আবু সালেহ মোঃ আলা উদ্দিন, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) থেকে::
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এ বছর উপজেলার অন্যতম অগ্রসর বিদ্যালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতায় জর্জরিত হয়ে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। বিদ্যালয়ে নেই খেলাধুলার মাঠ, নেই পর্যাপ্ত একাডেমিক অবকাঠামো। ফলে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ও সহপাঠ্য কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত এবং ২০০১ সালে জাতীয়করণ হওয়া বিদ্যালয়টিতে বর্তমানে ৫ জন শিক্ষক এবং প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। কিন্তু ভবনের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় জরাজীর্ণ কক্ষে ক্লাস নিতে হচ্ছে। একাডেমিক ভবনের দ্বিতীয় তলা নির্মাণ না হওয়ায় শ্রেণিকক্ষের ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা মাঠ না থাকা। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত বিদ্যালয়ের কোনো খেলার মাঠ নেই। ফলে দৈনিক সমাবেশ, শরীরচর্চা ও খেলাধুলার ক্লাস বন্ধ রয়েছে। শিক্ষার্থীরা জানায়, তাদের জীবনে কখনো শরীরচর্চার ক্লাস হয়নি, খেলাধুলার জন্য মাঠও নেই।
বিদ্যালয়ে আসার পথও ঝুঁকিপূর্ণ। সরু রাস্তাগুলো দুই পাশে পুকুরঘেরা হওয়ায় বর্ষাকালে পানিতে ডুবে যায়। এ কারণে অতীতে কয়েকজন শিক্ষার্থী পানিতে পড়ে প্রাণ হারিয়েছে। এখনো শিক্ষার্থীদের প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বিদ্যালয়ে আসতে হয়।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে, তাদের খেলাধুলার জন্য মাঠ নেই। শরীর চর্চার ক্লাস কোনোদিনই হয়নি। সরো রাস্তাগুো দিয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্কুলে আসতে হয়।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার গ্রাম, আমার বিদ্যালয়। কিন্তু সমস্যা যেন শেষ হচ্ছে না। মাঠ না থাকায় শিক্ষার্থীরা খেলাধুলা করতে পারে না, শরীরচর্চার ব্যবস্থা নেই। বহুবার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, কিন্তু মাঠ ভরাট কিংবা ভবনের সংস্কারের কোনো কাজ হয়নি।’
স্থানীয় অভিভাবকেরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, উপজেলায় অন্য সব বিদ্যালয়ে মাঠ থাকলেও কেবল লামাসানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ই ব্যতিক্রম। অবকাঠামো সংকট ও রাস্তাঘাটের দুরবস্থার কারণে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়ছে।
এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার পঞ্চানন কুমার সানা জানান, ‘লামাসানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মাঠ নেই—এ বিষয়টি আমরা জানি। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং বিদ্যালয়টি আমাদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে।’
শিক্ষার মানে অগ্রসর এই বিদ্যালয়টির মৌলিক সমস্যাগুলোর দ্রুত সমাধান এখন এলাকার অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষানুরাগীদের একান্ত প্রত্যাশা।