Monday, August 11, 2025
Homeলিড সংবাদসিলেটে প্রকাশ্যে লুট সাদা পাথর! ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, হুমকির মুখে পর্যটন ও...

সিলেটে প্রকাশ্যে লুট সাদা পাথর! ধ্বংস হচ্ছে প্রকৃতি, হুমকির মুখে পর্যটন ও জীবিকা

নিজস্ব প্রতিবেদক,

সিলেটের কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জের সাদাপাথর একসময় ছিল অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। স্বচ্ছ জল, সাদা পাথরের স্তূপ আর সবুজ পাহাড় ঘেরা এই এলাকা ছিল দেশের অন্যতম পর্যটনকেন্দ্র। কিন্তু এখন দৃশ্যপট পাল্টে গেছে। নদীর তলদেশে বড় বড় গর্ত, ঘোলা পানি আর পাথরশূন্য মরুভূমি যেন এখানে নতুন বাস্তবতা।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, প্রভাবশালী একটি চক্র দিনের আলোয় কিংবা গভীর রাতে শত শত নৌকায় পাথর তুলছে। এ চক্রের সঙ্গে জড়িতদের প্রভাব এতটাই বেশি যে সাধারণ মানুষ মুখ খুলতে সাহস পান না। কয়েক মাসের অব্যাহত লুটপাটে পাথরের স্তূপ উধাও, আর নদীর স্বচ্ছতা হারিয়ে গেছে।

 

কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা মো. আব্দুল ওয়াদুদ শিপন বলেন, সাদা পাথর লুটপাট বন্ধের দাবিতে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন, বিশেষ করে ইউএনও মহোদয় এবং সিলেট জেলা প্রশাসন, বিশেষ করে ডিসি মহোদয়কে একাধিকবার বিষয়টি অবহিত করেছি। প্রতিবারই তারা জানিয়েছেন, এ বিষয়ে তাদের অভিযান চলমান রয়েছে। কিন্তু কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। আমি দৃঢ়ভাবে আশা করি, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে এই লুটপাটের অবসান ঘটাবে এবং অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।

 

পর্যটন ব্যবসায়ীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে সাদা পাথরের নাম পর্যটন মানচিত্র থেকে মুছে যেতে সময় লাগবে না। এতে শুধু পর্যটন নয়, জীবিকার ওপর নির্ভরশীল শতাধিক পরিবারও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে।

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ট্রাভেলার্স অফ গ্রেটার সিলেটের এডমিন শেখ রাফি বলেন, সাদা পাথরের এই নির্বিচারে পাথর লুট শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ধ্বংস করছে না, বরং পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য ও স্থানীয় মানুষের জীবিকা সরাসরি হুমকির মুখে ফেলছে। প্রশাসনের চোখের সামনে এই অপরাধ চলা মানে অপরাধীদের সরাসরি প্রশ্রয় দেওয়া। আমরা ট্যুর অপারেটররা খুবই ব্যথিত। কারণ এই ধ্বংসযজ্ঞ কেবল আমাদের পেশা নয়, আমাদের ভালোবাসার প্রকৃতিকেও হত্যা করছে। এখনই কঠোর আইন প্রয়োগ, দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং এই অবৈধ কর্মকাণ্ডের স্থায়ী অবসান প্রয়োজন নইলে একদিন সাদা পাথর শুধু ছবিতে দেখার জায়গা হয়ে যাবে।

 

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) সিলেট বিভাগের সমন্বয়ক শাহ শাহেদা বলেন, যেহেতু খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় দাবি করে এই সম্পদ তাদের, সেহেতু এই জায়গায় তারা তদারকির দায়িত্বে আছে। এইযে পাথরগুলো শেষ হয়ে যাচ্ছে, সুন্দর একটা জায়গা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সবমিলিয়ে বলা যায়, এইগুলা দেখার মতো কেউ নেই।

 

তিনি আরও বলেন, সিলেট একটা অরক্ষিত জায়গা হয়ে যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার জন্য কেউ আছে বলে মনে হয় না। পাথর সংরক্ষণে প্রশাসনের উদ্যোগ যথেষ্ট নয়। এই ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনার নেপথ্যের কুশীলবদের চিহ্নিত করা দরকার।

 

বিষয়টি নিয়ে পক্ষ থেকে কোম্পানিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আজিজুন্নাহারের মুঠোফোনে কল দিয়ে জানতে চাওয়া হয় দিনে-দুপুরে নৌকা নিয়ে প্রকাশ্যে পাথর লুট হচ্ছে, কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কেন ব্যবস্থা নিতে পারছে না—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, উপজেলা প্রশাসন নিয়মিত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের কাজ চলমান থাকবে জানিয়ে তিনি মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।

 

জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদ বলেন, নিয়মিত আমাদের অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। জেলা থেকে যৌথ বাহিনীর মাধ্যমে অভিযান হচ্ছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতা নিয়ে এই অবৈধ কার্যক্রম বন্ধে কাজ চলছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments