বিশেষ প্রতিনিধি:
রাজনৈতিকভাবে ও ভোটের রাজনীতিতে আলোচিত সুনামগঞ্জ-২ (দিরাই-শাল্লা) আসন। এ আসনে প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের স্ত্রী বর্তমান এমপি ড. জয়া সেনগুপ্তা ও বর্তমান আইজিপির ভাই চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। জয়া সেনগুপ্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে এবং চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ (আল আমিন চৌধুরী) আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। এদের মধ্যে শিক্ষা ও সম্পদে এগিয়ে রয়েছেন জয়া সেনগুপ্তা।
নির্বাচন কমিশনে দাখিল করা হলফনামায় দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা যায়, স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. জয়া সেনগুপ্তার ১১ কোটি ৪৮ লাখ ৮০ হাজার ২২৫ টাকার সম্পদ রয়েছে। তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা পিএইচডি।
২০১৮ সালের নির্বাচনী হলফনামায় ড. জয়া সেনগুপ্তা ১০ কোটি ৯৬ লাখ ৭০ হাজার ২২৫ টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেন। সম্পদের মধ্যে রয়েছে এফডিআর, শেয়ার, সঞ্চয় পত্র ব্যাংক আমানত। ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক আয় ১২ লাখ ৯ হাজার ৭২ টাকা, অন্যান্য ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজ নামে ৫ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৯১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৯.৩০ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরণের সঞ্চয় পত্রে বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ ৪০ হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের নামে রঙিন টিভি ২০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৩০ হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের আসবাবপত্র ২০ হাজার টাকা।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১০ একর কৃষিজমি, যার মূল্য দেখিয়েছেন ৬ লাখ টাকা, অকৃষিজমি ৮৫ একর ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, দালান ৯০০ এসএফটি (দিরাই) মূল্য ৭.৫২ কোটি, ঢাকায় ও দিরাইয়ে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট ২টি। মূল্য দেখিয়েছেন ৫৪ লাখ ৫ হাজার ১৮৪ টাকা।
২০২৩ সালে সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা পেশা উল্লেখ করেছেন সমাজসেবা। শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত থেকে বাৎসরিক আয় ১২ লাখ ৯ হাজার ৭২ টাকা, অন্যান্য ৬ লাখ ৬০ হাজার টাকা। অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নগদ টাকা নিজ নামে ৫ লাখ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৯১ লাখ ৪৫ হাজার ৯৬৯.৩০ টাকা, পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয় বা স্থায়ী আমানতে বিনিয়োগ ১ কোটি ৪৬ লাখ টাকা, বাস, ট্রাক, মোটরগাড়ি, মোটরসাইকেল ৫১ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ১০ ভরি স্বর্ণ ৪০ হাজার টাকা, নির্ভরশীলদের নামে রঙ্গিন টিভি ২০ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৩০ হাজার টাকা। স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে ১০ একর কৃষিজমি ৬ লাখ টাকা, অকৃষিজমি ৮৫ একর ২২ লাখ ৪০ হাজার টাকা, দালান ৯০০ এসএফটি (দিরাই) মূল্য ৭.৫২ কোটি, ঢাকায় ও দিরাইয়ে বাড়ি/অ্যাপার্টমেন্ট ২টি ৫৪ লাখ ৫ হাজার ১৮৪ টাকা।
এদিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ ২০১৪ সালে শাল্লা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় সম্পদের পরিমাণ উল্লেখ করেছিলেন ১০ লাখ ৮ হাজার টাকা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় ৫৪ লাখ ৩৮ হাজার ৭১৭ টাকার সম্পদের উল্লেখ করেছেন। উপজেলা নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামা থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিল করা হলফনামায় ৫ গুণ বেশি সম্পদ বেড়েছে তার।
আওয়ামী লীগের প্রার্থী চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদের শিক্ষাগত যোগ্যতা এমএসএস (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়)। পেশা কৃষি ও ব্যবসা। কৃষি খাত থেকে তিনি বাৎসরিক ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা, ব্যবসা থেকে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা, অন্যান্য বাবদ ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা আয় করেন।
অস্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে নিজ নামে নগদ ৪ লাখ ৭ হাজার ৫৪৬ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৯ হাজার ১৭১ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রী ৩৪ হাজার টাকা, আসবাবপত্র ৩৪ হাজার টাকা, অন্যান্য ২৫ লাখ ২০ হাজার ২০০ টাকা, স্ত্রী/নিজ নামে স্বর্ণালংকার ৩ লাখ টাকার।
স্থাবর সম্পদের মধ্যে রয়েছে কৃষিজমি ৩.৩০ একর, মূল্য ৫৫ হাজার টাকা, যৌথ মালিকানায় ৪৮.০৫ একর, অকৃষি জমি ৩৪.৩৩ শতক মূল্য ৯ লাখ ৯৮ হাজার ৮০০ টাকা, নির্মাণাধীন টিনশেড, ১টি বাড়ি, যৌথ মালিকানায় ১টি বাড়ি। এছাড়াও কৃষি ব্যাংক শাল্লা শাখায় তার দায় (লোন) আছে ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা।
বিশিষ্ট পার্লামেন্টারিয়ান ও আলোচিত রাজনীতিবিদ সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত ৬ বার এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আসনটি সেনবাবুর আসন নামে পরিচিত। ২০১৭ সালে সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের মৃত্যুর পর স্ত্রী ড. জয়া সেনগুপ্তা উপনির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়া সেনগুপ্তা দ্বিতীয়বারের মতো এ আসনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন বঞ্চিত হন।
এ আসনে বর্তমান আইজিপির ছোট ভাই, শাল্লা উপজেলা পরিষদের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান এবং শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাকালীন সভাপতি প্রয়াত আব্দুল মান্নান চৌধুরীর ছেলে চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদকে (আল আমিন চৌধুরী) আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। দিরাই-শাল্লার রাজনীতির সার্বিক পারফরম্যান্স বিবেচনায় তাকে দলীয় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়।