নিজস্ব প্রতিবেদক,
এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শুরু হচ্ছে আগামীকাল বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল)। এদিন সকাল ১০টায় পরীক্ষা শুরু হবে, যা চলবে দুপুর ১টা পর্যন্ত। এ পরীক্ষায় অংশ নিতে ফরম পূরণ করেছেন ১৯ লাখ ২৮ হাজার ২৮১ জন শিক্ষার্থী। সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে পরীক্ষা অনুষ্ঠানে সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার।
শিক্ষা বোর্ডগুলোর প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী—প্রথমদিনে দেশের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে বাংলা প্রথমপত্র পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাদরাসা বোর্ডের অধীন কোরআন মাজিদ ও তাজবিদ এবং কারিগরি বোর্ডের বাংলা-২ (দাখিল ও ভোকেশনাল) পরীক্ষা হবে। সব বোর্ডের প্রথমদিনের পরীক্ষা সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
জানতে চাইলে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. খন্দোকার এহসানুল কবির বলেন, ‘পরীক্ষা গ্রহণে যা যা প্রস্তুতি দরকার, তা করা শেষ। পরীক্ষায় প্রশ্নফাঁসের কোনো সুযোগ নেই। কেউ যদি প্রশ্নফাঁসের গুজব ফেসবুকে বা অন্য কোনো সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে, তাকে আইনের আওতায় আনা হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা দিচ্ছে। প্রয়োজনে সেনাবাহিনীর সদস্যরাও কেন্দ্রের নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করবেন।’
৩০ মিনিট আগে কেন্দ্রে প্রবেশের নির্দেশ:
পরীক্ষা শুরুর কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে সব পরীক্ষার্থীকে অবশ্যই পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ করে আসন গ্রহণ করতে হবে। অনিবার্য কারণে কোনো পরীক্ষার্থী নির্ধারিত সময়ের ৩০ মিনিটের পর পরীক্ষাকেন্দ্রে এলে রেজিস্টারে নাম, রোল নম্বর, প্রবেশের সময় ও বিলম্বের কারণ উল্লেখ করতে হবে।
বিলম্বে আসা পরীক্ষার্থীদের তালিকা প্রতিদিন কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব সংশ্লিষ্ট বোর্ডকে অবহিত করবেন। তবে পরীক্ষা শুরুর ৩০ মিনিট পর কোনো পরীক্ষার্থীকে পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশ বা পরীক্ষা গ্রহণে অনুমতি দেওয়া যাবে না।
মোবাইল ফোন-ঘড়ি-ক্যালকুলেটর ব্যবহার নিষেধ:
কেন্দ্রসচিব ছাড়া পরীক্ষাকেন্দ্রে অন্য কেউ মোবাইল ফোন ও মোবাইল ফোনের সুবিধাযুক্ত ঘড়ি, কলম বা অননুমোদিত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার করতে পারবেন না। কেন্দ্রের কেন্দ্রসচিব ছবি তোলা ও ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধাবিহীন একটি সাধারণ (ফিচার) ফোন ব্যবহার করতে পারবেন। অননুমোদিত ফোন/ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে।
কোন বোর্ডে কত পরীক্ষার্থী:
২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষায় ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীনে মোট পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১৪ লাখ ৯০ হাজার ১৪২ জন। এর মধ্যে ছাত্র ৭ লাখ ১ হাজার ৫৩৮ ও ছাত্রী ৭ লাখ ৮৮ হাজার ৬০৪ জন। ৯টি বোর্ডে পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ২ হাজার ২৯১টি। ১৮ হাজার ৮৪টি স্কুলের শিক্ষার্থীরা এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
বাংলাদেশ মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে এবার পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২ লাখ ৯৪ হাজার ৭২৬ জন। তাদের মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৫০ হাজার ৮৯৩ ও ছাত্রী ১ লাখ ৪৩ হাজার ৮৩৩ জন। পরীক্ষা কেন্দ্রের সংখ্যা ৭২৫টি। পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে ৯ হাজার ৬৩টি মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।
এছাড়া বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ১ লাখ ৪৩ হাজার ৩১৩ জন। এর মধ্যে ছাত্র ১ লাখ ৮ হাজার ৩৮৫ জন এবং ছাত্রী ৩৪ হাজার ৯২৮ জন।
গুজব-প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে ৩৫ দিন কোচিং বন্ধ
এসএসসি পরীক্ষা ঘিরে প্রশ্নফাঁসের গুজব ও প্রশ্নফাঁস ঠেকাতে পরীক্ষা শুরুর দিন, অর্থাৎ বৃহস্পতিবার থেকে সারাদেশের সব কোচিং সেন্টার বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিয়েছে সরকার। লিখিত পরীক্ষা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এ নির্দেশনা বলবৎ থাকবে।
পাশাপাশি পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে কোনো ধরনের ফটোকপি মেশিন চালু রাখা যাবে না। তাছাড়া এসএসসি পরীক্ষা চলাকালে সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গত ১৬ মার্চ ‘এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার জাতীয় মনিটরিং ও আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভা’ অনুষ্ঠিত হয়। সভায় শিক্ষা উপদেষ্টা চৌধুরী রফিকুল (সি আর) আবরার এ সিদ্ধান্তের কথা জানান।
ওইদিন শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, এসএসসি পরীক্ষাগ্রহণ বিশাল কর্মযজ্ঞ, যার জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি নিতে হয়। এবারের এসএসসি পরীক্ষায় নানামুখী চ্যালেঞ্জ রয়েছে। অসাধু চক্রের যেকোনো অপতৎপরতার প্রতি নজর রাখতে হবে।
সভায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়ের বলেন, প্রশ্নফাঁসের গুজব প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিতে হবে। পরীক্ষা চলাকালীন দিনগুলোতে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশপাশে ফটোকপি মেশিন বন্ধ রাখার ব্যবস্থা নিতে হবে। পরীক্ষা শুরু থেকে শেষ দিন পর্যন্ত দেশের সর্বত্র সব কোচিং সেন্টার বন্ধ থাকবে।
নকলমুক্ত পরীক্ষা নিশ্চিতে কঠোর মাউশি:
নকলমুক্তভাবে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা শেষ করার জন্য মাঠপর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে চূড়ান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর (মাউশি) এক চিঠিতে গত ৭ এপ্রিল এ নির্দেশনা দেয়।
চিঠিতে বলা হয়েছে, ১০ এপ্রিল থেকে অনুষ্ঠিতব্য ২০২৫ সালের এসএসসি পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে গত ১৯ মার্চ একটি স্মারকপত্র পাঠানো হয়। স্মারকপত্রের মর্মানুযায়ী—পরীক্ষা সুষ্ঠু, নকলমুক্ত ও ইতিবাচক পরিবেশে অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে অধিদপ্তরের আওতাধীন সংশ্লিষ্ট সবাইকে সর্বাত্মক সহযোগিতা দেওয়ার জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো।
নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে নির্দেশ:
এদিকে, পরীক্ষা চলাকালীন সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যবস্থা নিতে বিদ্যুৎ বিভাগকে অনুরোধ জানিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। বিদ্যুৎ বিভাগও এ নিয়ে মাঠপর্যায়ে নির্দেশনা পাঠিয়েছে।
অন্যদিকে গুজব প্রতিরোধে তাৎক্ষণিক জনসচেতনতার জন্য প্রচারের ব্যবস্থা নিতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সুষ্ঠুভাবে বজায় রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকেও অনুরোধ করা হয়।
এছাড়া শিক্ষা বোর্ড থেকে দূরবর্তী কেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করে উত্তরপত্র দ্রুততম সময়ে বোর্ডে পৌঁছানোর জন্য ডাক বিভাগকে অনুরোধ জানানো হয়। বোর্ডের নিকটবর্তী কেন্দ্রগুলো থেকে উত্তরপত্র দ্রুততম সময়ে সরাসরি বোর্ডে পৌঁছানোর ব্যবস্থা করতে হবে।