বিশেষ প্রতিনিধি:
শিল্পপতি রাগীব আলীর অসুস্থতার সুযোগে তার মেয়ে রেজিনা কাদিরকে সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। রেজিনা কাদিরের অভিযোগ, কিছু আত্মীয় এবং কর্মচারী ষড়যন্ত্র করে তাকে তার পিতার নিকট থেকে দূরে রাখছেন এবং সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি মুঠোফোনে আলাপকালে এ প্রতিবেদকের কাছে এমনটি জানান রেজিনা কাদির।
রেজিনা কাদিরের অভিযোগ, তাকে পিতার সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিতে চক্রান্ত চলছে। রাগীব আলীর কোন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা বোর্ড, ট্রাস্টি বোর্ডে রাখা হয়নি রেজিনা কাদিরের নাম। রাগীব আলীর বর্তমান বয়স প্রায় ৯০ বছর, এবং তার অসুস্থতার সুযোগে তাদেরই কিছু আত্মীয় ও কর্মচারী ষড়যন্ত্র করে তাকে সব কিছু থেকে বঞ্চিত করতেছে বলে অভিযোগ তার।
তিনি বলেন, সম্পত্তি নিয়ে বিরোধের কারণে বাবার সাথে দীর্ঘদিন ধরে দেখাও করতে পারছিলেন না রেজিনা কাদির। তার আত্মীয় স্বজন ও কর্মচারিরা বাবার নিকট থেকে তাকে দূরে রাখতে সব সময় নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত আছেন। তবে ভাইয়ের স্ত্রী সাদিকা জান্নাত চৌধুরী সিলেটে না থাকার সুযোগে ২৯ জুলাই বাবার সাথে দেখা করতে সিলেট আসেন রেজিনা কাদির। সিলেটে এসেই মালনীছড়া বাগানে রাগীব আলীর বাংলোতে যান তিনি। তবে বাংলোতে ঢোকার আগেই বাধার মুখে পড়তে হয় রেজিনা কাদিরকে। প্রকাশ থাকে যে, সাদিকা জান্নাত চৌধুরী একজন ভারতীয় নাগরিক। অভিযোগ রয়েছে, রাগীব আলীর বাংলোতে রেজিনা কাদিরের সঙ্গে আসা তার বডিগার্ডকে কর্মচারি ও ষড়যন্ত্রকারিরা মিলে মারধর করে গুরুতর আহত করে। এই ঘটনার সময়ে বডিগার্ডের গ্রামের বাড়ি থেকে সিলেটে মাজার ও চা বাগান পরিদর্শনে আসা ছয়জনকে ও ষড়যন্ত্রকারিরা ডাকাত বলে চা বাগানের শ্রমিকদের দিয়ে গণপিটুনি দিয়ে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। প্রকাশ থাকে যে, রেজিনা কাদির বডিগার্ডের গ্রামের এলাকা থেকে আসা লোকজনের ব্যাপারে তখন জানতেন না।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায় , ওই বাংলোর নিরাপত্তাকর্মী ও বাগান শ্রমিকরা রেজিনা কাদিরের সঙ্গে আসা লোকজনকে মারধর করেন। রেজিনা কাদির ‘জোর করে রাগীব আলীর সম্পত্তি লিখে নিতে পারেন’ এমন আশঙ্কা থেকে ওই পরিবারের ঘনিষ্ট একটি গোষ্টির ইন্ধনে রেজিনার সঙ্গীদের মারধর করা হয় বলে জানা গেছে। মারধরের পর ৭ জনকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
পুলিশ জানায় , ওইদিন রেজিনা কাদির বাবার সাথে থাকতে চাইলেও রাগীব আলী সম্মত হননি।
এ ঘটনার জেরে ৩১ জুলাই মালনীছড়া চা বাগানের সহকারী ব্যবস্থাপক বিদ্যুৎ কুমার তালুকদার বাদী হয়ে সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট প্রথম আদালতে একটি মামলা করেন। মামলায় রাগীব আলীর বাংলো থেকে ‘নথিপত্র লুট’ ‘আলাদা কিছু কাগজে স্বাক্ষর’ গ্রহণের অভিযোগ আনা হয়।
মামলায় সঙ্গী ৭ জনসহ রেজিনা কাদিরকেও অভিযুক্ত করা হয়। আগেই আটক হওয়া ৭ জনকে এ মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। আর গত ৬ই আগষ্ট রেজিনা কাদির আত্মসমর্পন করলে আদালত তাকে কারাগারে প্রেরণ করেন।
পরে বুধবার (১৩ আগস্ট) সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতের বিচারক শরিফুল হক শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। সন্ধ্যায় তিনি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ছাড়া পান বলে জানা গেছে।
এয়ারপোর্ট থানার সাব ইন্সপেক্টর সৌমেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
প্রসঙ্গত, বিপত্নীক রাগীব আলীর দুই সন্তান। ছেলে আব্দুল হাই ও মেয়ে রেজিনা কাদির। মেয়ে তার পরিবারের সাথে যুক্তরাজ্যে থাকেন। আর ছেলে আব্দুল হাই স্ত্রী-সন্তান নিয়ে রাগীব আলীর সাথে তার মালনীছড়া চা-বাগানের বাংলোয় থাকেন। পিতার সম্পদের ভাগ থেকে বঞ্চিত ও তার সম্পদ হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে ২০২৪ সালের ৫ জুন ঢাকার মতিঝিল থানায় সাধারণ ডায়রি করেন রেজিনা কাদির।
সে ডায়রিতে ‘স্বাক্ষর জাল করে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক থেকে লোনের আবেদন করা’ ও ‘পরস্পর যোগসাজশে সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার আশঙ্কা’ প্রকাশ করেন রেজিনা কাদির।
ডায়রিতে রাগীব আলীর পুত্রবধূ সাদিকা জান্নাত চৌধুরী, পি এস দেওয়ান শাকিব আহম্মেদ, সহযোগী আজম আলী, শ্যামল পাশী ও লিডিং ইউনিভার্সিটির তৎকালীন ট্রেজারার বনমালী ভৌমিককে অভিযুক্ত করা হয়।