Sunday, November 24, 2024
Homeজাতীয়আজ বাঙালির বিজয়ের দিন, বিজয় দিবস

আজ বাঙালির বিজয়ের দিন, বিজয় দিবস

 

নিজস্ব প্রতিবেদক:

 

বাঙালির সাহসিকতা, বীরত্ব, অশ্রু ও আত্মত্যাগে মহিমান্বিত অর্জন মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের দিন আজ। একই সঙ্গে এই দিন বাঙালির আত্মপরিচয় লাভের দিন। আজ ১৬ ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস।

 

পাকিস্তানি হানাদারদের সঙ্গে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ শেষে ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঙালি অর্জন করে তার শ্রেষ্ঠতম শব্দ—বিজয়।

 

ওই দিন ঢাকার ঐতিহাসিক রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানের সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) আত্মসমপর্ণ করে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে মাথা নিচু করে চলে যেতে বাধ্য হয় পাকিস্তানের সেনাবাহিনী। বিশ্বের মানচিত্রে যুক্ত হয় লাল-সবুজ রঙের উজ্জ্বল এক চিত্রকলা—স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ। এই লাল-সবুজ পতাকার সঙ্গে বাংলাদেশ অর্জন করে হাজার বছরের কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা, পবিত্র সংবিধান, নিজস্ব মানচিত্র ও সারা জীবন গর্ব করার জন্য অনন্য সাধারণ রসদ।

বিজয়ের ৫২ বছর পূর্তি আজ।

 

 

সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়া ও অপশক্তিকে প্রতিহত করার জন্য নতুন করে শপথ গ্রহণের দিন। দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

ব্রিটিশদের কাছ থেকে মুক্তিলাভের পর এই অঞ্চলের (তত্কালীন পূর্ব বাংলা) মানুষের মনে প্রথম স্বাধীনতার সচেতন বীজ বপিত হয় ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে। এরপর ’৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা, ’৬৯-এর এগারো দফা ও গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বাঙালি স্বাধীনতার জন্য প্রস্তুত হয়ে ওঠে।

 

১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানিরা ক্ষমতা হস্তান্তর না করে নানা টালবাহানা ও ষড়যন্ত্রের জাল বুনতে শুরু করে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক এই ঘোষণার মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা অর্জনের চূড়ান্ত লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ওঠে বাঙালি জাতি। এর কিছুদিন পরই ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঘুমন্ত ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর ইতিহাসের ঘৃণ্যতম ও বর্বরতম এক কাপুরুষোচিত গণহত্যা চালায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। বঙ্গবন্ধু গ্রেপ্তার হন ধানমণ্ডির বাসভবন থেকে। গ্রেপ্তারের আগেই আনুষ্ঠানিকভাবে তিনি স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান।

 

দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত, আড়াই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় স্বাধীনতা। আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় পাকিস্তানি সেনাবাহিনী। পৃথিবীর বুকে অভ্যুদয় ঘটে বাংলাদেশ নামে এক নতুন রাষ্ট্রের। আকাশের সীমানায় পতপত করে উড়তে থাকে বাঙালির প্রাণের লাল-সবুজের পতাকা।

 

বিজয় দিবস উদযাপন করতে আজ সকাল থেকেই সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করবে সর্বস্তরের মানুষ। রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, অলিগলি মুখর হবে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ ও দেশাত্মবোধক গানের সুরে। বাড়ির ছাদে, অফিস-আদালতে, গাড়িতে, রিকশায় সর্বত্র উড়বে লাল-সবুজ পতাকা। লাল-সবুজের আলোকসজ্জায় সাজবে সরকারি-বেসরকারি ভবনসহ গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো। দিনটি সরকারি ছুটির দিন।

 

রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর বাণী

মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বাণীতে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন বলেন, ‘লাখো শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে পরমত সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে।’

 

বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘স্বাধীনতার পর গত ৫২ বছরে আমাদের যা কিছু অর্জন তা জাতির পিতা এবং আওয়ামী লীগের হাত ধরেই হয়েছে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, আমাদের এই উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশে পরিণত হবে।’

 

কর্মসূচি

জাতীয় পর্যায়ে আজ নানা কর্মসূচি হাতে নেওয়া হয়েছে। প্রত্যুষে ঢাকায় ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে দিবসটির সূচনা হবে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এর পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রীর নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

 

পরে একে একে ঢাকায় অবস্থানরত বিদেশি কূটনীতিকরা, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণ পুস্পস্তবক অর্পণ করে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন।

 

দিবসের তাত্পর্য তুলে ধরে আজ সংবাদপত্রগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করছে। এ ছাড়া ইলেকট্রনিক মিডিয়াগুলো মাসব্যাপী মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান প্রচার করছে। দিবসটি উপলক্ষে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোতে দেশের শান্তি, সমৃদ্ধি ও অগ্রগতি কামনা করে বিশেষ দোয়া ও প্রার্থনার আয়োজন করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments