লাইফস্টাইল:
এপ্রিল মাসের প্রথম দিনকে বলা হয় ‘এপ্রিল ফুলস ডে’, যেখানে মানুষ একে অপরকে ঠকিয়ে মজার মুহূর্ত তৈরি করে। যদিও অনেক দেশে এটি জনপ্রিয়, তবে বাংলাদেশসহ মুসলিম দেশগুলোতে এটির প্রতি মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
মুসলমানদের ট্র্যাজেডির ধারণা:
একটি প্রচলিত বিশ্বাস রয়েছে যে পনেরো শতকের শেষদিকে স্পেনের গ্রানাডায় রাজা ফার্দিনান্দ ও রানি ইসাবেলা মুসলমানদের নির্মমভাবে হত্যা করেন এবং সে ঘটনাটি ঘটেছিল ১ এপ্রিল। তবে ইতিহাসবিদরা এ দাবির সত্যতা পাননি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ছিদ্দিকুর রহমান খান বলেন, গ্রানাডার পতন হয়েছিল ২ জানুয়ারি ১৪৯২ সালে এবং এটি ছিল আনুষ্ঠানিক চুক্তির মাধ্যমে। তাই ‘এপ্রিল ফুল’-এর সঙ্গে মুসলমানদের ট্র্যাজেডির কোনো ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই।
তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই শিক্ষক বলছেন, সেসময় ফার্দিনান্ড ও ইসাবেলা মুসলমানদের উপর নির্যাতন করেছে, ইহুদিদের উপরও করেছে, এ ঘটনা সত্যি। কিন্তু এপ্রিল ফুলের সাথে এ ট্র্যাজেডির ঘটনার সম্পৃক্ততার কোনো সত্যতা খুঁজে পাওয়া যায় নি।
এপ্রিল ফুলের প্রকৃত উৎস সম্পর্কিত ধারণা—
ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের প্রভাব:
এপ্রিল ফুল উদযাপনের প্রকৃত উৎস হিসেবে ক্যালেন্ডার পরিবর্তনের প্রভাবই সর্বাধিক প্রচলিত। ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক, ব্রিটানিকা, হিস্ট্রিসহ বেশ কিছু ওয়েবসাইট বলছে এপ্রিল ফুলের উৎপত্তি হয় ফ্রান্সে। আর সেটা ১৫শ’ শতকে, যখন ক্যালেন্ডার পরিবর্তন ঘটে।
ক্যালেন্ডার পরিবর্তন হওয়ার আগে পর্যন্ত জুলিয়াস সিজার প্রবর্তিত জুলিয়ান ক্যালেন্ডার ব্যবহার হয়ে আসছিল। যে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ঋতুর সঙ্গে মিল রেখে নতুন বছর শুরু হতো এপ্রিলের ১ তারিখ।
কিন্তু ফ্রান্স তখন গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডার গ্রহণ করে। যে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পহেলা জানুয়ারি ধরা হয় বছরের প্রথম দিন। তবে তখন আধুনিক যুগ না হওয়ায় এ খবর অনেকের কাছেই সময়মতো পৌঁছায়নি। ফলে কিছু মানুষ পুরনো জুলিয়ান ক্যালেন্ডার অনুসরণ করে এপ্রিলের ১ তারিখ নববর্ষ উদযাপন চালিয়ে যান। আর তাই যারা তখন পহেলা জানুয়ারি নতুন বছর উদযাপন করতে শুরু করেছিল, তারা এপ্রিলের ১ তারিখ নববর্ষ উদযাপনকারীদের ‘এপ্রিল ফুল’ বলে ব্যঙ্গ করতো।
সাহিত্য ও ঐতিহাসিক সংযোগ:
অনেকে মনে করেন, জেফ্রি চসারের ‘দ্য ক্যান্টারবেরি টেলস’ গ্রন্থে ‘মার্চের ৩২তম দিন’ উল্লেখ করার ফলে এপ্রিল ফুলের ধারণা তৈরি হয়। তবে এটি বিতর্কিত।
প্রকৃতির খেলা:
মার্চের শেষ দিকে বসন্তের আগমনে আবহাওয়া হঠাৎ পরিবর্তন হয়, যা অনেককে বিভ্রান্ত করে। এটি থেকে এপ্রিল ফুলের ধারণা আসতে পারে।
প্রাচীন রোমান উৎসব ‘হিলারিয়া’:
প্রাচীন রোমে দেবী সাইবেলের অনুসারীরা ২৫ মার্চ ‘হিলারিয়া’ উৎসব পালন করত, যেখানে তারা ছদ্মবেশ ধারণ করে একে অপরকে মজা করত। অনেকে মনে করেন, এখান থেকেই এপ্রিল ফুলের ধারণা এসেছে।
আধুনিক যুগের এপ্রিল ফুল:
এপ্রিল ফুলের সবচেয়ে বিখ্যাত ঠকানোর ঘটনা ঘটেছে ১৯৫৭ সালে, যখন বিবিসি একটি ভুয়া সংবাদ প্রচার করে যে সুইজারল্যান্ডে গাছে স্প্যাগেটি ফলছে। অনেক মানুষ সত্যি ভেবে স্প্যাগেটি গাছ কেনার উপায় জানতে চেয়েছিল।
ভুল তথ্য ও বর্তমান বাস্তবতা:
যদিও এপ্রিল ফুলের জন্ম কোনো অমানবিক ঘটনা থেকে হয়নি, তবে এপ্রিল ফুলের নামে হাসি ঠাট্টা করতে গিয়ে অনেকর নামে ভুয়া তথ্য ছড়ানো বা কাউকে বিভ্রান্ত করা আন্যদের পাশাপাশি এখন একটি সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বিশেষ করে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে। তাই এ ধরনের ঠাট্টার সময় অতিরিক্ত সতর্কতা প্রয়োজন। সীমা লঙ্ঘন না হয় এ বিষয়ে অবশ্যই খেয়াল রাখা উচিত।
এপ্রিল ফুল মজার হলেও এর মধ্যে চাতুরি, প্রতারণা ও বিভ্রান্তি লুকিয়ে থাকতে পারে। অতএব, আমাদের উচিত আনন্দ উদযাপনের পাশাপাশি সতর্ক থাকা এবং অন্যকে অসম্মান বা ক্ষতির শিকার না করে কিভাবে মজার ছলে দিনটি উদযাপন করা যায় এ বিষয়ে সতর্ক থাকা।