নিজস্ব প্রতিবেদক:
সংবর্ধনার জবাবে আরিফুল হক চৌধুরী
সিলেট নগরের উন্নয়নের সবটুকু কৃতিত্ব নগরবাসীকে দিয়ে ব্যর্থতার দায় নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে বিদায়ী মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেছেন, ‘আমি আপনাদের ছেলে, আপনাদের ভাই, আপনাদের লোক। যতদিন বেঁচে থাকব, আপনাদের হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
আজ শুক্রবার (১৩ অক্টোবর) সিলেট সিটি করপোরেশেনের পরিষদ কর্তৃক তাঁকে দেওয়া নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সংবর্ধিত অতিথির বক্তব্যে আবেগাপ্লুত সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী এসব কথা বলেন।
সিসিক কাউন্সিলর ও নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক শান্তনু দত্ত সনতুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন।
দায়িত্বকালে যাদের সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা পেয়েছেন তাদের বক্তব্যের শুরুতে স্মরণ করে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘সিলেটে যে উন্নয়ন হয়েছে-তা তরান্বিত করতে যারা অবদান রেখেছেন, যাদের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি সহযোগিতা করেছেন, যাতে জন্য আমি আরিফুল হক চৌধুরী আজকে এই সম্মান পেয়েছি তাদেরকে আমার স্মরণ করতেই হয়। তাদের মধ্যে সিলেটের কৃতি সন্তান, সাবেক অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম সাইফুর রহমান এবং তার পরই স্মরণ করছি মেয়র হওয়ার পর যিনি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছেন, আমাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়েছেন সিলেটের আরেক কৃতিসন্তান সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এবং আজকে যিনি পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে এসেছেন ড. এ কে আব্দুল মোমেনকে।’ তিনি বলেন, ‘সিলেট সিটি করপোরেশনের এই উন্নয়নের ক্ষেত্রে তাদের সর্বাত্মক যে সহযোগিতা পেয়েছি সেজন্য আমি নগরবাসীর পক্ষ থেকে, আমার পরিষদের পক্ষ থেকে তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তারা যদি আমাকে সহযোগিতা না করতেন তাহলে হয়তো আজকে আমরা এই অবস্থায় যেতে পারতাম না।
সিলেটের সম্প্রীতির সংস্কৃতি নিয়ে গর্ববোধ করেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি আজকে অত্যন্ত গর্বিত এজন্য যে আমরা সেই সিলেট, যে সিলেটের মানুষের ধর্মীয় সম্প্রীতিতে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত রেখেছে, এই সিলেটের মানুষ রাজনৈতিক সম্প্রীতিতেও বিরল দৃষ্টান্ত রেখেছে। যার বহিঃপ্রকাশ আজ আরেকবার ঘটল এই সামাজিক অনুষ্ঠানের মধ্যে দিয়ে। এই অনুষ্ঠানের আয়োজক তাদের আমি ধন্যবাদ জানাই, সম্প্রীতির নগরীকে আবার প্রমাণ করার জন্য।‘
সবার সহযোগিতা পাওয়ায় মেয়রের মেয়াদকালে বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ করতে পেরেছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি যেটুকু কাজ করেছি সব কৃতিত্ব এই নগরবাসীর এবং যারা আমাকে সহযোগিতা করেছেন। আর যা করতে পারিনি সে ব্যর্থতা আমি নিজের কাধে নিচ্ছি। আমি আপনাদের ভালোবাসা পেয়েছি, আমি আপনাদের ছেলে, আপনাদেরই ভাই, আপনাদেরই লোক। আমি যতদিন বেঁচে থাকব, আমি আপনাদের হয়ে বেঁচে থাকতে চাই।’
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করলে উন্নয়ন সম্ভব নয় মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘সিলেটের উন্নয়নে আমি সমন্বিতভাবে কাজ করেছি। আমি সবসময় বলে এসেছি, কোনো উন্নয়ন সম্ভব নয় যদি আমাদের মধ্যে ঐক্য, সম্প্রীতি এবং আমাদের মধ্যে রাজনৈতিক শিষ্টাচার, রাজনৈতিক সম্প্রীতি, ধর্মীয় সম্প্রীতি যদি বজায় না থাকে। এর এগুলো যদি বজায় রাখতে পারি তাহলে কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। আজকে বাংলাদেশের যে কোনো প্রেক্ষাপটে আমরা গর্ব করে বলতে পারি, আমাদের পূর্বপুরুষরা আমাদের যা শিখিয়েছেন তার ধারাবাহিকতা আমরা বজায় রেখেছি। ভবিষ্যতে যারা দায়িত্বে আসবেন, আছেন তারাও যেন এই দায়িত্বটুকু পালন করেন।’
নাগরিক সংবর্ধনা কমিটির আহবায়ক কাউন্সিলর শান্তনু দত্ত সনতু’র সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন সিসিকের প্যানেল মেয়র-১ কান্সিলর মোহাম্মদ তৌফিক বকস।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা সদর উদ্দিন চৌধুরী, বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক, বিশিষ্ট রাজনীতিক বেদানন্দ ভট্টাচার্য্য, মদন মোহন কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ অধ্যাপক আতাউর রহমান পীর, সিলেট ডায়বেটিস সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিশিষ্ট রাজনীতিক লোকমান আহমদ, সংবিধান বিশেষজ্ঞ এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সিলেট জেলা আইনজীবি সমিতির সভাপতি অশোক পুরকায়স্থ, রামকৃষ্ণ মিশন সিলেটের অধ্যক্ষ স্বামী চন্দ্রনাথানন্দ মহারাজ, সিলেট প্রেস বিটারিয়ান চার্চে ফাদার ডিকন নিঝুম সাংমা, প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. নাসিম আহমদ, সিলেট প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রশিদ রেনু ও সিলেট জেলা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহ দিদার আলম চৌধুরী নবেল।
নাগরিক সংবর্ধনায় শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সিসিক কাউন্সিলর মো. আজাদুর রহমান আজাদ ও কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলরগণ, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের পক্ষ থেকে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীকে দেয়া মানপত্র পাঠ করেন জনসংযোগ কর্মকর্তা আব্দুল আলিম শাহ।
প্রধান অতিথি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড .এ কে আব্দুল মোমেন এমপি ও সিসিকের কাউন্সিলরগণ নাগিরক সংবর্ধনা পাওয়া মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী হাতে মানপত্র, সম্মাননা স্মারক ও নগর ভবনের একটি প্রতীকি চাবি তুলে দেন। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে মেয়র কাউন্সিলরগণ সম্মাননা তুলে দেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত করেন সিলেট সিটি কর্পোরেশন জামে মসজিদের ইমাম মুফতি মাওলানা জসীম উদ্দিন, গীতা পাঠ করেন সিসিকের কর সহকারি কর কর্মকর্তা জ্যোতিষ চক্রবর্তী।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ড. কবীর চৌধুরী, মেয়র পত্নি সামা হক চৌধুরী, কাউন্সিলর আবুল কালাম আজাদ লায়েক, কাউন্সিলর শেখ তোফায়েল আহমদ সেপুল, কাউন্সিলর রেজওয়ান আহমদ, কাউন্সিলর সায়ীদ মো. আব্দুল্লাহ, কাউন্সিলর হাজী মো. মখলিছুর রহমান কামরান, কাউন্সিলর মো. সিকন্দর আলী, কাউন্সিলর আব্দুল মুহিত জাবেদ, কাউন্সিলর রাশেদ আহমদ, কাউন্সিলর এ বি এম জিল্লুর রহমান, কাউন্সিলর এস এম শওকত আমীন তৌহিদ, কাউন্সিলর মো. ফজলে রাব্বী চৌধুরী, কাউন্সিলর হুমায়ূন কবীর সুহিন, কাউন্সিলর মো. রায়হান হোসেন, কাউন্সিলর মো. মাজহারুল ইসলাম শাকিল, কাউন্সিলর মো. রকিব খান, কাউন্সিলর মো. রুহেল আহমদ, কাউন্সিলর দেলওয়ার হোসেন, কাউন্সিলর মো. জয়নাল আবেদীন, কাউন্সিলর জাহাঙ্গীর আলম, কাউন্সিলর হিরন মাহমুদ নিপু, কাউন্সিলর আলতাফ হোসেন সুমন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর কুলসুমা বেগম পপি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর রুহেনা খানম মুক্তা, সংরক্ষিত কাউন্সিলর শাহানা বেগম শানু, সংরক্ষিত কাউন্সিলর শাহানারা বেগম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর শারমিন আক্তার রুমি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ছামিরুন নেছা, সংরক্ষিত কাউন্সিলর আয়েশা খাতুন কলি, সংরক্ষিত কাউন্সিলর সাজেদা বেগম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর হাজেরা বেগম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ফাতেমা বেগম, সংরক্ষিত কাউন্সিলর বাবলী আক্তার, সিসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ফাহিমা ইয়াসমিস, প্রধান প্রকৌশলী নুর আজিজুর রহমান, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মতিউর রহমান খান, প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা বিশ্বজিত দেব, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম।
এছাড়া সিলেটের বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং সিসিকের বিভিন্ন শাখা ও বিভাগের কর্মকর্তা-কর্মচারিগণ উপস্থিত ছিলেন।