আল্লাহ তায়ালার ইবাদতের জন্যই মানুষের সৃষ্টি। ইবাদতগুজার বান্দাকেই তিনি সবচেয়ে বেশি পছন্দ করেন, ভালোবাসেন। বান্দাদের আমলময় জীবনই আল্লাহর কামনা। তাই বান্দা যখন আমল করে, তাকে স্মরণ করে, তখন তিনি সবচেয়ে বেশি খুশি হন।
ভোরবেলা ফজরের পর কিছু আমলে আল্লাহ পাক বান্দাকে সারা দিন সুরক্ষিত রাখার প্রতিশ্রুতি দেন। পুরো সময় কল্যাণকর ও বরকতময় করেন। আমলগুলো সংক্ষেপে আলোচিত হলো।
১. সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার পড়া
হজরত শাদ্দাদ বিন আওস রা. নবী সা. থেকে বর্ণনা করেন, সাইয়্যেদুল ইস্তিগফার (শ্রেষ্ঠ ইস্তিগফার) হলো- اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ ، اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَفْوَ وَالْعَافِيَةَ فِي دِينِي وَدُنْيَايَ وَأَهْلِي وَمَالِي ، اللَّهُمَّ اسْتُرْ عَوْرَاتِي وَآمِنْ رَوْعَاتِي ، اللَّهُمَّ احْفَظْنِي مِنْ بَيْنِ يَدَيَّ ، وَمِنْ خَلْفِي ، وَعَنْ يَمِينِي ، وَعَنْ شِمَالِي ، وَمِنْ فَوْقِي ، وَأَعُوذُ بِعَظَمَتِكَ أَنْ أُغْتَالَ مِنْ تَحْتِي ‘আল্লা-হুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলা-হা ইল্লা আনতা খলাক্বতানি ওয়া আনা আব্দুকা, ওয়া আনা আলা আহদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাস্তাত্বাতু। আউযু বিকা মিন শাররি মা সানাতু, আবুউ লাকা বিনিমাতিকা আলাইয়্যা, ওয়া আবুউ বিযাম্বী। ফাগফির লি, ফাইন্নাহু লা ইয়াগফিরুয যুনুবা ইল্লা আনতা।’
অর্থ: হে আল্লাহ! আপনি আমার রব্ব, আপনি ছাড়া সত্য কোনো উপাস্য নেই। আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমি আপনার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমতো আপনার (তাওহিদের) অঙ্গীকার ও (জান্নাতের) প্রতিশ্রুতির ওপর রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্ট থেকে আপনার আশ্রয় চাই। আপনি আমাকে যে নিয়ামত দিয়েছেন আমি তা স্বীকার করছি এবং আমার অপরাধও স্বীকার করছি। অতএব, আপনি আমাকে মাফ করে দিন। নিশ্চয়ই আপনি ছাড়া পাপরাশি ক্ষমা করার কেউ নেই।
তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি দিনের বেলায় বিশ্বাসের সঙ্গে এ বাক্যগুলো বলবে, সেদিন সন্ধ্যার আগে যদি সে মারা যায়, তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতের অধিবাসী হবে। আর যে ব্যক্তি রাতের বেলায় এ বাক্যগুলো বলবে এবং সকাল হওয়ার আগে মারা যাবে, সে ব্যক্তিও জান্নাতের অধিবাসী হবে।’ (বুখারি, হাদিস: ৬৩০৬)
আরো পড়ুন: মাইগ্রেনের ব্যথা নিরাময়ে কার্যকরী ৫ আমল
ফজরের নামাজের পরের আমল
২. সুবহানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহি পাঠ
হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ফজরের নামাজের পর একশবার ও সন্ধ্যায় একশবার ‘সুবহা-নাল্লা-হি ওয়া বিহামদিহি’ পড়বে, কিয়ামতের দিন তার চেয়ে উৎকৃষ্ট কিছু কেউ নিয়ে আসতে পারবে না। তবে সে ব্যক্তি ছাড়া- যে তার মতো বলবে বা তার চেয়ে বেশি আমল করবে।’ (মুসলিম, হাদিস ২৬৯২)
৩. সুরা ইখলাস, ফালাক ও নাস পাঠ
হজরত আবদুল্লাহ বিন খুবাইব রা. থেকে বর্ণিত, নবী সা. তাকে বলেছেন, ‘তুমি যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে কিংবা সকালে উপনীত হবে তখন তুমি ‘সুরা ইখলাস, সুরা ফালাক ও সুরা নাস ৩ বার পড়বে। এটি তোমাকে সব কিছু থেকে রক্ষা করবে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস: ৩৫৭৫, আবু দাউদ, হাদিস: ৫০৮২) সকালের আমলগুলো ফজরের পর পড়ে নেয়া উত্তম।
৪. ছোট্ট একটি দোয়া পাঠ
হজরত উসমান বিন আফ্ফান (রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, প্রতিদিন সকাল সন্ধ্যায় এই দোয়াটি তিনবার পড়লে আর কোনো ধরণের ক্ষতি হবে এমনটি হতে পারে না। (আবু দাউদ:৫০৯০,তিরমিজি: ৩৩৮৮,ইবনে মাজাহ:৩৮৬৯)
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِى لاَ يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَىْءٌ فِى الأَرْضِ وَلاَ فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ বাংলা উচ্চারণ: বিসমিল্লাহিল্লাজি লা ইয়া দুররু মাসমিহি শাইয়ূন ফিল আরদি ওয়ালা ফিসসামায়ি ওয়া হুয়াস সামিউল আলিম।
অর্থ: আমি আমার দিন বা রাতের সূচনা করছি ওই আল্লাহর নামে যার নামের সঙ্গে আসমান জমিনের কোনো কিছু কোনো ধরণের ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বাজ্ঞ। (সুনানে আবু দাউদ: হাদিস, ৫০৮৮)
৫. সুরা তাওবার ১২৯ নম্বর আয়াত পাঠ
হজরত আবুদ দারদা রা. বর্ণনা করেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে ও সন্ধ্যায় ৭ বার নিম্নোক্ত দোয়া পড়বেন আল্লাহ তায়ালা বিপদাপদ ওদুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন। حَسْبِيَ اللَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ ، عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَهُوَ رَبُّ الْعَرْشِ الْعَظِيمِ উচ্চারণ: হাসবিয়া আল্লাহু লা-ইলাহা ইল্লা হুয়া আলাইহি তাওয়াক্কালতু ওয়া হুয়া রাব্বুল আরশিল আযিম। অর্থ: আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট। তিনি ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই। তার উপরই আমি তাওয়াক্কুল করি। তিনি মহান আরশের অধিপতি) আল্লাহ্ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫০৮১)।