রামকৃষ্ণ তালুকদার বিশেষ প্রতিনিধিঃ
হবিগঞ্জ-১ (নবীগঞ্জ- বাহুবল) আসনে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফশীল ঘোষণার পর থেকেই আলোচনার শীর্ষে রয়েছে এ আসনটি। আলোচনা- সমালোচনা ও নানান নাটকীয়তার পর শেষ পর্যন্ত এ আসনে জমে উঠেছে প্রচার- প্রচারণা। প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। আওয়ামীলীগের সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ঈগল মার্কা নিয়ে স্বতন্ত্র পদপ্রার্থী আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী।
তার সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, জোটের প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য এম.এ. মুনিম চৌধুরী বাবু লাঙ্গল মার্কা নিয়ে নির্বাচন করছেন। এ আসনটিতে নৌকা প্রতীক পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগ নেতা ডা. মুশফিক হুসেন চৌধুরী। কিন্তু অবশেষে শরিকদের এ আসনটি আওয়ামীলীগ দিয়ে দেয়। তবে, সমঝোতায় আসনটি পেলেও নানা কারণে স্বস্তিতে নেই জাতীয় পার্টি।
আওয়ামীলীগ আসনটি ছাড়লেও ভোটের মাঠে রয়েছেন আরেক জনপ্রিয় প্রার্থী কেয়া চৌধুরী। এছাড়া নানা কারণে জাতীয় পার্টির বর্তমান অবস্থা একে বারে নড়বড়ে। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ ও জাতীয় পার্টিতেও রয়েছে ব্যাপক দলীয় কোন্দল। কয়েক গ্রুপে বিভক্ত স্থানীয় নেতাকর্মীরা। এদিকে আনুষ্ঠাকিভাবে জাতীয় পার্টির রওশন পন্থীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার ঘোষনা দিয়ে মাঠে-ঘাটে প্রচারণা শুরু করেছেন। সবমিলিয়ে বেশ বেকায়দায়ই রয়েছে জাতীয় পার্টি। নির্বাচনে কঠিন প্রতিদ্বন্ধিতার মুখে পড়তে যাচ্ছেন জাতীয় পার্টির সাবেক এই সংসদ সদস্য।
স্বতন্ত্র প্রার্থী কেয়া চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডেন্ট মানিক চৌধুরীর সন্তান হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ সমর্থক গোষ্ঠীর কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তায় রয়েছেন তিনি। সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের স্বার্থে সক্রিয়ভাবে কাজ করেছেন। নবীগঞ্জ- বাহুবলে তার বড় একটি সমর্থকগোষ্ঠী রয়েছে। সাধারণ জনগণের কাছে রয়েছে কেয়া চৌধুরীর ব্যাপক জনপ্রিয়তা। সাধারণ ভোটারদের মুখে মুখে কেয়া চৌধুরীর নাম। হাট, বাজার সহ নানা মহলে তাকে নিয়ে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ। তিনিও তফসিল ঘোষণার পরপরই ভোটারদের মন জয় করতে নবীগঞ্জ- বাহুবল আসনের বিভিন্ন ইউনিয়ন, হাট- বাজারে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত গণ সংযোগ ও মত বিনিময় সভা করছেন।
ভোটাররা বলছেন, এই দুই প্রার্থীকে ঘীরেই এ আসনে বইছে নির্বাচনী ভোটের আমেজ। বিভিন্ন বাজারের চা- স্টলে ভোটারদের মধ্যে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষন। নির্বাচনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে প্রার্থীরা তাদের নিজেদের ভোটের সংখ্যা ভারী করে তুলছেন। ইতিমধ্যে নবীগঞ্জ ও বাহুবল দুটি উপজেলাতেই প্রধান সড়ক, হাট বাজার সহ চায়ের দোকান ছেয়ে গেছে পোস্টার ও ব্যানারে। পাশাপাশি প্রতিদিনই কেয়া চৌধুরী ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। নিজের জয় নিশ্চিত করতে ভোটারদের দিচ্ছেন নানা প্রতিশ্রুতি। নির্বাচনকে ঘিরে প্রার্থীদের মধ্যে চলছে তীব্র প্রতিযোগীতা। কেয়া চৌধুরীর সমর্থকরা জানান, তাদের প্রার্থী সংরক্ষিত আসনের এমপি হয়েও এলাকার অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। সরাসরি ভোটে নির্বাচিত হলে এ আসনের রূপরেখা বদলে দিতে পারবেন তিনি। এসব কারণে দলমত নির্বিশেষে তাকে ভোট দিবেন সচেতন ভোটাররা। তারা আরো জানান, দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার নির্দেশমতে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। তাই দলীয় লোকজনও তাকে ভোট দিয়ে বিজয়ী করবেন। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি কেয়ার নির্বাচনে বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করবে বলে তাদের বিশ্বাস।
এ ব্যাপারে লাঙ্গলের প্রার্থীর সমর্থকরা জানান, এর আগে তাদের প্রার্থী সংসদ সদস্য থাকাকালীন সময়ে এলাকার উন্নয়নে কাজ করেছেন। জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা তার জন্য কাজ করছেন। আওয়ামীলীগে স্থানীয়ভাবে মতবিরোধ থাকলেও এ নির্বাচনে তারা এক হয়ে লাঙ্গলের বিজয়ের জন্য কাজ করছেন। তাই বিপুল ভোটে তাদের প্রার্থী বিজয়ী হবে বলে তারা আশাবাদী। অপরদিকে, এ আসনে এই দুইজনের পাশাপাশি নির্বাচনী মাঠে রয়েছেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী গাজী মোহাম্মদ শাহেদ (ট্রাক) মার্কা, ইসলামি ঐক্যজোট বাংলাদেশের মোস্তাক আহমেদ ফারহানী, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের মো: নুরুল হক (গামছা) মার্কা। ১টি পৌরসভা ও ২০টি ইউনিয়নের মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ৩১ হাজার ১শ’ ৮৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ২ লাখ ১৭ হাজার ৯শ’ ৪২ জন, নারী ভোটার ২ লাখ ১৩ হাজার ২শ’ ৪১ জন ও হিজড়া ২ জন। নবীগঞ্জে ১৩টি ইউনিয়ন ও একটি পৌর সভায় মোট ১১৬টি কেন্দ্র ও বাহুবল উপজেলায় ৭টি ইউনিয়নে ৬১ টি কেন্দ্র রয়েছে। আগামী ৭ই জানুয়ারি নির্বাচন, কে হাসবে বিজয়ের হাসি।