
কাজেই আসুন, বছরের সমাপ্তি লগ্নে এবং নতুন বছরের আগমনের পূর্বে আমরা প্রত্যেকেই বিগত জীবনে কৃত সমস্ত গুনাহের জন্য আল্লাহর দরবারে রোনাজারির মাধ্যমে খাঁটি দিলে তওবা করি। সেই সঙ্গে আগামী বছরে সব ধরনের গোনাহ বর্জনের পাশাপাশি আল্লাহর সন্তুষ্টি মোতাবেক জীবন পরিচালনার জন্য দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ হই।