Tuesday, September 16, 2025
Homeসিলেট বিভাগমৌলভীবাজারপর্যটনকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারের গ্রাম এখন শহর

পর্যটনকে কেন্দ্র করে মৌলভীবাজারের গ্রাম এখন শহর

নিজস্ব প্রতিবেদক,

পর্যটনের ছোঁয়ায় বদলে গেছে জনপদ। থোকা থোকা বা স্থাপনাহীন পটভূমির চিহ্ন মুছে গিয়ে স্থান পেয়েছে বড় বড় ইমারত, দালানকোঠার নান্দনিক সৌন্দর্য।

 

এলাকার মানুষের দরিদ্রতা মুছে গিয়ে তাদের ঠাঁই হয়েছে স্থানীয় কর্মসংস্থানে।

 

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলার রাধানগর গ্রাম পুরোপুরি বদলে গেছে পর্যটনকে কেন্দ্র করে।

একসময় এ গ্রামের মানুষের প্রধান জীবিকা ছিল আখ চাষ। তবে আখ চাষে লাভবান না হওয়ায় এই এলাকার মানুষ পরবর্তীকালে লেবু, কাঁঠাল ও আনারস চাষে ঝুঁকে পড়েন।

 

কিন্তু তাতেও কাঙ্ক্ষিত সাফল্য না পাওয়ায় দীর্ঘদিন কৃষিনির্ভর জীবনই ছিল রাধানগরের মানুষের ভরসা।

 

সবুজ পাহাড় আর নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরা এ গ্রামটি নতুন মাত্রা পায় ২০০৮ সালে।

সেবার গ্রামে নির্মিত হয় দেশের প্রথম পাঁচতারকা মানের পর্যটনকেন্দ্র গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফ। এর মাধ্যমে রাধানগরের ইতিহাসে সূচনা হয় নতুন অধ্যায়ের। এরপর থেকেই এ গ্রামটি পর্যটনের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা শহর থেকে মাত্র তিন কিলোমিটার দূরের পাহাড়ি টিলাভূমির এ গ্রামে এখন চোখে পড়ে নান্দনিক রিসোর্ট, আধুনিক কটেজ ও ইকো-রিসোর্ট। বর্তমানে রাধানগরে রয়েছে প্রায় চল্লিশটি রিসোর্ট, কটেজ ও ইকো-কটেজ। কোথাও নতুন রিসোর্টের নির্মাণকাজ চলছে, কোথাও খোলা হচ্ছে রেস্তোরাঁ। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে সারা বছর সরগরম থাকে এ গ্রাম।

 

শ্রীমঙ্গলের প্রথম ইকো-কটেজ ‘নিসর্গ নীরব’ এর পরিচালক এবং রাধানগর গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা কাজী শামসুল হক বলেন, আগের রাধানগর আর এখনকার রাধানগর এক নয়। এখন গ্রামের মানুষ অনেকটাই সচ্ছল হয়ে গেছেন। কেউ কেউ নিজেদের জায়গা-জমি বিক্রি করে ধনী হয়েছেন। কেউ কেউবা নিজেরা রিসোর্ট, কটেজ তৈরি করে পর্যটন ব্যবসায় অংশ নিয়েছেন।

 

অরণ্যের দিনরাত্রি নামের একটি ইকো-কটেজ পরিচালক ঢাকা নগরীর বাসিন্দা কুমকুম হাবিবা বলেন, এ গ্রামে রাতে এখনও জোনাকিদের মেলা বসে। আসলে গ্রামের সৌন্দর্যে খুব বেশি পরিবর্তন হয়নি, বদলেছে শুধু বিদ্যুতের লাইটপোস্ট।

 

গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট অ্যান্ড গলফের জেনারেল ম্যানেজার আরমান খান জানান, ২০১৩ সালের পর থেকে এ গ্রামে পর্যটন শিল্পের বিকাশ শুরু হয়। বর্তমানে এ গ্রামকে ঘিরে শতকোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ হয়েছে। এতে সচল হয়েছে স্থানীয় অর্থনীতি, তৈরি হয়েছে কর্মসংস্থানের সুযোগ। প্রায় ২০০ থেকে ২৫০ জন স্থানীয় যুবক কাজ করছেন পর্যটন খাতে।

 

পর্যটকদের আকর্ষণের অন্যতম কারণ এ গ্রামের ভৌগোলিক অবস্থান। কাছেই রয়েছে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান ও বিস্তীর্ণ সবুজ চা-বাগান। ফলে শ্রীমঙ্গলে বেড়াতে আসা প্রায় প্রত্যেক পর্যটকই ভিড় জমান রাধানগরে।

 

শ্রীমঙ্গল বেড়াতে আসা পর্যটক সুদীপ্তা চৌধুরী বলেন, আমি সুযোগ পেলেই ভ্রমণে বের হয়ে পড়ি। শ্রীমঙ্গল আমার ভালো লাগার একটি অন্যতম প্রিয় শহর। বহুবার এখানে এসেছি। বিশেষ করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানের সড়কের দিকে এসে রাধানগরে এগুতে থাকলে চারপাশের দৃশ্যগুলো খুব বেশি ভালো লাগে। মনেই হয় না এটি গ্রাম। মনে হয়, সমৃদ্ধ কোনো নগরী।

 

রাধানগর পর্যটন কল্যাণ পরিষদের সদস্য সচিব মো. তারিকুর রহমান পাপ্পু মনে করেন, কৃষিনির্ভর অতীত পেরিয়ে রাধানগর আজ পর্যটনের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। শুধু পর্যটকদের কারণে নয়, এখানকার মানুষের আন্তরিকতা ও আতিথি পরায়ণ আচরণও রাধানগরের সাফল্যের অন্যতম কারণ। বর্তমানে রাধানগর শুধু একটি গ্রাম নয়, বরং মৌলভীবাজার জেলার পর্যটনের প্রাণকেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments