Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
একই বৃত্তে আটকে আছে চা-শ্রমিকের জীবন - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Thursday, May 1, 2025
Homeসিলেট বিভাগমৌলভীবাজারএকই বৃত্তে আটকে আছে চা-শ্রমিকের জীবন

একই বৃত্তে আটকে আছে চা-শ্রমিকের জীবন

নিজস্ব প্রতিবেদক,

প্রকৃতির সবুজ চাদরে মোড়ানো চা-বাগান শুধু ইতিহাস ও ঐতিহ্যের স্বাক্ষী নয়। প্রায় দেড়শত বছর ধরে সেখানে বসবাসরত লাখ লাখ চা-শ্রমিকদের ঘামে শ্রমে প্রতিবছর কোটি কোটি কেজি চা উৎপাদন হলেও আজও দারিদ্রতার সঙ্গে সংগ্রাম করতে হচ্ছে তাদের। কিন্তু তাদের মৌলিক অধিকার, নিজস্ব ভূমি থেকে শুরু করে জীবনযাত্রার কোন বদল হয়নি আজও। অনেক ন্যায্য দাবি দাওয়া থেকে আজও তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।

 

চা দেশের চাহিদা মিটিয়ে রপ্তানি হচ্ছে বিদেশেও। সেই শিল্পে নিরলসভাবে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন দেশের মোট নিবন্ধিত ১৬৩টি চা-বাগানের লক্ষাধিক চা শ্রমিক। তাদের পরিবার পরিজন মিলিয়ে চা-শ্রমিক জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ১০ লাখের ওপরে।

 

এদিকে বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়নের তথ্যমতে সারাদেশে কর্মরত চা-শ্রমিকদের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার। তার মধ্যে নারী শ্রমিকের সংখ্যা প্রায় ৬০ শতাংশ। দেশের মোট চা-বাগানের মধ্যে ৯২টি বাগান রয়েছে মৌলভীবাজার জেলায়। এসব চা-বাগানে নিয়মিত অনিয়মিত মিলিয়ে কাজ করছেন প্রায় ৯০ হাজার চা-শ্রমিক। তাদের মধ্যে বাগানে পাতা তোলার কাজ করেন নারী শ্রমিকরা। আর ফ্যাক্টরিসহ অন্যান্য কাজ করেন পুরুষর।

 

এদিকে প্রতি বছর মে দিবস আসে আবার চলেও যায়। কিন্তু রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে ভিজে কুয়াশা কিংবা তীব্র শীতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা চায়ের উৎপাদন ও লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখলেও এখনও মৌলিক অধিকার বেতন বৈষম্যসহ নানা বঞ্চনার শিকার হতে হচ্ছে তাদের।

 

অপরদিকে নানা আন্দোলন সংগ্রামের পর চা শ্রমিকদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বেড়ে দৈনিক ১৭৮ টাকা করা হয়েছে। বাগান থেকে নিয়মিত শ্রমিকদের যে রেশন দেওয়া হয়, সেটিও অপ্রতুল। তা দিয়ে এক একটি পরিবারের ৫ থেকে ৬ জনের সংসার চলাই দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানান ভাড়াউড়া চা-বাগানের কর্মরত চা-শ্রমিক অনিতা তাঁতী।

 

এদিকে কর্মক্ষেত্রে নারীদের টয়লেট সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। একেকটি সেকশনে (পৃথক পৃথক আবাদ) বৃষ্টির সময় ছাউনি থাকে না। ফলে বৃষ্টি গায়ে মেখেই কাজ করতে গিয়ে ঠান্ডা জনিত নানা রোগ-শোকে ভূগতে হয়। চিকিতসা বলতে বাগানের ডিসপেনসারিতে প্যারাসিটামল আর দুই একটা ওষুধ ছাড়া তেমন কিছু পাওয়া যায় না এমন অভিযোগ করেন বাংলাদেশ চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি পংকজ কন্দ।

 

চা-শ্রমিক ইউনিয়ন কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনি সম্পাদক বিজয় হাজরা বলেন, জীবনযাপনের মৌলিক অধিকার যেন চা-শ্রমিকদের বেলায় অনেকটাই স্বপ্নের মতো। অনেক বাগানে কর্তৃপক্ষের দেওয়া তাদের ঘরগুলোর অবস্থাও বেহাল। অপরদিকে পুরুষরা অধিকাংশই বেকার। আর যারা নিয়মিত কাজ করছেন তারা কোম্পানি থেকে যা পান সেটা দিয়ে চলে না সংসার। এ নিয়ে তাদের অভিযোগের শেষ নেই। তারা চা পাতা তুলে যে টাকা পান সেই খরচ দিয়ে সন্তানদের পড়াশুনা, নিজেদের চিকিৎসা, দৈনন্দিন জীবনের খরচ চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

 

এদিকে চা-শ্রমিক নেতারা জানান, তাদের মৌলিক দাবির অন্যতম নারী শ্রমিকদের সুরক্ষাসহ ভূমির অধিকার, বেতন বৃদ্ধিসহ বিভিন্ন দাবি দাওয়া নিয়ে তাদের সংগ্রাম অব্যাহত আছে। তাছাড়া এসব দাবি দাওয়া নিরশনে নতুন সরকার আরও আন্তরিক হবে এমনটাই প্রত্যাশা তাদের।

 

এদিকে চা-শ্রমিকদের দাবি দাওয়া ও সমস্যা নিরসনে শ্রীমঙ্গলে নেই কোন শ্রম আদালত। যেটা নামে মাত্র চালু ছিল সেটাও বন্ধ হয়ে গেছে কয়েক বছর আগে। ফলে স্থানীয় ভাবে শ্রম আদালত না থাকায় নানা ধরনের আইনি সুরক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে এখানকার চা শ্রমিকরা। তবুও তাদের দাবি দাওয়াসহ নানা বিষয়ে কাজ করে যাচ্ছে শ্রীমঙ্গলে স্থাপিত বিভাগীয় শ্রম অধিদপ্তর এমনটা জানালেন চা শ্রম অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোহাব্বত হোসেন।

 

এ ছাড়াও এ অঞ্চলে আরও কিছু নৃগোষ্ঠীর বাস রয়েছে, যারা মূলত চা চাষ নয়, অন্য পেশা বা কাজে জড়িত। তার মধ্যে মণিপুরী জনগোষ্ঠী বয়ন শিল্পে অবস্থান ক্রমেই সুসংহত করছে। খাসিয়া বা খাসি নৃগোষ্ঠী কমলা, তেজপাতা, জুম ও পান চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করে। ত্রিপুরা জনগোষ্ঠী জুম চাষ, পাত্র সম্প্রদায় কৃষি কাজ, গারো গোষ্ঠী জুম চাষ ও পশু পালন, হাজং সম্প্রদায় কাপড় বোনা ও কৃষিকাজ এবং হালাং জনগোষ্ঠী জুম চাষ করে থাকেন।

 

এখানে বসবাস করছে বাংলাদেশের একমাত্র মুসলিম ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ‘পাঙাল’; যারা ধর্মীয় ভাবাবেগে মুসলমান হলেও সাংস্কৃতিক বিচারে মণিপুরীদের সঙ্গে তাদের সামঞ্জস্য বেশি। সবমিলিয়ে সিলেট অঞ্চলে প্রায় ৩৫টি ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর বসবাস। এর মধ্যে অন্তত ২৬টিই চা-বাগানকেন্দ্রিক। অন্য নৃগোষ্ঠীর লোকজন কিছুটা অগ্রসর হলেও চা-কেন্দ্রিক গোষ্ঠীর অবস্থা শোচনীয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments