শাবিপ্রবি প্রতিনিধি,
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার পরিস্থিতি ক্রমেই উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে বলে অভিযোগ তুলেছে শিক্ষার্থী সংগঠন ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’। সম্প্রতি ক্যাম্পাসে ছিনতাই, অনলাইন হয়রানি, যৌন নিপীড়ন, টিউশন মিডিয়াকে ঘিরে ব্ল্যাকমেল, আবাসিক হলে হামলা, শিক্ষক লাঞ্ছনা এবং সাংগঠনিক সহিংসতাসহ একাধিক ঘটনায় শিক্ষার্থীদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছে।
শুধু ক্যাম্পাসেই নয়, সিলেট শহরের সিএনজি ভাড়া নৈরাজ্যও শিক্ষার্থীদের নিত্যদিনের দুর্ভোগের অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে, শিক্ষার্থীদের অধিকার ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে ৮ দফা দাবি জানিয়েছে ‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’।
তাদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে— বিশ্ববিদ্যালয়ে মানবাধিকার ও আচরণবিধি সংক্রান্ত একটি সুস্পষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন ও তা সকল শিক্ষার্থীর মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে প্রচার করা। একইসঙ্গে, একটি ‘Student Grievance Box’ বা ‘Human Rights Complaint Cell’ চালু করে শিক্ষার্থীদের জন্য নিরাপদ ও গোপনীয় অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা রাখার দাবি জানানো হয়েছে, যাতে দ্রুত প্রতিকার নিশ্চিত করা যায়। এছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে ‘Student Rights’ নামে একটি পৃথক সেকশন যুক্ত করার আহ্বান জানানো হয়েছে, যাতে শিক্ষার্থীরা সহজেই তাদের অধিকার সম্পর্কে জানতে পারে।
র্যাগিং বন্ধে প্রাতিষ্ঠানিক নীতিমালা প্রণয়ন ও তা হল ও একাডেমিক ভবনে দৃশ্যমানভাবে প্রচারের দাবি জানানো হয়েছে। র্যাগিংয়ের প্রমাণিত ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর একাডেমিক ট্রান্সক্রিপ্টে “Disciplinary Action Taken for Misconduct” উল্লেখ করার বিষয়টিও বিবেচনায় নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।
তারা আরও জানিয়েছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় ফেক আইডির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের, বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীদের, হয়রানির ঘটনায় প্রশাসনের সক্রিয় হস্তক্ষেপ এবং দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ অত্যন্ত জরুরি। ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহে পর্যাপ্ত লাইটিং ও সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন এবং তার মানোন্নয়নের মাধ্যমে নিরাপত্তার জোরদারের দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, সিএনজি ভাড়াব্যবস্থার নৈরাজ্য রোধে প্রশাসন যেন স্থানীয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে যৌক্তিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তাও উল্লেখ করেছে সংগঠনটি। এছাড়া, টিউশন মিডিয়া সিন্ডিকেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ব্ল্যাকমেল ও প্রতারণা থেকে রক্ষায় প্রশাসনিক নজরদারি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবিও উত্থাপন করা হয়েছে।
‘সোচ্চার স্টুডেন্ট নেটওয়ার্ক’ বিশ্বাস করে, প্রশাসন এই যৌক্তিক ও সময়োপযোগী দাবিগুলো যথাযথ গুরুত্ব দিয়ে দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেবে। তাদের মতে, একটি নিরাপদ, মানবিক ও শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস নিশ্চিত করতে হলে প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতা এবং আস্থাভিত্তিক সম্পর্ক গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি।