Friday, September 12, 2025
Homeইসলামজান্নাতি হুরের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য কেমন হবে

জান্নাতি হুরের সৌন্দর্য ও বৈশিষ্ট্য কেমন হবে

ইসলামী জীবন:

জান্নাতে মানুষ পৃথিবীর মতো স্ত্রী ও পরিবার লাভ করবে। আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ হিসেবে পুরুষরা ‘হুর’ লাভ করবে। হুর স্ত্রীদের গঠন ও সৌন্দর্য হবে অতুলনীয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তারা পরিধান করবে মিহি ও পুরু রেশমি বস্ত্র এবং মুখোমুখি হয়ে বসবে।

 

 

অনুরূপ আমি তাদেরকে সঙ্গিনী দান করব আয়তলোচনা হুর।’

(সুরা : দুখান, আয়াত : ৫৩-৫৪)

জান্নাতি হুরদের বৈশিস্ট্য

কোরআন ও হাদিসে জান্নাতি হুরদের নানা গুণ ও বৈশিষ্ট্যের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। নিম্নে তা তুলে ধরা হলো :

১. অনিন্দ্য সৌন্দর্যের অধিকারিণী : জান্নাতি হুররা অনিন্দ্য সৌন্দর্যের অধিকারী হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘সেই উদ্যানগুলোতে আছে সুশীলা, সুন্দরীরা।

 

 

’ (সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৭০)

২. অনাঘ্রাতা : হুররা হবে সুরক্ষিত কুমারী। তাদের আগে কোনো জিন বা মানুষ স্পর্শ করেনি। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা হুর, তাঁবুতে সুরক্ষিতা।…তাদের এর আগে কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি।

(সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৭২ ও ৭৪)

৩. স্বামীর সেবায় নিবেদিত : জান্নাতি হুরদের কাজ হবে স্বামীর মনোরঞ্জন করা। তারা আর কোনো কাজে লিপ্ত হবে না। নিম্নোক্ত আয়াত থেকে যার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। আল্লাহ বলেন, ‘তারা হেলান দিয়ে বসবে সবুজ তাকিয়ায় ও সুন্দর গালিচার ওপরে।’

(সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৭৬)

৪. সুরভিত দেহ : জান্নাতি নারীরা সুরভিত হবে।

তাদের শরীর থেকে ঘ্রাণ ছড়াবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জান্নাতি কোনো নারী যদি দুনিয়াবাসীদের প্রতি উঁকি দেয় তাহলে আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী সব কিছু আলোকিত এবং সুরভিত হয়ে যাবে। আর তার মাথার ওড়না দুনিয়া ও তার সব কিছু চেয়ে উত্তম। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৯৬)

৫. আনত নয়না : জান্নাতের হুর ও স্ত্রীরা হবে আনত নয়না। তারা স্বামীর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেসবের মধ্যে আছে বহু আনত নয়না, যাদের আগে কোনো মানুষ বা জিন স্পর্শ করেনি।’

(সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৫৬)

৬. প্রোজ্জ্বল : জান্নাতি নারীদের দেহ হবে প্রোজ্জ্বল। তাদের দেহ থেকে মূল্যবান রত্নের মতো দ্যুতি ছড়াতে থাকবে। আল্লাহ বলেন, ‘তারা যেন পদ্মরাগ ও প্রবাল।’

(সুরা : আর রহমান, আয়াত : ৫৮)

৭. সোহাগিনি : জান্নাতি হুররা হবে সোহাগিনি। আল্লাহ বলেন, ‘তাদের আমি সৃষ্টি করেছি বিশেষরূপে—তাদের করেছি কুমারী, সোহাগিনি ও সমবয়স্কা। ডান দিকের লোকদের জন্য।’

(সুরা : ওয়াকিহয়া, আয়াত : ৩৫-৩৮)

৮. প্রগাঢ় বন্ধুত্বের অধিকারিণী : উল্লিখিত আয়াতে ব্যবহৃত ‘সমবয়স্কা’ শব্দের ব্যাখ্যায় কোরআন গবেষকরা বলেন, সমবয়স্কা শব্দ দ্বারা মূলত গভীর বন্ধুত্বের দিকে ইঙ্গিত করে। কেননা সমবয়স্ক মানুষের ভেতরই বন্ধুত্ব গভীর হয়।

৯. স্বচ্ছ দেহের অধিকারিণী : অধিক সৌন্দর্যের কারণে জান্নাতি নারী ও হুরদের দেহে স্বচ্ছতা থাকবে। ফলে তাদের শরীরের হাড়ের মগজও দেখা যাবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তাদের প্রত্যেকের দুজন করে স্ত্রী থাকবে। সৌন্দর্যের কারণে গোশত ভেদ করে পায়ের নলার মজ্জা দেখা যাবে। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩২৪৬)

১০. পূতঃপবিত্র : জান্নাতি নারীরা হবে পূতঃপবিত্র। সব ধরনের নোংরা ও ঘৃণ্য বিষয় থেকে মুক্ত। আল্লাহ বলেন, ‘আর সেখানে তারা স্থায়ী হবে, তাদের জন্য পবিত্র সঙ্গীরা এবং আল্লাহর কাছ থেকে সন্তুষ্টি রয়েছে।’

(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৫)

১১. মুক্তাসদৃশ : জান্নাতি হুররা হবে মুক্তসদৃশ সুন্দর, গোছাল ও সুরক্ষিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তাদের জন্য থাকবে আয়তলোচনা হুর, সুরক্ষিত মুক্তাসদৃশ। তাদের কাজের পুরস্কারস্বরূপ।’

(সুরা: ওয়াকিয়া, আয়াত : ২২-২৪)

১২. সুমিষ্ট কণ্ঠের অধিকারিণী : হুররা সুললিত কণ্ঠের অধিকারী হবে। এমন সুমিষ্ট কণ্ঠ মানুষ কখনো শ্রবণ করেনি। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, জান্নাতে আয়াতলোচনা হুরদের সমবেত হওয়ার একটি জায়গা রয়েছে। তারা সেখানে এমন সুরেলা আওয়াজে গান গাইবে, যেমন আওয়াজ কোনো সৃষ্টি এর আগে কখনো শোনেনি।

(সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫৬৪)

১৩. চিরযৌবনা : জান্নাতি স্ত্রীরা চিরযৌবনা হবে। তারা কখনো বৃদ্ধা হবে না এবং তাদের সৌন্দর্যও নষ্ট হবে না। মহানবী (সা.) বলেন, তারা (হুর) এই বলে গান গাইবে, আমরা তো চিরজীবী, আমাদের ধ্বংস নেই। আমরা তো আনন্দ-উল্লাসের জন্যই, দুঃখ-কষ্ট নেই আমাদের। আমরা চির সন্তুষ্ট, আমরা কখনো অসন্তুষ্ট হব না। তাদের কতই না সৌভাগ্য, যাদের জন্য আমরা এবং আমাদের জন্য যারা। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫৬৪)

১৪. আনন্দময়ী : জান্নাতি স্ত্রীরা হবে আনন্দ উদযাপনের সঙ্গী। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন জান্নাতিরা আনন্দে মগ্ন থাকবে, তারা ও তাদের স্ত্রীরা সুশীতল ছায়ায় সুসজ্জিত আসনে হেলান দিয়ে বসবে।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৫৫-৫৬)

১৫. সন্তান দানকারিণী : জান্নাতি হুর ও স্ত্রীরাও সন্তান দান করবে। তবে তারা গর্ভধারণের কষ্ট থেকে মুক্ত থাকবে। মহানবী (সা.) বলেন, কোনো মুমিন লোক যদি জান্নাতে সন্তানের আকাঙ্ক্ষা করে তাহলে সঙ্গে সঙ্গে তার স্ত্রী গর্ভধারণ করবে ও সন্তান প্রসব করবে এবং সন্তানটি হবে বয়সে যুবক। তার ইচ্ছা অনুযায়ী মুহূর্তের মধ্যেই এসব হয়ে যাবে। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৫৫৬৩)

আল্লাহ সবাইকে জান্নাতি হওয়ার তাওফিক দান করুন। আমিন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments