ইসলাম প্রতিদিনঃ
উম্মতের ওপর রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর অসংখ্য দয়ার মধ্যে একটি হলো, তিনি উম্মতকে আল্লাহ তাআলার কাছে চাওয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। আমাদের ছোট-বড় সব প্রয়োজন পূরণে আল্লাহর কাছে কিভাবে আমরা আবেদন-নিবেদন পেশ করব তা শিখিয়েছেন। অন্যথায় আমরা হয়তো স্বীয় করণীয় কাজও ঠিক করতে পারতাম না। রাসুলুল্লাহ (সা.) পদে পদে আমাদের দোয়া করার ওপর উদ্বুদ্ধ করেছেন এবং প্রতিটি কাজে স্বতন্ত্র দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন।
দোয়ার মাধ্যমে উদাসীনতা দূর হয়
দোয়ার একটি বিশেষ উপকার হলো, এর মাধ্যমে গাফিলতি ও উদাসীনতা দূর হয়। কেননা গাফিলতি তথা আল্লাহকে ভুলে থাকার কারণেই গুনাহ হয়ে থাকে। এ জন্যই আল্লাহ তাআলা তাঁর বেশি বেশি স্মরণ ও জিকিরের নির্দেশ দিয়েছেন। কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘হে মুমিনরা, তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করো।
আর সকাল-সন্ধ্যায় তাঁর পবিত্রতা ঘোষণা করো।’ (সুরা : আহজাব, আয়াত : ৪২)
হাদিস শরিফে এসেছে, জনৈক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ইসলামের বিধানাবলি আমার কাছে বেশি মনে হচ্ছে, আপনি আমাকে এমন একটি জিনিস বলেন, যা নিয়ে আমি পড়ে থাকব। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘তোমার জবান যেন আল্লাহর জিকিরে সিক্ত থাকে। (তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৫)
প্রশ্ন হতে পারে যে আমরা তো দুনিয়ায় বিভিন্ন কাজে লিপ্ত থাকি, তখন তো জিকির করা সম্ভব হয় না।
এর জবাব হলো, এ জন্যই আল্লাহর রাসুল (সা.) আমাদের সব কাজের আগে-পরে ও মাঝে বিভিন্ন মাসনুন (হাদিসে বর্ণিত) দোয়া শিক্ষা দিয়েছেন। দুনিয়াবি কাজের মধ্যে কিভাবে সর্বদা আল্লাহকে স্মরণ রাখা যায় তার সর্বোত্তম নমুনা হলো সুন্নাহ বর্ণিত দোয়া। শুধু সেগুলো গুরুত্বসহ আমল করতে পারলেও সর্বদা জিকিরকারীদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে।
দোয়া আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্কের মাধ্যম
দোয়ার অন্যতম মহান উদ্দেশ্য হলো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি করা। মূলত রাসুলুল্লাহ (সা.) চেয়েছেন যেন সর্বদা আল্লাহ তাআলার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক থাকে।
দোয়াগুলো আল্লাহ তাআলার সঙ্গে সম্পর্কের একটি মাধ্যম। কোরআনে কারিমে এসেছে, ‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাকো, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব।’ (সুরা : গাফির, আয়াত : ৬০)
অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘আর যখন আমার বান্দারা তোমাকে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করবে, আমি তো নিশ্চয়ই নিকটবর্তী। আমি আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিই, যখন সে আমাকে ডাকে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৮৬)
চাওয়ার দ্বারা আল্লাহ তাআলা সন্তুষ্ট হন
মানুষের সাধারণ নিয়ম হলো চাইলে সন্তুষ্ট হয় না, বরং দিলে সন্তুষ্ট। কিন্তু দয়ালু আল্লাহ তাআলা তাঁর কাছে চাইলে খুশি হন, না চাইলে নারাজ হন। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর কাছে না চায়, তার ওপর তিনি অসন্তুষ্ট হন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৩৩৭৩)
এমনকি ছোট-বড় সব কিছুতেই আল্লাহ তাঁর কাছে চাওয়া পছন্দ করেন। আয়েশা (রা.) বলেন, তোমরা আল্লাহর কাছে সব কিছু চাও, এমনকি জুতার ফিতার প্রয়োজন হলেও, কেননা আল্লাহ তাআলা ব্যবস্থা না করলে তোমার জন্য তা সহজে ব্যবস্থা হবে না। (মুসনাদে আবি ইয়ালা, হাদিস : ৪৫৬০)
দোয়ার পদ্ধতি আল্লাহ তাআলা নিজেই শিখিয়েছেন
মানুষ যখন কোনো অফিসে কাজ নিয়ে যায়, ওই কাজের জন্য আবেদন করতে হয়। তবে দরখাস্ত লেখা অনেকের জন্যই কঠিন। এ জন্য আবেদন ফরমের ফরম্যাট বানানো থাকে, তা শুধু পূরণ করে জমা দিলেই হয়। তেমনি মাসনুন দোয়াগুলো হলো স্বীয় বান্দাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রদত্ত আবেদন ফরমের ফরম্যাট। যেন বান্দারা তাঁর শেখানো বাক্যের মাধ্যমে তাঁর কাছে আবেদন করে প্রয়োজন পূরণের চেষ্টা করে। আল্লাহ প্রথম মানব আদম (আ.)-কে দোয়া শিখিয়েছেন। তার বিবরণ কোরআনের মাধ্যমে বর্ণনা করে সব আদমসন্তানকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘অতঃপর আদম তার রবের পক্ষ থেকে কিছু বাণী শিখে নিল, ফলে আল্ল্লাহ তার তাওবা কবুল করলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাওবা কবুলকারী, অতি দয়ালু।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ৩৭)
আদম (আ.)-এর শেখা সে বাণীর বিবরণ অন্য আয়াতে সুস্পষ্টরূপে এসেছে, ‘তারা বলল, হে আমাদের রব, আমরা নিজেদের ওপর জুলুম করেছি। আর যদি আপনি আমাদের ক্ষমা না করেন এবং আমাদের রহম না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হব।’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৩)
আল্লাহ তাআলা আমাদের মাসনুন দোয়া পাঠে গুরুত্ব প্রদানের তাওফিক দান করুন। আমিন!