Friday, November 8, 2024
Homeসিলেট বিভাগবীরশ্রেষ্ট এবং বীর উওম খেতাব দেওয়া হলে ৫২ বছর পরে বাস্তবায়ন হয়নি...

বীরশ্রেষ্ট এবং বীর উওম খেতাব দেওয়া হলে ৫২ বছর পরে বাস্তবায়ন হয়নি মহান এক মুক্তিযোদ্ধার

 

রামকৃষ্ণ তালুকদার বিশেষ প্রতিনিধি হবিগঞ্জঃ

মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ই বেতার বার্তায় জগৎজ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হলেও ৫২ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।বীরউত্তম খেতাব দেয়া হলেও তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি আজও। কেউ কথা রাখেনি’ —তেত্রিশ বছর কেটে যাওয়ার পর এমন আক্ষেপ করেছিলেন কবি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়।

জগৎজ্যোতি দাসের জন্য সে আক্ষেপ একান্ন বছরের। ৫২ বছরের প্রতীক্ষার পরও জগৎজ্যোতি দাসকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব ফিরিয়ে দেওয়া হয়নি। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়ই বেতার বার্তায় জগৎজ্যোতিকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেওয়া হলেও ৫২ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

দেশের জন্য প্রাণ উৎসর্গ করেছিলেন অসীম সাহসী বীর সৈনিক জগৎজ্যোতি দাস। প্রাণ দিয়ে প্রাণ এনে দিয়েছিলেন তিনি মুক্তির সংগ্রামে। ইথারে তখন ভেসে এসেছিল- স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ যদি সর্বোচ্চ মরণোত্তর খেতাব পান, তবে তাঁর প্রথম দাবিদার জগৎজ্যোতি দাস।

অসীম সাহসিকতা আর অনন্য বীরত্বের জন্য অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকারের (মুজিবনগর সরকার) পক্ষ থেকেই এ ঘোষণা দেওয়া হয়। জগৎজ্যোতি তখন সব চাওয়া-পাওয়া, সব হিসাব-নিকাশের ঊর্ধ্বে চলে গিয়েছিলেন। তিনি কোনো প্রতিদানের আশায় প্রাণ দেননি। ইথারের ঘোষণায় তাঁর কিছু যাওয়ার-আসার ছিল না। তবে হয়তো তাঁর অবিনশ্বর প্রাণ শান্তি পেয়েছিল এই ভেবে যে, মা তাঁকে চরণ থেকে বুকে তুলে নিয়েছেন।

জগৎজ্যোতি মানে পৃথিবীর আলো। তাই বোধ হয় সবার জন্য আলো জ্বেলে দেওয়ার দায় নিজের কাঁধেই তুলে নিয়েছিলেন জগৎজ্যোতি দাস। একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় দেশমাতৃকার জন্য আগুন হয়ে জ্বলেছিলেন হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের এ খ্যাপা তরুণ। তাঁর অসীম তেজের সামনে বারবার পরাজিত হচ্ছিল পাকিস্তানি বাহিনী। জগৎজ্যোতির নেতৃত্বাধীন দাস পার্টি মানেই পাক হানাদারদের রাতের ঘুম হারাম। তাঁর মুখোমুখি হওয়া মানে পাক বাহিনীর আরও একটি ব্যর্থতার গল্প। মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত জগৎজ্যোতি ছিলেন উত্তর-পূর্ব রণাঙ্গনে ভরসার একমাত্র কেন্দ্রস্থল।

১৯৭১ সালের ১৬ নভেম্বর হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বদলপুরের কৈয়াগোপীর মাঠের মধ্যে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসরদের ফাঁদে পড়ে সম্মুখযুদ্ধে প্রাণ হারান একাত্তরের এ বীর সেনানী। রাজাকাররা তাঁর নিথর দেহটি ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে বিবস্ত্র করে ভাসিয়ে দেয় কুশিয়ারা বর্তমান কালনী নদীর জলে। জগৎজ্যোতির আত্মত্যাগের সংবাদটি সে সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, অল ইন্ডিয়া রেডিওসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রচার ও প্রকাশ হয়। তাঁর অসীম সাহসিকতার প্রতি সম্মান জানিয়ে অস্থায়ী বাংলাদেশ সরকার তাঁকে মরণোত্তর সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় খেতাব প্রদানের ঘোষণা দেয়। এ ঘোষণা স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও অল ইন্ডিয়া রেডিওতেও প্রচার হয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত সে খেতাব আজও মেলেনি জগৎজ্যোতির।

অবশ্য পরবর্তীতে সান্ত্বনা হিসেবে ১৯৭২ সালে বীরবিক্রম খেতাব দেওয়া হয় জগৎজ্যোতিকে। ঘোষণা দিয়েও কেন জগৎজ্যোতিকে মরণোত্তর সর্বোচ্চ খেতাব ‘বীরশ্রেষ্ঠ’ সম্মানে ভূষিত করা হলো না সে প্রশ্ন আজও অমীমাংসিত। এ নিয়ে ক্ষোভ আছে অনেক মুক্তিযোদ্ধারও।

জগৎজ্যোতি আমাদের জন্য আলো জ্বেলে চলে গেছেন। কোনো খেতাবেরই তার আর প্রয়োজন নেই। কোনো খেতাবের লোভে তিনি যুদ্ধও করেননি। দেশ-মাটি-মায়ের সম্মান বাঁচাতেই তিনি অস্ত্র হাতে তুলেছিলেন। মায়ের জন্য সোনালি ভোর আনতে গিয়ে নিজেই লীন হয়েছেন। কিন্তু আমরা তার সম্মান রাখতে পারিনি। জগৎজ্যোতিকে প্রতিশ্রুত সম্মান কেন দেওয়া হলো না? ৫২ বছরেও এ প্রশ্নের উত্তর মেলেনি।

বীর মুক্তিযোদ্ধা প্রেমানন্দ চক্রবর্তী ফেইজবুক পোস্টে কমেন্টের মধ্যে এ আক্ষেপ প্রকাশ করে লিখেছেন
বীর বিক্রম শহীদ জগৎজ্যোতি দাস -এর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
১৯৭৩ সালে মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বভূষণ খেতাব – বীর শ্রেষ্ট,বীর উত্তম,বীর বিক্রম ও বীর প্রতীক প্রদান করে সরকার গেজেট প্রকাশ করে। অথচ তাঁর শহীদ হওয়ার ৩য় দিনে বাংলাদেশ বেতার, আকাশ বাণী ও অলইন্ডিয়া রেডিও তে খবর প্রচার কালে তৎকালীন সরকারের বরাত দিয়ে ঘোষণা করা হয়ে যে তাঁকে সর্বোচ্চ খেতাবে ভূষিত করা হবে। কিন্তু ‘৭৩ সালে গেজেট অনুযায়ী অসম সাহসী বীর মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি দাসকে তা না দিয়ে বীর বিক্রম খেতাব প্রদান করা হয়।এতে তাঁর সঙ্গী মুক্তিযোদ্ধা সহ অনেকের মনেই প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। আরও জানা যায় যে,হবিগঞ্জ শহীদ স্মৃতিসৌধেও তাঁর নাম অন্তর্ভূক্ত হয়নি। ইতিমধ্যে তাঁর বীরত্ব নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক প্রবন্ধ-নিবন্ধ, যুদ্ধের জীবন নিয়ে কয়েক জন লেখকের কয়েকটি গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট মহলে সাড়া জাগাতে সমর্থ হয়।জানা যায় অবশেষে মু.বি.মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে ২০১০ -২০১৪ সালের কোনও এক সময়ে জেলা স্মৃতিসৌধে শহীদ জগৎজ্যোতি দাস-এর নাম অন্তর্ভূক্তি সহ বীরত্বভূষণ খেতাব এক ধাপ বাড়িয়ে বীর উত্তম করা হয়।বীর উত্তম খেতাব দেয়া হলেও তা গেজেট আকারে প্রকাশ হয়নি আজও।
সেজন্য তাঁর খেতাব নিয়ে উদ্ভূত দ্বিধা-দ্বন্ধ নিরসনের বিহীত ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্ত্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments