পিন্টু দেবনাথ মৌলভীবাজার :
মৌলভীবাজার শহরের শমসেরনগর রোডে ব্যবসায়ী শাহ ফয়জুর রহমান রুবেল হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। হত্যার ১০ দিন পর পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ছিনতাইয়ের উদ্দেশ্যে পরিকল্পিতভাবে দোকানে প্রবেশ করে ব্যবসায়ী রুবেলকে হত্যা করেছে ২২ বছর বয়সী যুবক জুহেল মিয়া ওরফে জুয়েল ওরফে আলিফ।
রোববার (১৮ আগস্ট) দুপুরে মৌলভীবাজার পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন।
পুলিশ সুপার জানান, গত ৭ আগস্ট সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে শমসেরনগর রোডের সিএনজি স্ট্যান্ডসংলগ্ন “এফ রহমান ট্রেডিং” দোকানে এ হত্যাকাণ্ড ঘটে। এ সময় দোকানে একাই ছিলেন ব্যবসায়ী রুবেল (৫৫)। নামাজ শেষে দোকানে ফিরতেই এক অজ্ঞাত যুবক ক্রেতা সেজে প্রবেশ করে। রঙ কেনার কথা বলে তাকে দোকানের ভেতরের অংশে নিয়ে যায়। সুযোগ বুঝে ধারালো ছুরি বের করে রুবেলের শরীরে একের পর এক আঘাত করে। পরে দোকানের ক্যাশ থেকে মাত্র ১,১০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর নিহতের পরিবার সদর মডেল থানায় হত্যা মামলা (মামলা নং-১৮/২০২৫, ধারা ৩০২/৩৪) দায়ের করে। মামলার তদন্তে নামে আসে রহস্যজনক এক সূত্র, একটি রক্তমাখা ২০ টাকার নোট।
পুলিশ সুপার আরো জানান, ঘটনাস্থল থেকে বেরিয়ে আসা সময় খুনি একটি অটোরিকশায় উঠে। চালক পরে জানান, তার যাত্রীর হাতে প্রচুর রক্ত ঝরছিল। সে রিকশাভাড়া দিতে একটি রক্তমাখা নোট দেয়। ওই তথ্যের ভিত্তিতেই পুলিশ হাসপাতালের সিসিটিভি ফুটেজ ঘেঁটে হত্যাকারীকে শনাক্ত করে। তার হাতেও ব্যান্ডেজ ছিল, যা খুনের সময় আহত হওয়ার ইঙ্গিত দেয়। শনাক্ত হওয়ার পর দীর্ঘ অভিযান চালিয়ে ১৭ আগস্ট দুপুরে শ্রীমঙ্গলের লইয়ারকুল গ্রামে নিজ বাড়ি থেকে জুহেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার এম. কে. এইচ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, “তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, আর্থিক সংকটে হতাশ হয়ে জুহেল এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে। হত্যার দিন সে পুরো শহরে ঘুরে অপেক্ষাকৃত নিরিবিলি দোকান খুঁজছিল। অবশেষে রুবেলের দোকানেই সুযোগ পেয়ে হামলা চালায়। গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জুহেল হত্যার দায় স্বীকার করেছে। সে জানায়, ৬ আগস্ট প্রথমবার শহরে এসেও কোনো সুযোগ না পেয়ে ফিরে যায়। পরদিন আবার ফিরে এসে হার্ডওয়্যার দোকান থেকে কিছু পণ্য কিনে আশপাশে ঘোরাফেরা করে। পরে রুবেলকে একা পেয়ে ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করে।
পুলিশ তার দেওয়া তথ্যমতে হত্যায় ব্যবহৃত ছুরি, ঘটনাস্থলে ব্যবহৃত মাস্ক ও জুতা, রিকশা ভাড়ায় দেওয়া রক্তমাখা নোট, হার্ডওয়্যার দোকান থেকে কেনা এলবো ও গ্লু উদ্ধার করে।
জুহেলের পারিবারিক অবস্থা ছিল শোচনীয়। বাবা দিনমজুর, নিজে বেকার। আগে স্থানীয় একটি মিষ্টির দোকানে কাজ করলেও চাকরি হারানোর পর হতাশায় ডুবে যায়। সেই হতাশা ও আর্থিক সংকট থেকেই অপরাধের পথে পা বাড়ায় সে।
জুহেল মিয়া ওরফে জুয়েল ওরফে আলিফ (২২), তার পিতা-সুহেল মিয়া, সাং-লইয়ারকুল, থানা-শ্রীমঙ্গল, জেলা-মৌলভীবাজার।
নিহত রুবেল মৌলভীবাজার শহরের সুপরিচিত ব্যবসায়ী ছিলেন। হত্যার প্রতিবাদে ব্যবসায়ীরা দোকানপাট বন্ধ রেখে বিক্ষোভ করেন।