লাইফস্টাইল ডেস্ক::
দীর্ঘ এক মাস রোজার পরে চাঁদ রাতে খুশির বার্তা জানান দেয় ঈদ এসেছে। ঈদ মুসলিম উম্মাহর জন্য অত্যন্ত আনন্দ ও খুশির দিন। এই খুশির দিনেও আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় রয়েছে কিছু কাজ। চলুন জেনে নেওয়া যাক আমাদের করণীয় ও বর্জনীয় কাজগুলো সম্পর্কে।
করণীয়:
চাঁদ রাত থেকেই যেহেতু ঈদের আমেজ শুরু হয় তাই সে রাতে তারাবির নামাজ না থাকলেও সাধ্যমতো নফল নামাজ, কোরআন তেলাওয়াত ও জিকির করা যায়। আবু উমামা হতে বর্ণিত, ‘রসূল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি দুই ঈদের রাতে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ইবাদত করবে তার অন্তর ওই দিন মরবে না, যেদিন অন্তরসমূহ মুর্দা হয়ে যাবে।’(ইবনে মাজাহ, ১৭৮২)
ঈদের দিন ভোরে গোসল করে পবিত্রতা অর্জন করা উত্তম। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস বলেন, ‘নবী করিম (সা.) ঈদুল ফিতর ও আজহার দিন গোসল করতেন।’(বুখারি, ১/১৩০)
গোসলের পর উত্তম পোশাক পরিধান করতে হবে। কারণ উত্তম পোশাক পরিধান করা সুন্নত। ঈদগাহে যাবার আগে পানাহার করতে হবে। আনাস (রা.) বলেন, ‘নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন সকালে কিছু খেজুর খেতেন। অন্য এক বর্ণনা মতে, তিনি বিজোড় সংখ্যক খেজুর খেতেন।’ (বুখারি, ৯৫৩)
ঈদগাহে যাবার সময় ঈদুল ফিতরের দিন তুলনামূলক নিম্নস্বরে তাকবীর পাঠ করা সুন্নত। ইমাম জুহরি থেকে বর্ণিত, ‘নবীজি (সা.) ঈদুল ফিতরের দিন তাকবীর পাঠ করতে করতে ঈদগাহে গমন করতেন। নামাজ পড়া পর্যন্ত এই তাকবীর অব্যাহত রাখতেন। নামাজ শেষ হলে তাকবীর পাঠ বন্ধ করতেন।’ (সিলসিলাতুল আহাদিস আস-সহিহা, ১৭১)
ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া সুন্নত। আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘রসূল (সা.) হেঁটে ঈদগাহে গমন করতেন ও হেঁটে ঈদগাহ থেকে ফিরতেন।’ (তিরমিজি, ১২৯৫) ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া যেমন সুন্নত তেমনি আসা-যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করাও সুন্নত। জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ বলেন, ‘নবীজি (সা.) ঈদগাহে আসা-যাওয়ার জন্য রাস্তা পরিবর্তন করতেন।’ (বুখারি, ৯৮৬)
ঈদগাহে যাবার সময় ছোট শিশুদের সঙ্গে নেয়া উচিত এবং ঈদের দিন একে অপরের সাক্ষাতের সময় শুভেচ্ছা বিনিময় করা সুন্নত। হাদিসে বর্ণিত আছে, জুবায়ের বিন নুফাইর বলেন, ‘নবীজি (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিন পরস্পর সাক্ষাৎ হলে বলতেন তাকাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিন কুম।’ (ফাতহুল কাদির, ২/৫১৭)
ঈদের নামাজ শেষে মনোযোগ সহকারে খুতবা শোনা উচিত। আব্দুল্লাহ বিন সায়িব বলেন, ‘নবীজি (সা.) এর সঙ্গে ঈদগাহে উপস্থিত হলাম। এরপর তিনি আমাদের নামাজ পড়িয়েছেন। অতঃপর তিনি বললেন আমরা নামাজ শেষ করেছি। যার ইচ্ছা সে খুতবা শুনবে আর যার ইচ্ছা সে চলে যাবে।’ (ইবনে মাজাহ, ১০৭৩)
বর্জনীয় :
ঈদুল ফিতরের দিন অনেকেই বিজাতীয় সংস্কৃতি পালন করে যা মোটেও কাম্য নয়। বিজাতীয় সংস্কৃতি পালনে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ইবনে ওমর (রা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো কওমের অনুসরণ ও অনুকরণ করবে সে তাদের দলভুক্ত হবে।’(আবু দাউদ, ৩৯৮৯)
অনেকে আবার ঈদের দিন কবর জিয়ারত করে যা সম্পূর্ণ বিদয়াত। আমরা অধিকাংশ মানুষ ঈদের দিন গান-বাজনার আসরে ডুবে থাকি। কিন্তু ইসলামি শরীয়তে তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। হাদিসে এসেছে, রসূল (সা.) বলেছেন, ‘আমার উম্মতের মাঝে এমন একটা দল পাওয়া যাবে যারা ব্যভিচার, রেশমি পোশাক, মদ ও বাদ্যযন্ত্রকে হালাল মনে করবে।’ (বুখারি, ৫৫৯০)
ঈদ মানে আনন্দ আর ঈদ মানে খুশি। সেই আনন্দ করতে গিয়ে আমাদের খেয়াল রাখতে হবে যে শরীয়তের বিধান যেন লঙ্ঘিত না হয়। আমরা শালীন পোশাক পরব এবং গয়রত হীন চলার চেষ্টা করবো না। ঈদের দিনকে ঘিরে নানা অপচয় হয়ে থাকে আমাদের সেগুলোও পরিহার করতে হবে। আমাদের সকলকে ইসলামের আদর্শে ঈদ উদযাপন করা বাঞ্ছনীয়।