Friday, November 8, 2024
Homeইসলামবয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা

বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য রয়েছে বিশেষ মর্যাদা

 

ইসলামী জীবনঃ

মানুষ জন্মের পর শৈশব-কৈশোর ও যৌবন পার করে বার্ধক্যে উপনীত হয়। প্রবীণরা সব সময় শ্রদ্ধার পাত্র। যথাযথ সম্মানের পাশাপাশি তাঁদের সার্বিক যত্ন নেওয়া মানবতা ও ঈমানের দাবি; বরং প্রবীণদের যথাযথ মূল্যায়ন করার মধ্যেই একটি সমাজের কল্যাণ। ইসলামের দৃষ্টিতে বেশি বয়সীদের আছে বিশেষ মর্যাদা।

 

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি কি তোমাদের মধ্যে উত্তম ব্যক্তির সংবাদ দেব না? তারা বলল, হ্যাঁ, আল্লাহর রাসুল! তিনি বলেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি উত্তম যে দীর্ঘ আয়ু লাভ করে এবং সুন্দর আমল করে। (মুসনাদ আহমাদ, হাদিস : ৭২১২, ইবনু হিব্বান, হাদিস : ৩০৪৩)

অন্যদিকে আমলহীন দীর্ঘ জীবন এক বোঝা। নবীযুগে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করল, হে আল্লাহর রাসুল! উত্তম ব্যক্তি কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর হয়েছে। ওই ব্যক্তি আবার প্রশ্ন করল, নিকৃষ্ট মানুষ কে? তিনি বলেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ হয়েছে।

 

 

(তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)

বৃদ্ধকে সম্মান করা মহান আল্লাহকে সম্মান করার শামিল। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো বলেন, নিশ্চয়ই শুভ্র চুলবিশিষ্ট মুসলিমকে সম্মান করা আল্লাহকে সম্মান করার শামিল। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৪৩)

 

জারবি (রা.) বলেন, আনাস বিন মালিক (রা.)-কে আমি বলতে শুনেছি, একজন বয়স্ক লোক রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে দেখা করতে এলো। লোকেরা তার জন্য পথ ছাড়তে বিলম্ব করে।

 

তা দেখে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যে ব্যক্তি আমাদের ছোটদের স্নেহ করে না এবং আমাদের বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে না সে আমাদের দলভুক্ত নয়। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯১৯)

তালহা বিন ওবায়দুল্লাহ (রা.) বলেন, দুজন মুসলমানের মধ্যে একজন শহীদ হলো এবং অন্যজন এক বছর পরে মারা গেল। তালহা (রা.) স্বপ্নে দেখলেন, পরে মারা যাওয়া লোকটি শহীদের আগে জান্নাতে চলে গেল। তারা বিস্মিত হয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ঘটনাটি বর্ণনা করল। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অন্য লোকটি কি তারপর এক বছর বেঁচে থাকেনি? সাহাবিরা বলেন, হ্যাঁ।

 

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সে একটি রমজান মাস পেয়েছে, সাওম পালন করেছে এবং এক বছর যাবত এত এত সালাত কি পড়েনি? তারা বলল, হ্যাঁ। তখন আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আসমান-জমিনের মধ্যে যে ব্যবধান আছে তাদের দুজনের মধ্যে তার চেয়ে বেশি ব্যবধান রয়েছে। (ইবনু মাজাহ, হাদিস : ৩৯২৫)

আলোচ্য হাদিস থেকে বোঝা যায়, বয়স বেশি পেয়ে বেশি ইবাদত করে শহীদের চেয়েও অগ্রগামী হওয়া সম্ভব।

 

তবে আমল ও ইবাদতের মাধ্যমে জীবনের শেষ দিনগুলো কাটানো চাই। শেষ বয়সে ইবাদতের মাত্রা যথাসাধ্য বাড়িয়ে দিতে হবে। কারণ এ সময় ইবাদতে অনীহা এসে যাওয়ার ফলে কাফির হয়ে মারা যাওয়ার আশঙ্কা আছে। আবদুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মক্কায় সুরা নাজম তিলাওয়াত করে সিজদা করলেন। তখন এক বৃদ্ধ ছাড়া সবাই সিজদা করল। সে এক মুষ্টি কংকর বা মাটি তুলে নিয়ে তাতে কপাল ঠেকাল এবং বলল, আমার জন্য এরূপ করাই যথেষ্ট। ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, পরবর্তীকালে আমি তাকে কাফির অবস্থায় নিহত হতে দেখেছি। (বুখারি, হাদিস : ১০০৫)

 

মহান আল্লাহ আমাদের সুস্থ ও ইবাদতময় বৃদ্ধকাল নসিব করুন।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments