Monday, August 4, 2025
Homeশিক্ষাদোয়ারাবাজারে একই গ্রামের নামে দুই মাধ্যমিক বিদ্যালয়: বিভ্রান্তিতে শিক্ষার্থী-ও অভিভাবকরা।

দোয়ারাবাজারে একই গ্রামের নামে দুই মাধ্যমিক বিদ্যালয়: বিভ্রান্তিতে শিক্ষার্থী-ও অভিভাবকরা।

 

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি::

সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষীপুর ইউনিয়নের একটি গ্রামে একই নামে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়েছে। এতে করে চরম বিভ্রান্তির মুখে পড়েছেন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয়রা।

বিভ্রান্তির সূত্রপাত ২০২৩ সালে, যখন “চকবাজার উচ্চ বিদ্যালয়” নামে পুরাতন একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির মধ্যে দ্বন্দ্বের জেরে, কাছাকাছি এলাকায় “চকবাজার হাই স্কুল” নামে আরেকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় গড়ে তোলা হয়।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সাল থেকে “চাইল্ড কেয়ার মডেল একাডেমি” নামে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছিল, যা ২০২২ সালে মাধ্যমিক পর্যায়ে উন্নীত হয়ে “চকবাজার উচ্চ বিদ্যালয়” নামে কার্যক্রম শুরু করে। এ সময় প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ছিলেন দোয়ারাবাজার উপজেলা পরিষদের সিএ শফিকুর রহমান এবং প্রধান শিক্ষক ছিলেন আব্দুল মোতালেব।

কিন্তু ২০২৩ সালে অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে কয়েকজন শিক্ষক — আব্দুল মোতালেব, হুমায়ুন কবির, সুখী বেগম ও সুমন মজুমদার — কে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তারা এ ঘটনাকে অন্যায় ও প্রতারণা দাবি করে আদালতে শফিকুর রহমানসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। পরবর্তীতে অব্যাহতি প্রাপ্ত শিক্ষকরা “চকবাজার হাই স্কুল” নামে একটি নতুন প্রতিষ্ঠান স্থাপন করেন। বর্তমানে এই স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬০ জন। তবে উভয় স্কুলের নাম প্রায় এক হওয়ায় বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা খোকন মিয়া বলেন, “একই নামে দুটি স্কুল হওয়ায় আমরা অভিভাবকরাও বিভ্রান্ত হচ্ছি। চেষ্টা করেছি দুই পক্ষকে এক করতে, কিন্তু শফিকুর রহমান তাতে রাজি হননি। এলাকাবাসীর দাবি, সমন্বয় ছাড়া কোনো প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া উচিত নয়।”

“চকবাজার হাই স্কুল”-এর ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হুমায়ুন কবির বলেন, “আমরা প্রতিষ্ঠাকালীন শিক্ষক। আমাদের সঙ্গে প্রতারণা হয়েছে। জালিয়াতির মাধ্যমে আমাদের সরিয়ে দেওয়া হয়। তাই আমরা নতুন স্কুল গড়ে তুলি। তবে একই নাম থাকায় অনুমোদন পেতে জটিলতা হচ্ছে। আমরা চাই, একটি একক স্কুল হোক—এতেই শিক্ষার্থীদের মঙ্গল।”

অন্যদিকে, “চকবাজার উচ্চ বিদ্যালয়”-এর বর্তমান প্রধান শিক্ষক জাকির হোসেন দাবি করেন, “আমরাই মূল প্রতিষ্ঠান। কিছু শিক্ষক বের হয়ে গিয়ে আরেকটি স্কুল তৈরি করেছেন। একই নামে স্কুল থাকায় সমস্যা হচ্ছে।”

এ বিষয়ে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, “একই নামে দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় চলতে পারে না। আমরা তদন্ত করছি, তদন্ত শেষে রিপোর্ট পাঠানো হবে।”

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেট-এর বিদ্যালয় পরিদর্শক মোহাম্মদ মঈনুল ইসলাম বলেন, “একই নামে দুটি প্রতিষ্ঠান চলবে না। আমরা স্থানীয়ভাবে বিষয়টি সমাধান করতে বলেছি। সমাধান এলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”

স্থানীয়রা বলছেন, দ্বন্দ্ব ভুলে দুই পক্ষ যদি আলোচনার মাধ্যমে একটি প্রতিষ্ঠানে একত্রিত হয়, তাহলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আরও উজ্জ্বল হবে এবং অপ্রয়োজনীয় বিভ্রান্তি থেকেও রক্ষা পাওয়া যাবে। অন্যথায় এই দুটি স্কুলেরই কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া হোক।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments