দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ আবু সালেহ মোঃ আলা উদ্দিন ।
সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার দোয়ারাবাজার সদর ও দোহালীয়া ইউনিয়নের বাজিতপুর ও দোহালীয়া সহ প্রায় ২০-২৫ টি গ্রামের দীর্ঘ দিন ধরে একটি সেতুর অভাবে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। গ্রামের একমাত্র সংযোগ পথে নেই কোনো পাকা সেতু। বাধ্য হয়ে বাঁশের তৈরি একটি অস্থায়ী সাঁকো দিয়ে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজারো মানুষ।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিশ হাজার মানুষের বাস গ্রামে। রয়েছে ৭টি মসজিদ ও একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। শুধু বাজিতপুর নয়, পার্শ্ববর্তী দোহালীয়া ইউনিয়নের ও পান্ডার, গাঁও ইউনিয়নের এর প্রায় ৫০ হাজার মানুষ ঝুঁকিপূর্ণ এই বাঁশের সাঁকো ব্যবহার করে হাট-বাজার, স্কুল, চিকিৎসা ও অন্যান্য জরুরি প্রয়োজনে যাতায়াত করে থাকেন। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে বাঁশের সাঁকোটি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে ওঠে। অতিরিক্ত স্রোত ও পানির উচ্চতায় সাঁকো হেলে পড়ে। এমনকি প্রায় সময় সাঁকোর কাঠামোও ভেঙে যায়। ফলে শিক্ষার্থী, রোগী, শিশু ও বৃদ্ধদের চলাচলে চরম বিপদ তৈরি হয়।
বাজিতপুর গ্রামের বাসিন্দা জামায়াতে ইসলামীর সহ সভাপতি মোঃ জামাল উদ্দিন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “এতো বছর ধরে এখানে একটা পাকা সেতুর দাবি করে আসছি, কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রতিবার নির্বাচনের আগে আশ্বাস পাই, পরে আর কেউ ফিরেও তাকায় না।”
একই গ্রামের স্কুলছাত্রী তাবাচ্ছুম তামান্না ও মিনহা মাদানী একাডেমীর ছাত্রী জানায়, “সাঁকোটা খুব সরু। ভারসাম্য হারালেই পানিতে পড়ে যেতে হয়। বৃষ্টির সময় সাঁকো ভিজে পিচ্ছিল হয়ে পড়ে, তখন স্কুলে যাওয়া আরও ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠে।”
বাংলাদেশ জামাতে ইসলামী দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের এক নং ওয়ার্ডের সভাপতি আবু সালেহ মোঃ আলা উদ্দিন বলেন, “এই অঞ্চলের জন্য এটি একটি চরম অবিচার। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রতিদিন বাঁশের সাঁকো পার হচ্ছে সবাই। আমরা বারবার দাবি জানিয়েছি, মানববন্ধন করেছি। কিন্তু দেখার কেউ নেই।” বাজিতপুর গ্রামের মেম্বার জুয়েল মিয়া বলেন
“রোগী নিয়ে সাঁকো পার হতে গেলে খুব বিপদ হয়। বয়স্ক লোকজন আর স্ট্রেচার নিয়ে আসা-যাওয়া প্রায় অসম্ভব। এখানে একটা সেতু না থাকায় আমাদের ব্যবসা, চিকিৎসা, সব কিছুতেই সমস্যা হচ্ছে।”
বাজিতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক গৌর চান্দ বলেন “সেতু না থাকায় অনেক ছাত্র-ছাত্রী বর্ষার মৌসুমে স্কুলে আসতে পারে না। এতে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বড় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।”
স্থানীয়দের অভিযোগ, বিগত ১৫ বছর আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে একের পর এক উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ হলেও বাজিতপুর ও আশপাশের গ্রামের সেতু সমস্যার কোনো সমাধান হয়নি। বার বার আশ্বাস দিয়েও কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি।
দোয়ারা বাজার উপজেলার ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আব্দুল হামিদ চেয়ারম্যান বলেন, ‘এখানে একটি গার্ডার ব্রিজ নির্মাণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। আমি আশাবাদী খুব শিঘ্রই এটি বাস্তবায়ন হবে।’
দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরূপ রতন সিংহ জানান, ‘এবিষয়ে আমার জানা নেই। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখব এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সাথে এবিষয়ে আলাপ করব।’