Tuesday, July 15, 2025
Homeসিলেট বিভাগহবিগঞ্জবিনা বিচারে ৩০ বছর কারাগারে, অবশেষে মুক্ত হবিগঞ্জের কনু মিয়া

বিনা বিচারে ৩০ বছর কারাগারে, অবশেষে মুক্ত হবিগঞ্জের কনু মিয়া

নিজস্ব প্রতিবেদক,

 

মামলার বিচার হয়নি, সাজাও হয়নি। তারপরও কারাগারে কেটেছে ৩০ বছর দুই মাস ১৯ দিন। অবশেষে জামিনে কারামুক্ত হলেন হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার সিংহগ্রাম গ্রামের বাসিন্দা কনু মিয়া।

 

মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হবিগঞ্জ জেলা কারাগার থেকে তিনি মুক্ত হয়ে স্বজনদের কাছে ফিরেছেন বলে জানান জেলা লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এম এ মজিদ।

 

তিন দশকের বেশি সময় পর মুক্ত আকাশ আর আলো বাতাস দেখে আবেগ-আপ্লুত হয়ে পড়েন কনু মিয়া। ৩০ বছরের পরবর্তী প্রজন্মের অনেকেই জানের না সিংহ গ্রামে প্রয়াত চিনি মিয়ার ছেলে আছে, যার নাম কনু মিয়া। তিনি এখনো জীবিত আছেন?

 

স্বজনরা জানান, ১৯৯৫ সালের ২৫ মে ঘুমন্ত অবস্থায় মা মেজেস্টর বিবিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেন কনু মিয়া। সেই সময় যুবক কনু মিয়া মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। পরে গ্রামবাসী তাকে আটক করে পুলিশে দেয়।

 

ঘটনার পরদিন আদালতে তিন লাইনের একটি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কনু মিয়া। তারপর থেকে কনু মিয়ার জেল জীবন শুরু। এক দুই বছর নয় একাধারে ৩০ বছর দুই মাস ১৯ দিন কেটেছে অন্ধকার কারাগারে।

 

প্রথমে ভাই-স্বজনরা কনু মিয়াকে দেখতে কারাগারে গেলেও একটা সময় পর আর কেউ তার খোঁজ নেয়নি। পরিবারের অনেক সদস্য ভুলেই গেছেন কনু মিয়া জীবিত আছেন না মারা গেছেন।

 

স্বজনরা যখন কনু মিয়াকে ভুলতে বসেছেন, সেই সময় বিষয়টি নজরে আসে হবিগঞ্জের জেলা লিগ্যাল এইড কর্মকর্তা ও জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ মুহম্মাদ আব্বাছ উদ্দিনের। তিনি কনু মিয়ার আইনি প্রতিকার পাওয়ার উদ্যোগ নেন।

 

প্রথমে মেজেস্টর বিবি হত্যা মামলার বাদী কনু মিয়ার ভাই মনু মিয়ার খোঁজ পান আব্বাছ উদ্দিন। সেইসঙ্গে মনু মিয়ার আরেক ভাই নাসু মিয়ার খোঁজ-খবর নিয়ে তাদেরকে লিগ্যাল এইড অফিসে ডাকেন তিনি। কনু মিয়ার জামিনের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে জেনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন তারা। এ সময় কনু মিয়ার মুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার আশ্বাস দেন সহকারী জজ আব্বাছ উদ্দিন।

 

তিনি বলেন, মানসিক রোগে আক্রান্ত কোনো আসামির জামিনের বিষয়টি সচরাচর অন্য আসামির জামিনের মত নয়। হত্যা মামলার একমাত্র আসামি কনু মিয়া মানসিক রোগে আক্রান্ত হওয়ায় হাই কোর্টের নির্দেশে মামলার বিচারিক কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে।

 

মানসিক রোগে আক্রান্ত আসামির জামিন মঞ্জুর হলে তার নিরাপত্তা, তার দ্বারা আর যাতে কেউ আক্রান্ত না হয় তার প্রাথমিক নিশ্চয়তা, খাদ্য বাসস্থানের নিশ্চয়তা, কোর্টের নির্দেশ মতো আসামিকে হাজির করাসহ নানা বিষয় নিয়ে লিগ্যাল এইডের আইনজীবী এম এ মজিদের সঙ্গে কথা বলেন আব্বাছ উদ্দিন।

 

তিনি বলেন, সব দিক বিবেচনা করে গত ১৪ জুলাই হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতে কনু মিয়ার জামিন আবেদন করেন আইনজীবী এম এ মজিদ। হবিগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ জেসমিন আরা বেগম শুনানি শেষে কনু মিয়ার জামিন মঞ্জুর করেন। এর মধ্য দিয়ে দীর্ঘ ৩০ বছরেরও বেশি সময় পর জামিনে মুক্তি পান কনু মিয়া।

 

আইনজীবী মজিদ বলেন, দীর্ঘদিন পর হলেও জামিনে মুক্ত হয়েছেন কনু মিয়া; যা নিয়ে তার স্বজনরা উচ্ছ্বসিত।

 

কনু মিয়ার ভাই মনু মিয়া বলেন, তাদের ভাই মানসিক ভারসাম্যহীন। দীর্ঘদিন পর তিনি কারাগার থেকে মুক্ত হয়েছেন। এতে সবাই খুশি।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments