ঝলক দত্ত, শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধি:
শ্রীমঙ্গলের মাজদিহি চা বাগানের সন্তান আকাশ নুনিয়া কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনে এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। সরকারি কর্ম কমিশন (পিএসসি) থেকে গত বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর) ঘোষিত ৪৮তম (বিশেষ) বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলে তিনি সহকারী সার্জন হিসেবে সুপারিশপ্রাপ্ত হন।
চা শ্রমিক পরিবারে জন্ম নেওয়া ডা. আকাশ নুনিয়ার বেড়ে ওঠা ছিল নানা প্রতিকূলতা ও সীমাবদ্ধতার মধ্যে। তাঁর বাবা দশরথ নুনিয়া ও মা মিরা নুনিয়া দুজনেই চা শ্রমিক। চার ভাইবোনের মধ্যে আকাশ দ্বিতীয়। আকাশের বড় বোন সিলেট এমসি কলেজ থেকে প্রাণীবিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন, ছোট বোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির প্রস্তুতি নিচ্ছেন এবং ছোট ভাই নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করছে।
ডা. আকাশ নুনিয়ার শিক্ষাজীবন শুরু হয় কুলাউড়ার লংলা চা বাগানের ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুল থেকে। ২০১২ সালে এসএসসি পাশ করে কুলাউড়ার জালালাবাদ উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবং ২০১৪ সালে এইচএসসি সম্পন্ন করে শ্রীমঙ্গলের দি বাডস রেসিডেন্সিয়াল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে। একই বছর তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান এবং পরের বছর ঢাকা মেডিকেল কলেজে এমবিবিএস পড়ার সুযোগ লাভ করেন। ২০২১ সালে এমবিবিএস ডিগ্রি সম্পন্ন করে ২০২২ সালে ইন্টার্নশিপ শেষ করেন। চলতি বছরের জুলাই মাসে তিনি মেডিসিন বিষয়ে এফসিপিএস পার্ট-১ সম্পন্ন করেছেন। বর্তমানে তিনি নিজ এলাকায় অবস্থান করে সাধারণ চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন এবং উচ্চতর শিক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
চা শ্রমিক পরিবারের সন্তান হয়েও বিসিএস ক্যাডারে ডাক্তার হিসেবে মনোনীত হওয়ায় তাঁর এলাকায় আনন্দ ও গর্বের আবহ তৈরি হয়েছে। স্থানীয়রা বলছেন, ডা. আকাশ নুনিয়ার এই সাফল্য শুধু তাঁর ব্যক্তিগত অর্জন নয়, বরং চা শ্রমিক সম্প্রদায়ের তরুণ-তরুণীদের জন্য এক অনন্য অনুপ্রেরণা।
নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করতে গিয়ে ডা. আকাশ নুনিয়া বলেন,”আমি মহান সৃষ্টিকর্তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই, যাঁর অশেষ কৃপায় বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (বিসিএস)-এর স্বাস্থ্য ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হতে পেরেছি। এই পথচলা সহজ ছিল না, প্রতিটি ধাপে ছিল সংগ্রাম ও চ্যালেঞ্জ। আজকের এই অর্জন আমার একার নয়; এর পেছনে রয়েছে আমার মা-বাবার অকৃত্রিম ভালোবাসা ও আত্মত্যাগ।
আমি গভীর কৃতজ্ঞতা জানাই আমার স্কুল ক্যামেলিয়া ডানকান ফাউন্ডেশন স্কুল-এর প্রতি, যেখানে আমি শুধু পাঠ্যশিক্ষাই নয়, জীবনের বড় কিছু হবার স্বপ্ন দেখার সাহস পেয়েছি। এই প্রতিষ্ঠান আমাকে প্রথম শিখিয়েছে সদিচ্ছা আর কঠোর পরিশ্রম থাকলে কোনো কিছুই অসম্ভব নয়।
আমি কৃতজ্ঞ আমার স্কুল, কলেজ, মেডিকেল কলেজের শিক্ষকবৃন্দ, সহপাঠী, সিনিয়র-জুনিয়র এবং জীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে যারা নিঃশর্তভাবে পাশে থেকেছেন তাদের সবার প্রতি। আমি শ্রীমঙ্গল রামকৃষ্ণ মিশনের বিবেকানন্দ সেবাশ্রমের হোস্টেলে থেকে লেখা পড়া করেছি। আমি জানি, এটি কেবল শুরু। দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করার জন্য সবার দোয়া ও আশীর্বাদ কামনা করছি।