Friday, November 8, 2024
Homeইসলামওয়াজ মাহফিলে আলোচনার বিষয়বস্তু কেমন হওয়া উচিত,আর হচ্ছে কেমন

ওয়াজ মাহফিলে আলোচনার বিষয়বস্তু কেমন হওয়া উচিত,আর হচ্ছে কেমন

 

ইসলামী জীবন:

ইয়াছিন আলী খান,

 

ওয়াজ অর্থ উপদেশ, নসিহত, ইসলামের জ্ঞানগর্ভ আলোচনা। যিনি ওয়াজ করেন তাঁকে ওয়ায়েজ (বক্তা) বলে। পবিত্র কোরআনে ওয়াজ শব্দের উল্লেখ আছে। সুরা নুরের ১৭ নম্বর আয়াতে আছে ‘ইয়াইজু কুমুল্লাহ…’ অর্থাৎ আল্লাহ তোমাদের উপদেশ দিচ্ছেন…।

 

 

পবিত্র কোরআন নিজেই একটি ‘ওয়াজ’। প্রিয় নবী (সা.) বলেন, যে কোরআন থেকে কথা বলে সে সত্য বলে, যে কোরআন মেনে চলে সে তার প্রতিদান পাবে, যে কোরআন মতো বিচার করে সে ন্যায়বিচারই করে। যে কোরআনের দিকে ডাকে, সে সত্য পথেই ডাকে। (তিরমিজি)

ওয়াজের মাধ্যমে ধর্মের অপব্যাখ্যা, অশিক্ষা, অপশিক্ষা, অর্ধশিক্ষা ও ধর্মান্ধতার অবসান সম্ভব।

 

 

ওয়াজ মাহফিল কোনো বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান নয়। ওয়াজ মাহফিল হলো সর্বসাধারণের জন্য আয়োজিত ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠান। ওয়াজে বিতর্কিত, ব্যাখ্যাসাপেক্ষ ও জটিল বিষয়ের অবতারণা না করে সহজ-সরল আঙ্গিকে কথা বলা জরুরি; যেন বেনামাজি নামাজি হয়, সুদখোদ সুদ ছেড়ে দেয়, বেপর্দা পর্দার তাগিদ অনুভব করে। মুমিন যেন মুত্তাকি হয়ে ওঠে।

তাকওয়ার গুণে গুণান্বিতকে মুত্তাকি বলে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় করো, যেমন ভয় করা উচিত এবং মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১০২)

এই আয়াতে বর্ণিত ‘আল্লাহকে যথাসম্ভব ভয় করো’ এবং ‘মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ কোরো না’ বাণীদ্বয় হোক ওয়াজের অন্তর্নিহিত শিক্ষা। ইমাম গাজ্জালি (রহ.) রচিত ‘আইয়্যুহাল ওয়ালাদ’ গ্রন্থে আছে, ‘ওয়াজকারীদের ওয়াজ দ্বারা উদ্দেশ্য যেন হয় মানুষকে দুনিয়া থেকে আখিরাতের প্রতি, গোনাহ থেকে নেকির প্রতি, লোভ থেকে পরিতুষ্টির প্রতি আহ্বান করা। এরই ভিত্তিতে শ্রোতাদের পরকালীনমুখী ও দুনিয়াবিমুখ করে গড়ে তোলার প্রয়াস করা, ইবাদত-বন্দেগি ও তাকওয়ার দীক্ষা দান করা, সর্বোপরি আত্মিক অবস্থার পরিবর্তনের সাধনা করা।

 

এটাই হলো প্রকৃত ওয়াজ। আর যে বক্তা এরূপ উদ্দেশ্য ছাড়া ওয়াজ করবে তার ওয়াজ মানুষের ওপর বোঝা হয়ে দাঁড়াবে। দ্বিনদার মুসলমানরা যেন এ রকম বক্তা ও ওয়াজ সম্পূর্ণরূপে পরিহার করেন।’ (মাজালিসুল আবরার)

বক্তার সঠিক জ্ঞান ও যোগ্যতা থাকা জরুরি। বিশেষত তাকওয়া, ইখলাস, সবর, শোকর, আদল, ইহসান, সিদক এবং বক্তার ব্যক্তিজীবনে প্রচারিত বিষয়ের প্রতিফলন থাকা। মহান আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যা কোরো না, তা কেন অন্যকে করতে বলো?’ (সুরা : সাফ, আয়াত : ২)

 

তিনি আরো বলেন, ‌‘তুমি তোমার প্রজ্ঞা, কৌশল ও উত্তম উপদেশের মাধ্যমে (মানুষকে) তোমার প্রভুর দিকে আহ্বান করো।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ১২৫)

 

আবারও বলা হলো, ‘তার কথার চেয়ে কার কথা উত্তম হতে পারে যে মানুষকে আল্লাহর দিকে ডাকে এবং নিজে সৎকাজ করে আর বলে আমি মুসলমান।’ (সুরা : হা-মিম সিজদা, আয়াত : ৩৩)

 

শ্রোতার জ্ঞান-বুদ্ধির প্রতি খেয়াল রেখে বক্তাকে কথা বলতে হবে। প্রিয় নবী (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি অপাত্রে জ্ঞান রাখে সে যেন শুকরের গলায় মুক্তার হার পড়ায়।’ (ইবনু মাজাহ)

অন্যদিকে বক্তাদের জন্য নিম্নোক্ত গুণাবলি অত্যাবশ্যক :

 

(ক) ইলম, কেননা ইলমহীন ব্যক্তি সঠিক ও বিশুদ্ধ বয়ান করতে অক্ষম।

 

(খ) আল্লাহর সন্তুষ্ট ও তাঁর দ্বিন প্রচারের উদ্দেশ্য (এখন বক্তারা টাকা যে বেশি দেবে তার বাড়িতেই ওয়াজ করবে, টাকা কম দিলে ওয়াজ করবে না, এমন ব্যক্তির উদ্দেশ্য কী তা সহজেই অনুমেয়)।

 

(গ) যা বয়ান করবেন তা আমল করা।

 

(ঘ) বক্তা শ্রোতাদের ওপর দয়ার্দ্র ও বিনম্র হয়ে কথা বলা।

 

(ঙ) বক্তা ধৈর্যশীল ও সহনশীল হওয়া। (ফাতওয়ায়ে আলমগিরি)

 

ওয়াজ মাহফিলের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হতে হবে : তাওহিদ, রিসালাত, ইবাদত (আমল ও আখলাক) ও আখিরাত। আসলে হিদায়াতের মালিক মহান আল্লাহ এবং তাঁরই নির্দেশ : ‘আপনি উপদেশ দিন। কেননা, উপদেশ বিশ্বাসীদের উপকারে আসে।’ (সুরা : আজ-জারিয়াত, আয়াত : ৫৫।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments