মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি:
ভাষা সৈনিক, প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ, চা শ্রমিক নেতা, শিক্ষাবিদ ও লেখক কমরেড মফিজ আলীর ১৫ তম মৃত্যু বার্ষিকী পালিত হয়েছে। বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির উদ্যোগে ১০ অক্টোবর মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টায় কমলগঞ্জ উপজেলার পতনঊষার ইউনিয়নের ধূপাটিলাস্থ প্রয়াতের সমাধিস্থলে পুষ্পস্তবক অর্পন শেষে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
সকাল সাড়ে ১০ টায় মফিজ আলীর সমাধিতে বিভিন্ন সংগঠনের পুষ্পার্পন শেষে শপথবাক্য পাঠ করেন নেতৃবৃন্দরা। পরে স্থানীয় মাঠে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি নূরুল মোহাইমীনের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক রজত বিশ্বাসের সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি ছিলেন জাতীয় গণতান্ত্রিক ফ্রন্ট মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি কবি শহীদ সাগ্নিক। আলোচক হিসাব উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কৃষক সংগ্রাম সমিতি মৌলভীবজাার জেলা কমিটির আহবায়ক ডা. অবনী শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ সিলেট জেলা কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক শ্রমিকনেতা রমজান আলী পটু, গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতি মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সভাপতি দেলোয়ারা বেগম, ধ্রুবতারা সাংস্কৃতিক সংসদ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সম্পাদক অমলেশ শর্ম্মা, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন সংঘ মৌলভীবাজার জেলা কমিটির সহ-সভাপতি মোস্তফা কামাল, হোটেল শ্রমিক ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক মোঃ শাহিন মিয়া, রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোঃ দুলাল মিয়া, চা শ্রমিক সংঘের নেতা হরিনারায়ন হাজরা, এনডিএফ নেতা নিরঞ্জন দাশ প্রমুখ।
বক্তারা বলেন, মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সাম্রাজ্যবাদ, সামন্তবাদ বিরোধী আন্দোলন সংগ্রাম ও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় ত্যাগী নেতা কমরেড মফিজ আলী কাজ করে গেছেন। তাঁর স্বপ্ন বাস্তবায়নে শাসক শোষক শ্রেণির শোষণ নির্যাতন থেকে মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রামের মধ্যদিয়ে শোষনমুক্ত সমাজ প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। মফিজ আলী ছাত্র জীবন থেকে প্রগতিশীল রাজনীতির ধারায় সম্পৃক্ত হয়ে ছাত্রআন্দোলন, ভাষা আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণঅভ্যূত্থান, কৃষক আন্দোলন, শ্রমিক আন্দোলনে আত্ননিয়োগ করে তাঁর জীবনের প্রায় পুরোটা সময় নিজের পরিবার-পরিজন ও আত্মপ্রতিষ্ঠার চিন্তা না করে সাধারণ মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। ৬০-এর দশকে সংশোধনবাদী তিন শান্তির তত্ত্ব নিয়ে বিশ্ব কমিউনিস্ট আন্দোলনে মহাবিতর্ক শুরু হলে আমাদের দেশে কমরেড আবদুল হক, কমরেড অজয় ভট্টাচার্য্য প্রমূখ নেতৃবৃন্দ মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পতাকা উর্দ্ধে তুলে ধরে মতাদর্শগত লড়াই চালান। ফলশ্রুতিতে ১৯৬৫ সালে পার্টি বিভক্ত হয়ে গেলে মফিজ আলী মার্কসবাদ-লেনিনবাদের পক্ষে অবস্থান নেন। তিনি মাঠের কর্মী হিসেবে, জননেতা হিসেবে শোষিত নির্যাতিত শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের মুক্তির লক্ষ্যে যেমন নিরলস সংগ্রাম করে গেছেন, তেমনি তাঁর ক্ষুরধার লেখনীর মাধ্যমে সংশোধনবাদ-সুবিধাবাদীদের মুখোশ উন্মোচন করেছেন। দীর্ঘ ৬০ বছরের বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনে তিনি ৭ বার কারবরণ করেন। ২০০৮ সালে ১০ অক্টোবর সংগ্রামী এই জননেতা ৮১ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।