স্টাফ রিপোর্টার,
সুনামগঞ্জের শাল্লায় জোর করে জলমহালের মাছ লুটপাটের পর এবার হাওর থেকে জমির পাকা ধান কেটে নেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) রাতে থানা থেকে মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে উপজেলার বাহারা ইউনিয়নের সুলতানপুর গ্রামের কাছে ছায়ার হাওরে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ উঠেছে উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান জাকির হোসেনের ভাতিজা উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক আলতাব হোসেন একই গ্রামের (সুলতানপুর) যুবলীগ নেতা তকবির হোসেন ও তার ভাই নবীর হোসেনের প্রায় ১৫ একর জমির পাকা ধান কেটে নিয়েছেন। তকবির হোসেন উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক হিসেবে পরিচিত থাকলেও তার কোন পদ নেই বলে জানিয়েছেন। ৫ আগস্টের পর তিনি এলাকা ছাড়া।
তকবির হোসেন জানান, শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করেও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। থানার মাত্র ১ কিলোমিটার দূরে জমির অবস্থান হলেও পুলিশকে জানিয়ে ধান রক্ষা করা সম্ভব হয়নি। আজ সকালে পুলিশ গ্রামে গিয়েছিল। খবর পেয়ে আজ সকালে জমি পরিদর্শন করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা।
জানা যায়, সুলতানপুর গ্রামের তকবির হোসেনের পরিবার আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। একই গ্রামের আলতাব হোসেনের পরিবার বিএনপির রাজনীতি করেন। রাজনৈতিক কারণে দুই পরিবারের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। সম্প্রতি হাওরের ধান পাকার সময় আসলে তকবির হোসেনদের জমির ধান না কাটতে হাওরের হারভেস্টার চালকদের নিষেধ করেন আলতাব হোসেন। পাশাপাশি জোর করে তাদের জমির ধান কাটবে বলে ঘোষণা দেয়।
বিষয়টি জানার পর শুক্রবার সকালে থানায় অভিযোগ করেন তকবিরের ছোট ভাই নবীর হোসেন। এরপর রাতেই যুবদল নেতা আলতাব হোসেন ও ভাইদের নেতৃত্বে কয়েকটি ভারভেস্টার দিয়ে প্রায় ১৫ একর জমির ১২০০ মণ ধান কেটে নিয়ে যায়। ধান কাটার সময় বার বার পুলিশকে জানালে পুলিশ কোন ভূমিকা নেয়নি।
জমির মালিক যুবলীগ নেতা তকবির হোসেন বলেন, বিএনপি নেতা জাকির হোসেনের ইন্ধনে তার ভাতিজা যুবদল নেতা আলতাব ও তার ভাইরা আমাদের প্রায় ১৫ একর জমি থেকে ধান কেটে নিয়ে গেছে। শুক্রবার সকালেই ছোট ভাইকে দিয়ে থানায় অভিযোগ করিয়েছিলাম। জমি থেকে থানার দূরত্ব মাত্র ১ কিলোমিটার। ধান কাটার সময় পুলিশকে বারবার ফোনও করেছিলাম। কিন্তু পুলিশ আসেনি, প্রায় ১৫ একর জমি থেকে ১২০০ মণ ধান কেটে নিয়ে গেছে এরা।
অভিযোগের বিষয়ে যুবদল নেতা আলতাব হোসেনের সঙ্গে কথা চাইলে তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তাঁর বড় ভাই দলিল লিখক আনোয়ার হোসেন বলেন, সব মিথ্যা ও ভূয়া কথা। আমরা কারো জমির ধান কাটিনি। আমাদের ফাসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ করছে। পুলিশ এসে তদন্ত করে গেছে।
উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাকির হোসেন বলেন, ধান কাটার বিষয়ে জানি না, আমি থানা সদরে থাকি। জমি তার ভাতিজাদের দাবি করে বললেন, ৮ কেদার জমি তকবিরের দাদার কাছ থেকে অনেক আগে আনোয়ারের বাবা কিনেছিল। তকবিররা গত ১০ বছর ধরে দখলে রেখেছে, এখন এক বছর ধান কাটতেই সমস্যা? আমরা অনেক নির্যাতন সহ্য করেছি।
শাল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ৮ কেদার জমির মালিকানা নিয়ে দীর্ঘদিকিন্তু আবারও আপিল করা হয়েছে। তকবিরের ভাইকে ধান কাটার জন্য বলেছিলাম। প্রয়োজনে পুলিশ পাঠিয়ে সহযোগিতার কথাও বলেছি। রাতের আধারে ওরা কেটে নিয়েছে। রাতে ধান কাটার অভিযোগ পাওয়ার পরপর আমরা গিয়েছিলাম। কিন্তু এর আগেই হয়ত অনেক জমির ধান কেটেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, খবর পেয়ে ও উপজেলা কৃষি অফিসারকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। ৫-৭ একর জমির ধান কাটা দেখা গেছে। দুই পক্ষের মধ্যে নাকি দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ রয়েছে। বিষয়টি দেখার জন্য থানার ওসিকেও বলেছি।