Friday, November 8, 2024
Homeরাজনীতিআওয়ামীলীগশেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠনের পথে

শেখ হাসিনা পুনরায় সরকার গঠনের পথে

বিশেষ প্রতিনিধি:

শেখ হাসিনা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চার মেয়াদে দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে টানা তিনবার তিনি নির্বাচিত হয়েছেন। কোনো সন্দেহ নেই যে, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের পর পঞ্চমবারের মতো প্রধানমন্ত্রীর অফিসে বসবেন শেখ হাসিনা। দ্য ইকোনমিস্টের এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, সরকারের দাবি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হবে। দ্বাদশ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে ২৯টি দল।

 

তবে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দল এবং ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে চ্যালেঞ্জ জানাতে একমাত্র সক্ষম বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ভোটবর্জন করছে। যদিও তারা ভোটে অংশগ্রহণ করতে চাইলে তাদের দলের খুব কম লোকই সেটা করতে পারতেন। কারণ গত ছয় সপ্তাহে বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। নভেম্বরের শেষ থেকে নিরাপত্তা হেফাজতে থাকা পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। যারা এ পর্যন্ত গ্রেফতার এড়িয়ে গেছেন, তাদের অনেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন।

 

 

এই প্রহসন সেই ধাঁধার দিকে ইঙ্গিত করে যে, ‘শেখ হাসিনা বিশ্বের সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদী নারী প্রধানমন্ত্রীর প্রতিনিধিত্ব করবেন’। প্রায় ১৫ বছরের ক্ষমতায় তিনি বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশটির জীবনযাত্রার মানের সবচেয়ে বড় উন্নতির সহায়ক হয়েছেন। তিনি চীন ও ভারতের প্রতিদ্বন্দ্বী স্বার্থ নিয়েও দক্ষতার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। বাংলাদেশের ১৭০ মিলিয়ন জনগণ এখন আমেরিকার, যারা দেশের স্থিতিশীলতায় দীর্ঘস্থায়ী আগ্রহ দেখিয়েছেন, তাদের চাপের মধ্যে পড়ে স্যান্ডউইচের মতো অবস্থা।

 

নিবন্ধে শেখ হাসিনা সম্পর্কে বলা হয়েছে, তিনি সংবাদমাধ্যমকে ভয় দেখিয়েছেন পুলিশ, আদালত ও বিচার বিভাগকে হস্তগত করেছেন। তিনি তার পিতাকে ঘিরে ব্যক্তিত্বের একটি ‘কাল্ট দাঁড় করেছেন, যিনি ১৯৭৫ সালে একটি অভ্যুত্থানে খুন হয়েছিলেন এবং যার মুখ এখন রাজধানী ঢাকার সর্বত্র শোভা পাচ্ছে। তিনি বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়াকে কোণঠাসা করেছেন, যিনি ২০১৮ সাল থেকে গৃহবন্দি। ২০১৪ ও ২০১৮ সালে বাংলাদেশের দুটি নির্বাচন ব্যাপকভাবে ক্ষমতাসীন দলের পক্ষে গেছে। আসছে নির্বাচন বিএনপিকে দুর্বল করে দিতে পারে।

 

পর্যবেক্ষকরা বলছেন, একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের ছাপ তৈরি করতে আওয়ামী লীগ তার দলের সদস্যদের, তাদের পরিচিতদের এবং বিরোধী দল থেকে দলত্যাগকারীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে উৎসাহিত করেছে।

 

গত ২৮ অক্টোবর এক সমাবেশের পর দলের সমর্থক ও পুলিশের মধ্যে রাস্তায় সহিংসতার কারণে বিএনপির সদস্যদের গণগ্রেফতারের ঘটনা ঘটে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, এতে কমপক্ষে ১৬ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে দুই পুলিশ কর্মকর্তা রয়েছেন এবং হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। সরকারের দাবি— বিএনপি সহিংসতা শুরু করেছে। কিন্তু দলটি বলছে উল্টো। আইনজীবী ও বিএনপি নেতা মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেছেন, তারা আমাদের ২০ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছেন। আমরা গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। এই অবৈধ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অর্থ নির্বাচনকে বৈধতা দেওয়া।

 

গ্রেফতার নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে খুনের চেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছে। অনেককে নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে। যেখানে পুলিশ তাদের সন্ধান পায়নি, সেখানে তাদের আত্মীয়দের নিয়ে গেছে।

 

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, গ্রেফতারকারী অফিসারদের মাঝে আওয়ামী লীগের কর্মীরাও ছিলেন। ক্র্যাকডাউন বিএনপিকে রাজপথ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। নভেম্বরে দলের পক্ষ থেকে ঢাকার বাইরের সড়ক অবরোধে রাজধানী আংশিক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথম দিকে বেশিরভাগ পণ্যের ডেলিভারি আবার শুরু হয়। ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় আওয়ামী লীগ বিরোধী একটি বিক্ষোভে যেখানে সাধারণত হাজার হাজার মানুষের উপস্থিত হবার কথা সেখানে ছিলেন মাত্র কয়েক শত মানুষ।

 

আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতা বলেছেন, বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে ভালো ফল করত। তবে শেখ হাসিনা কোনো মূল্যে সেটি হতে দেবেন না। বাংলাদেশের প্রধান আঞ্চলিক অংশীদার ভারত এই নির্বাচনকে ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ বলে অভিহিত করেছে। আমেরিকা বলেছে, তারা এমন কর্মকর্তাদের ভিসা প্রত্যাখ্যান করবে, যাদের তারা গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে ক্ষুণ্ন করছে বলে মনে করে। তবু ভারতের মতো আমেরিকারও উদ্বেগের কারণ একটাই— শেখ হাসিনা যাতে চীনের দিকে ঝুঁকে না পড়েন। তাই অনেক ক্ষেত্রেই তার অপব্যবহারকে উপেক্ষা করা হয়। যেমন এবারের নির্বাচনে ইইউ নির্বাচনি পর্যবেক্ষকদের একটি পূর্ণ দল পাঠাতে অস্বীকার করেছে।

 

শেখ হাসিনা দেশের অনেক জায়গায় জনপ্রিয়। একটি আমেরিকান পোলস্টার, ‘ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের’ একটি সাম্প্রতিক সমীক্ষা, তাকে শতকরা ৭০ ভাগ রেটিং দিয়েছে। তবে শহরগুলোতে বিশেষত, একটি কঠিন অর্থনীতি সরকারের প্রতি অসন্তোষ বাড়িয়েছে। ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের পরিপ্রেক্ষিতে জ্বালানি ও দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বাংলাদেশকে জানুয়ারিতে আইএমএফ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ নিতে বাধ্য করে। বৈদেশিক রিজার্ভ কম, ব্যাংকিং ব্যবস্থা চাপের মধ্যে এবং টাকা, দেশের মুদ্রা চাপের মধ্যে পড়ে জনগণের সমস্যা বাড়িয়ে তুলেছে। সরকারি মুদ্রাস্ফীতির হার, মাত্র ১০ শতাংশের নিচে, সম্ভবত এটি একটি অবমূল্যায়ন। সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হলো— পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা সাম্প্রতিক মাসিক ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা বৃদ্ধিতে অসন্তুষ্ট, যা জীবনযাত্রার বর্ধিত ব্যয়ের চেয়ে কম বলে মনে করেন তারা।

 

তার পরও প্রবৃদ্ধি মোটামুটি শক্তিশালী, গত আর্থিক বছরে মাত্র ৬ শতাংশের নিচে। ১৩ ডিসেম্বর আইএমএফ তার বেল-আউট প্রোগ্রামের প্রতি সরকারের প্রতিশ্রুতির প্রশংসা করেছে এবং এটিকে বিস্তারিতভাবে ট্র্যাকে রয়েছে বলে অভিহিত করেছে। শেখ হাসিনার ক্ষমতায় থাকার চেষ্টাও তাই দৃঢ় হচ্ছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments