Wednesday, July 16, 2025
Homeসিলেট বিভাগসুনামগঞ্জরেমিট্যান্স যোদ্ধা থেকে সফল উদ্যোক্তা : সমাজসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত জাহাঙ্গীর আলম

রেমিট্যান্স যোদ্ধা থেকে সফল উদ্যোক্তা : সমাজসেবায় অনন্য দৃষ্টান্ত জাহাঙ্গীর আলম

 

দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি ::

দীর্ঘদিন প্রবাসজীবনের অভিজ্ঞতা, কঠোর পরিশ্রম ও অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে পুঁজি করে রেমিট্যান্স যোদ্ধা থেকে একজন সফল উদ্যোক্তায় রূপ নিয়েছেন মো. জাহাঙ্গীর আলম। সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার নরসিংপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। তিনি শুধু একজন ব্যবসায়ীই নন, তিনি সমাজ উন্নয়ন ও মানবকল্যাণে নিবেদিতপ্রাণ এক কর্মবীর। লন্ডনে পরিবার-পরিজন নিয়ে দীর্ঘকাল বসবাস করলেও, দেশের প্রতি টান আর মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তীব্র দায়বোধ তাঁকে দেশে ফিরিয়ে আনে।

 

প্রবাসে অর্জিত অর্থ তিনি শুধু নিজের জন্য ব্যবহার করেননি। বরং কোটি কোটি টাকা রেমিট্যান্স দেশে পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিতে অবদান রেখেছেন। দেশে ফিরে নিজের উদ্যোগে গড়ে তুলেছেন স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও মানবসেবামূলক একাধিক প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ছাতকের জাবা মেডিকেল সেন্টার হাসপাতাল। এই হাসপাতালটি বর্তমানে ছাতক-দোয়ারাবাজার অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে হাজারো মানুষকে।

 

শুধু স্বাস্থ্যসেবা নয়, ইসলামী শিক্ষার প্রসারে তিনি সম্প্রতি ছাতকে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘জাবা কুরআনিক গার্ডেন’। একই সাথে ইংরেজি ও কম্পিউটার শিক্ষায় দক্ষ করে তুলতে প্রতিষ্ঠা করেছেন জাবাল ইংলিশ এন্ড কম্পিউটার লার্নিং সেন্টার। এছাড়াও, নার্সিং শিক্ষায় সুযোগ বাড়াতে ‘জাবা নার্সিং ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিয়েছেন। যা এখন প্রক্রিয়াধীন। এটি চালু চলে নার্সিং পেশায় তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থানের নতুন দিগন্তের দ্বার খুলবে।

 

সমাজসেবায় অবদানের অংশ হিসেবে তিনি গঠন করেছেন ‘জাবা ওয়েলফেয়ার ট্রাস্ট’ নামের একটি চ্যারিটেবল ফাউন্ডেশন, যার মাধ্যমে তিনি সহযোগিতা করে চলেছেন স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদসহ নানান জনকল্যাণমূলক কাজে। অসচ্ছল পরিবার, দরিদ্র শিক্ষার্থী কিংবা চিকিৎসা বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়িয়ে তিনি মানবতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

 

বিশেষ করে করোনাকালে কর্মহীন মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে খাদ্য ও চিকিৎসাসেবা দিয়ে মানুষের অন্তরে স্থায়ী জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। তিনি নিজ উদ্যোগে স্থাপন করেছেন অসংখ্য টিউবওয়েল, গৃহহীনদের জন্য তৈরি করেছেন আবাসন, এবং ঈদ উপলক্ষে নিয়মিত বস্ত্র ও অর্থ সহায়তা প্রদান করে আসছেন।

 

দোয়ারাবাজার উপজেলার লামাসানিয়া গ্রামের বাসিন্দা হাবীবুল্লাহ হেলালী বলেন, ‘একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা হিসেবে জাহাঙ্গীর আলম নিজেকে কখনোই বিলাসিতা কিংবা কেবল মুনাফা অর্জনের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখেননি। তিনি দেশে এসে তাঁর উপার্জিত টাকা সমাজ সেবায় ব্যয় করেছেন। মানুষের কল্যাণে সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার করে সমাজের জন্য হয়ে উঠেছেন এক জ্যান্ত অনুপ্রেরণা। তাঁর মতো দেশের অন্যান্য প্রবাসীরাও চাইলে দেশে এসে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন কর্মকান্ডসহ সর্বোপোরি মানুষের কল্যাণে কাজ করতে পারেন।’

 

ছাতক উপজেলার বাসিন্দা মানবাধিকার কর্মী সাকির আমিন বলেন, ‘জাহাঙ্গীর আলম আমাদের দেশের প্রবাসীদের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। লন্ডনের আরাম আয়েশি জীবন ছেড়ে দিয়ে তিনি তাঁর প্রবাস জীবনের উপার্জিত সকল অর্থে দেশে বিনোয়োগ করেছেন। দেশের শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবাসহ জনকল্যাণে অকাতরে কাজ করে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রের উচিত জাহাঙ্গীর আলমের মতোন মানুষের অবদানকে রাষ্ট্রীয় ভাবে স্বীকৃতি দিয়ে উৎসাহিত করা।’

 

রেমিট্যান্স যোদ্ধা থেকে সফল উদ্যোক্তা মোঃ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘দেশের মাটি ও মানুষের প্রতি ভালোবাসা ও দায়বদ্ধতা থেকেই প্রবাস জীবন ছেড়ে দেশে এসে কাজ করে যাচ্ছি। পৃথিবীতে আমরা কেউ চিরজীবন থাকবো না। তাই যতোদিন বেঁচে আছি মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। মৃত্যুর পরেও যাতে মানুষ মনে রাখে সেই লক্ষ্যে কাজ করতে চাই।’

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments