বিশেষ প্রতিনিধি:
আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নির্বাচন উৎসবমুখর ও সুষ্ঠু হবে। গণতান্ত্রিক পরিবেশকে সুসংহত করতে চাই আমরা। সব প্রার্থী ভোটারদের কাছে যাবেন। তাদের মনের কথা বোঝার চেষ্টা করবেন। বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দল নয়, ওরা সন্ত্রাসী। ওরা যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে চলছে। মনে রাখবেন, দেশকে যখন আমরা এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি তখন তারা (বিএনপি-জামায়াত) সন্ত্রাস শুরু করেছে।
এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করতে না পারলে, দেশের উন্নয়নের ধারা বজায় রাখা যাবে না। নির্বাচন সুষ্ঠু হলে, মানুষ নিজের পছন্দমতো ভোট দিতে পারলেই গণতান্ত্রিক ধারা বজায় থাকবে। দেশটা এগিয়ে যাবে।
শনিবার রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ছয়টি জেলা-কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙামাটি এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলায় আয়োজিত নির্বাচনি জনসভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে প্রদত্ত বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয় হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, নৌকা মার্কায় ভোট চাই। সবাই নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে আবারও জনগণের সেবা করার সুযোগ দেবেন।
ভোট জনগণের সাংবিধানিক অধিকার উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এই নির্বাচন আমরা এবার উন্মুক্ত করে দিয়েছি। কারণ আমরা চাই জনগণ অংশগ্রহণ করুক, শান্তিমতো ভোট দিক। তিনি বলেন, সবাই জনগণের কাছে যাবে, জনগণ যাকে ভোট দেবে সে-ই নির্বাচিত হবে। আমি চাই নির্বাচনটা শান্তিপূর্ণ হোক। জনগণের যে ভোটের অধিকার সেটা তারা সঠিকভাবে প্রয়োগ করতে পারুক। গণতন্ত্রকে আমরা সুরক্ষিত করতে চাই। কেননা দেশে গণতান্ত্রিক পরিবেশ থাকলে, গণতান্ত্রিক বিধি-ব্যবস্থা থাকলে দেশে উন্নতি হয়।
বিএনপি-জামায়াতের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আজকে বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, নির্বাচন ঠেকানোর নামে ২০১৩-১৪ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছিল, আবার তারা তাদের সেই ভয়ংকর রূপ নিয়ে (মাঠে) নেমেছে। মাত্র কয়েকদিন আগে রেলে আগুন দিল, ফিশপ্লেট খুলে ফেলল, আগুনে পুড়িয়ে মানুষ মারল। বাসে আগুন দিচ্ছে, ঘুমিয়ে থাকা হেলপার মারা গেল। ঠিক এভাবে তারা আবারও ভয়ংকর অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে।
প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণের ভাগ্য নিয়ে আর আমরা কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। ওই সন্ত্রাসী বিএনপি আর যুদ্ধাপরাধী জামায়াতের হাতে এ দেশ নিরাপদ নয়। কারণ এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না। কাজেই এদের হাত থেকে দেশ ও জাতিকে রক্ষা করে দেশের উন্নয়ন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানাচ্ছি।
লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সমালোচনা করে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, তারেক রহমানের হুকুমে দেশে আগুন সন্ত্রাস হচ্ছে। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকার এলে মুচলেকা দিয়ে আর কখনো রাজনীতি করবে না বলে নাকে খত দিয়ে বিদেশে পাড়ি দেয়। এখন বিদেশ থেকেও হুকুম করছে পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ মারার। বিএনপির যেসব নেতাকর্মী আগুন দিয়ে মানুষ পোড়ায়, পাপের ভাগীদার তারাই হবে, তারেক রহমানের কিচ্ছু হবে না। ও তো ওখানে জুয়া খেলে ভালোই আছে আর হুকুম দিচ্ছে।
আপনারা নাচেন, কার জন্য নাচেন? পালানোর পর জীবনে কোনোদিন সে (তারেক) তো দেশে আসেনি। মা মরে মরে, তাও তো দেখতে আসে না। সাহস থাকলে একবার দেশে এসে দেখুক। এ দেশের মানুষ এ হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নেবে।
তিনি বলেন, ২০০৯-২৩ এই ১৫ বছরে বাংলাদেশ এখন বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। সব সূচকেই দেশ এগিয়ে গেছে অভূতপূর্বভাবে। উন্নয়নের ধারাটা বজায় রাখতে হবে। বিএনপি অতীতের মতোই নির্বাচন ঠেকানোর নামে ভয়ংকরভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করে চলেছে। মনুষ্যত্ববোধ থাকলে বিএনপি এসব করতে পারত না। বিএনপি ক্ষমতায় থাকতে খালেদা জিয়ার ছেলে (তারেক রহমান) হাওয়া ভবন খুলে দেশকে দুর্নীতির আখড়া, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, বোমা হামলা, আমাদের বহু নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে।
শান্তিপূর্ণ ক্ষমতা হস্তান্তর প্রসঙ্গে টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে শান্তিপূর্ণভাবে একবারই ক্ষমতা হস্তান্তর হয়েছিল। ২০০১ সালে আমি শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করেছি। বিগত বছরগুলোতে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে। আজকে দেশ বদলে গেছে, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি। উন্নয়নশীল দেশ হিসাবে যেন বাংলাদেশকে আরও সমৃদ্ধ করতে পারি সেভাবেই আমাদের দেশকে গড়ে তুলতে হবে।
সূচনা বক্তব্যের পর প্রধানমন্ত্রী কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, নেত্রকোনা, রাঙামাটি এবং বরগুনা জেলার বামনা ও পাথরঘাটা উপজেলা প্রান্তে অনুষ্ঠিত জনসভায় যুক্ত হয়ে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন। এই ছয়টি জেলার নির্বাচনি জনসভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীরা ছাড়াও জেলা, উপজেলা, থানা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীসহ বিপুলসংখ্যক মানুষ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী এসব জেলার মানুষের কাছে নৌকা মার্কায় ভোট চাইলে উপস্থিত হাজার হাজার মানুষ দুই হাত তুলে তার প্রতি অকুণ্ঠ সমর্থন জানান।
নেত্রকোনা জেলা স্টেডিয়ামে আয়োজিত সভায় উপস্থিত ছিলেন নেত্রকোনা-২ আসনের প্রার্থী আশরাফ আলী খান খসরু, নেত্রকোনা-৫ আসনের আহমেদ হোসেন, নেত্রকোনা-৩ আসনের প্রার্থী অসীম কুমার উকিল, নেত্রকোনা-৪ আসনের প্রার্থী সাজ্জাদুল হাসান ও নেত্রকোনা-১ আসনের প্রার্থী মোস্তাক আহমেদ রুহিসহ জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এছাড়াও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আমিরুল ইসলামসহ উপজেলা, ইউনিয়ন ও পৌরসভার দলীয় নেতাকর্মীরা সভায় যোগ দেন।
রাঙামাটি শহরের শহিদ আবদুস শুক্কুর মাঠে আয়োজিত সমাবেশে পার্বত্য রাঙামাটি আসনের প্রার্থী দীপংকর তালুকদার, রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী, সহসভাপতি চিংকিউ রোয়াজা, হাবিবুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক মো. মুছা মাতব্বর, জাতীয় পরিষদের সদস্য অভয় প্রকাশ চাকমাসহ দলটির জেলার শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কুষ্টিয়া পাবলিক লাইব্রেরি মাঠের জনসভায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও কুষ্টিয়া-৩ আসনে দলীয় প্রার্থী মাহবুবউল আলম হানিফ, কুষ্টিয়া-২ আসনে জাসদের প্রার্থী ও দলের সভাপতি হাসানুল হক ইনু, কুষ্টিয়া-১ আসনে নৌকার প্রার্থী আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশা, কুষ্টিয়া-৪ আসনের প্রার্থী সেলিম আলতাফ জর্জ, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ সম্পাদক আজগর আলী প্রমুখ।
কুষ্টিয়ায় যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী লালনের গান শুনতে চাইলে ছাত্রলীগ নেতা বাধন খালি গলায় গান পরিবেশন করেন। প্রধানমন্ত্রী মুগ্ধ হয়ে তার গান শোনেন। পরে তিনি জাসদ সভাপতি হাসানুল হক ইনুর উদ্দেশে রসিকতা করে বলেন, ‘এখানে ইনু ভাইও আছে দেখছি। ইনু ভাইও আমাদের নৌকায় উঠেছেন, খেয়াল রাখবেন তিনি যেন দোল খেয়ে পড়ে না যান।’
সাতক্ষীরা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে আয়োজিত জনসভায় উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার তিনটি সংসদীয় আসনের আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী সাতক্ষীরা-১ আসনের ফিরোজ আহম্মেদ স্বপন, সাতক্ষীরা-৩ আসনের অধ্যাপক আ ফ ম রুহুল হক, সাতক্ষীরা-৪ আসনের আতাউল হক দোলন। এছাড়া জেলা আওয়ামী লীগ, উপজেলা আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের জেলা ঝিনাইদহে নির্বাচনি জনসভায় ঝিনাইদহ-১ আসনের আব্দুল হাই, ঝিনাইদহ-২ আসনের তাহজীব আলম সিদ্দিকী, ঝিনাইদহ-৩ আসনের আনোয়ারুল আজীম আনার এবং ঝিনাইদহ-৪ আসনের ব্রিগেডিয়ার সালাহ উদ্দিন মিয়াজী (অব.) উপস্থিত ছিলেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টু, সংরক্ষিত নারী আসনের এমপি খালেদা খানম, ঝিনাইদহ-২ আসনের সাবেক এমপি শফিকুল ইসলাম অপু, ঝিনাইদহ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাসের শাহরিয়ার জাহিদী মহুল, জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান কনক কান্তি দাস, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি তৈয়ব আলী জোয়ারদার, সাংগঠনিক সম্পাদক অশোক ধর প্রমুখ।