নিজস্ব প্রতিবেদক,
চা শ্রমিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির উদ্যোগেিসিলেটে চা শ্রমিক কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রোববার বিকেল ৩টায় সিলেটের শহীদ সুলেমান হল-এ ১১দফা দাবিতে এ কনভেনশন অনুষ্ঠিত হয়।
চা শ্রমিক ঐক্য কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বচন কালোয়ারের পরিচালনায় এবং সংগঠনের সভাপতি অজিত রায়ের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত কনভেনশনে আলোচনা করেন, এমাদ উল্লাহ শহীদুল ইসলাম শাহীন, সাবেক সভাপতি,সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি, মাসুদ রানা, সমন্বয়ক, কেন্দ্রীয় নির্বাহী ফোরাম, বাসদ (মার্কসবাদী) মানস নন্দী, সভাপতি, বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, সজল ছত্রী, কবি ও সাংবাদিক সঞ্জয় কান্ত দাস, সমন্বয়ক, বাসদ(মার্কসবাদী) সিলেট জেলা সাংগঠনিক কমিটি, সবুজ তাতি,সভাপতি, চা শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র,হৃদেশ মুদি,আহ্বায়ক, বাংলাদেশ চা শ্রমিক আন্দোলন, রতিলাল নায়েক,সভাপতি বুরজান চা বাগান,অরুন বুনার্জী, সভাপতি, লালাখাল চা বাগান, সাইদুল ইসলাম সুহেল, সুশেন কুর্মী,শ্যামল বাড়াইক,লিপি গঞ্জু প্রমুখ।
এর পূর্বে একটি মিছিল নগরীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ শহীদ সুলেমান হলে এসে কনভেনশনে মিলিত হয়।
কনভেনশনে বক্তারা বলেন, ‘বৈষম্যহীন সমাজ নির্মাণের আশা জাগিয়ে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছিল। অভ্যুত্থানের পর রাষ্ট্র ও সমাজের বহুমুখী গণতান্ত্রিক সংস্কারের প্রস্তাব এসেছে। আমরা আশা করেছিলাম, এবার হয়তো চা শ্রমিকদের ভাগ্যের পরিবর্তন হবে। দুঃখজনক হলেও এটা সত্যি যে, চা বাগানে এর বিশেষ কোন প্রভাব পড়েনি!
সরকার পাল্টায়, ভিন্ন নামে সরকার আসে, কিন্তু চা শ্রমিকদের জীবনে সুখ আসে না। বর্তমানে একজন চা শ্রমিকের দৈনিক মজুরি মাত্র ১৭৮.৫ টাকা। এই মজুরি দিয়ে কোন ভাবেই একটি পরিবার দু’বেলা দু’মুঠো খেয়ে চলতে পারে না, শিক্ষা-চিকিৎসা তো দূরের কথা। আমরা মনে করি, বর্তমান বাজার দরের কথা বিবেচনা করে, চা শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি ৬‘শ টাকা নির্ধারণ এবং একই সাথে চাল, ডাল, তেল, চিনিসহ পূর্ণাঙ্গ রেশন ব্যবস্থা চালু করা দরকার।
২০২৩ সালে প্রণীত হয় গেজেটকে চা শ্রমিক স্বার্থবিরোধী উল্লেখ করে বক্তারা বলেন, এই চা শ্রমিক স্বার্থবিরোধী গেজেট বাতিল হওয়া জরুরি। চা বাগানে শিক্ষা ও চিকিৎসার করুণ চিত্র। সিলেট জেলার ২৩টি চা বাগান; এর কোনটিতেই কোন সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় নেই। প্রায় সব বাগানেই এ রকম চিত্র। চা বাগানে চিকিৎসা সেবা খুবই অপ্রতুল। এম.বি.বি.এস ডাক্তার তো দূরের কথা, বাগানগুলোতে প্রশিক্ষিত সেবিকা বা মিডওয়াইফ নেই। এ্যাম্বুলেন্সের অভাবে রোগিদের তাৎক্ষণিক হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া যায় না। নারী শ্রমিকদের মাতৃত্বকালীন ছুটি মাত্র ৪ মাস। নামে মাত্র মেডিকেল সেন্টার থাকলেও সেটা অকার্যকর। ১৮০ বছর ধরে যে ভূমিতে চা শ্রমিকরা বসবাস করছেন, তাতে নেই আইনি অধিকার।
বক্তারা বলেন, চা বাগানের ভূমি দখল যেমন চলছে, একই সাথে রিসোর্ট, টি-ট্যুরিজম, রাবার বাগানসহ বিভিন্ন প্রকল্প শুরুর পায়তারা চলছে। যা চা শিল্প ও চা শ্রমিকদের ভয়াবহ সংকটে ফেলছে। আমরা সরকারি উদ্যোগে বন্ধ বা রুগ্ন বাগান চালু এবং একই সাথে চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার দাবি করছি। এর সাথে শ্রম আইনের সকল বৈষম্যমূলক ধারা বাতিলের দাবি করছি।একই সাথে অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করা, চা পাতার ওজনে ঠকানো বন্ধ, টিকা পাতার দ্বিগুণ মজুরি দেয়া, পিএফ-এর টাকা নিয়ে দুর্নীতি বন্ধের আহ্বান জানাই।’
কনভেনশন থেকে চা শ্রমিকদের জীবনের এই সার্বিক বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়