Sunday, September 28, 2025
Homeপর্যটনমন ভোলানো মৌলভীবাজার

মন ভোলানো মৌলভীবাজার

নিজস্ব প্রতিবেদক,

উঁচু-নিচু অসংখ্য টিলা। চা বাগানে মাইলের পর মাইল সবুজের আচ্ছাদন। বাগানের বুকে চা পাতা ঘিরে ভিন্ন রকম জীবনসংগ্রাম। বর্ষায় বিশাল জলরাশি। হৃদয় ঠান্ডা করে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত। তার কাছেই হাকালুকি হাওরের একাংশ। ছোট-বড় ২৩৮টি নদী-বিলে অতিথি পাখির সমাহার। বছরজুড়ে মৌলভীবাজার গেলে এর নৈসর্গিক সৌন্দর্য যে কারও মন ভুলিয়ে দেবে।

 

মৌলভীবাজারের পাহাড়ি অঞ্চলজুড়ে রয়েছে ৯২টি চা বাগান। বাগানের যতদূর চোখ যায়, ছড়ানো সবুজের বাহু। পাখির কিচিরমিচির কলরব ভিন্ন আবহ তৈরি করে। পর্যটকদের জন্য ভিন্ন আকর্ষণ শ্রীমঙ্গলের এমআর খান চা বাগানের দার্জিলিং টিলা। শীত-বর্ষা সব মৌসুমে এখানে পর্যটকের ভিড় থাকে।

 

জেলার রাজনগরের কাউয়াদীঘি হাওরপারের অন্তেহরি পরিচিত পেয়েছে ‘জলের গ্রাম’ নামে। গ্রামের খাল-নালার পাশে সারি সারি হিজল-করচ গাছ। বর্ষায় গাছের ডুবন্ত নিম্নভাগ দূর থেকে সবুজ ছাতার আকৃতি ধারণ করে। বর্ষায় গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে চলা হাওরের বিশাল জলরাশিতে পাল তোলা নৌকার সঙ্গে জেলেদের ক্লান্তিহীন দিন আরেক জীবনের পাঠ্য। চাইলে মেতে ওঠা যায় জলকেলিতে।

 

মৌলভীবাজারের বড়লেখার পাথারিয়া পাহাড়ের ভেতরে জলের স্রোত। পাহাড়ের বুক চিরে প্রায় ২০০ ফুট উঁচু থেকে অবিরাম নামছে মাধবকুণ্ডের জল। বাদল দিনে জলের প্রবাহ বেশি থাকে। শুষ্ক মৌসুমে পানি কমলেও ঠান্ডা হয় হৃদয়। অদূরেই পরীকুণ্ড জলপ্রপাত দিনকে দিন পর্যটকের আকর্ষণের অন্যতম কেন্দ্র হয়ে উঠছে। জেলা সদর থেকে মাধবকুণ্ডের দূরত্ব প্রায় ৬৫ কিলোমিটার। পর্যটকের ক্লান্তি দূরে দারুণ দাওয়াই জেলা পরিষদের রেস্ট হাউস।

 

কমলগঞ্জের ইসলামপুর ইউনিয়নের কুরমা বন বিটের গভীর জঙ্গলে অনিন্দ্য সুন্দর হামহাম জলপ্রপাত। ভোরে জেলা সদর কিংবা শ্রীমঙ্গল থেকে রওনা দিতে হয়। কলাবাগান এলাকায় গাড়ি রেখে হেঁটে কয়েক কিলোমিটার পাহাড়ি পথ পাড়ি ভিন্ন অনুভূতি এনে দেয়।

 

জীববৈচিত্র্যের অন্যতম আশ্রয়কেন্দ্র কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান। এক হাজার ২৫০ হেক্টরের অভয়ারণ্যে রয়েছে বিরল উদ্ভিদ, লতাপাতা ও দুর্লভ প্রাণী। সংরক্ষিত এ বনাঞ্চলে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, চার প্রকার উভয়চর প্রাণী, ছয় প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি, ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ১৭ প্রজাতির পোকামাকড় রয়েছে। দিনে বনের গাছে গাছে দোল খায় বানরের দল।

 

ভ্রমণপিপাসু যে কাউকে টানবে শ্রীমঙ্গলের সিন্দুরখান ইউনিয়নের সীমান্ত নাহার খাসিয়াপুঞ্জির জঙ্গলে লাসুবন গিরিখাত। এখানে রয়েছে মাইলের বেশি দীর্ঘ অসংখ্য ঝিরিপথ। গিরিখাতের কিছু অংশে খাড়া পাথরের পাহাড়। নেই বৃষ্টি-বাদল; তবুও অনবরত ঝরছে টাপুরটুপুর পানি। পাথরের শরীর বেয়ে নিচে পড়ছে পানির ফোঁটা। সূর্যের দেখা না মিললেও প্রকৃতির অপূর্ব মিতালিতে মন ভালো হয়। পর্যটক টানছে কমলগঞ্জের দৃষ্টিনন্দন মাধবপুর লেক। চা-বাগান ঘেরা লেকের শ্রী বাড়িয়ে তুলেছে ‘ফুটন্ত’ শাপলা ও শালুক।

 

শ্রীমঙ্গলের বাইক্কা বিল, সদরের বর্ষীজোড়া ইকোপার্ক, কুলাউড়ার গগন টিলা, উঁচু কালা পাহাড়, জুড়ীর লাঠিটিলা, সংরক্ষিত বনাঞ্চলে বন্যহাতির সারির সঙ্গে আগর বাগান থেকে ঠিকরে পড়ছে মৌলভীবাজারের মন ভোলানো সৌন্দর্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments