Wednesday, March 26, 2025
Homeলিড সংবাদভারতীয় পণ্যে সয়লাব সিলেটের ঈদবাজার

ভারতীয় পণ্যে সয়লাব সিলেটের ঈদবাজার

নিজস্ব প্রতিনিধি,

 

 

চোরাচালানিদের হটস্পট হয়ে উঠেছে সিলেটের সীমান্ত এলাকা। বিজিবি ও পুলিশের কড়াকড়ি অভিযানেও থামছে না চোরাচালান। ফলে সিলেটের ঈদের বাজার অনেকটাই দখল করে নিয়েছে ভারতীয় পণ্য। প্রায়ই অভিযানে চোরাই পণ্য জব্দ হচ্ছে। এর চেয়ে কয়েকগুণ চোরাই পণ্য চলে যাচ্ছে সাধারণ মানুষের হাতে। এ অবস্থায় ঈদ সামনে রেখে প্রকৃত ব্যবসায়ীরা আছেন দুশ্চিন্তায়। অভিযানে যারা ধরা পড়ছে, তারা বাহক মাত্র। হোতারা থেকে যাচ্ছে আড়ালে। এতে বিজিবির অভিযান নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, রাত হলেই সরব হয়ে ওঠে সীমান্ত এলাকা। মাদক, চিনি, কাপড়, কসমেটিকস পণ্যসহ বিভিন্ন সামগ্রী আনা-নেওয়া শুরু হয় সিলেট বিভাগের প্রতিটি সীমান্ত দিয়ে। চার জেলাতে হয় এ চোরাচালান। সীমান্তের এপার-ওপারে রয়েছে চোরাচালানের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। মূলত সিন্ডিকেট সদস্যদের তথ্যমতে চলে চোরাচালান। কখন কে ডিউটিতে আছে, কীভাবে চালান পার হবে– সবকিছু সিন্ডিকেট থেকে নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া সীমান্তের আশপাশে চোরাচালানিরা ব্যবহার করে উভয় দেশের মোবাইল নেটওয়ার্ক।

জানা গেছে, সিলেটের গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ, জৈন্তাপুর ও কানাইঘাট সীমান্তে মূলত চোরাচালানিরা সক্রিয়। ওপারে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের খাসিয়াদের সিন্ডিকেট, আর এপারে দেশীয় সিন্ডিকেট। তাদের কেউ কেউ ওপারে টাকা পাঠানোর দায়িত্বে নিয়োজিত, আবার কেউ কেউ দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী ম্যানেজের দায়িত্বে রয়েছেন। আরেকটি পক্ষ রয়েছে পুলিশসহ স্থানীয় প্রশাসন ম্যানেজের দায়িত্বে। তারা ভারত থেকে গরু, মহিষ, শাড়ি, থান কাপড়, কসমেটিকস, গরম মসলা, চিনি, কমলা, আপেল, সুপারিসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে আসে। বিশেষ করে ঈদ সামনে রেখে চোরাচালান বেড়েছে কয়েকগুণ।

 

এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে সিলেটে জব্দ হয়েছে ৬০ কোটি টাকার বেশি মূল্যের চোরাই পণ্য। আর শুধু মার্চেই জব্দ হয়েছে একই পরিমাণ পণ্য। এভাবে চললে চলতি বছর জব্দের পরিমাণ গত বছরকে ছাড়িয়ে যাবে। ২০২৪ সালে জব্দ হয় ১৫৬ কোটি টাকার পণ্য। এটি এক বছরের সর্বোচ্চ রেকর্ড। অন্তর্বর্তী সরকারের আট মাসে জব্দ হয়েছে ১৬৩ কোটি ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকার পণ্য। গেল চার মাসে শুধু শাহপরাণ থানায় ১৭ কোটি টাকার ভারতীয় পণ্য উদ্ধার হয় বলে জানান শাহপরাণ মাজার পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সানাউল হক।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, ঈদে সিলেটের বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদা বেশি থাকে। এ কারণে সীমান্তে চোরাচালান বেড়ে যায়। সিলেটের বিভিন্ন মার্কেটের শোরুমে এখন থরে থরে সাজানো ভারতীয় পণ্য। চোরাই কারবারে লেনদেন হুন্ডির মাধ্যমে হয়ে থাকে।

 

সূত্র জানায়, সীমান্তের ওপারে রয়েছে ভারতীয় খাসিয়াদের সুপারি বাগান ছাড়াও বিভিন্ন ফলের বাগান। বিএসএফ-বিজিবির চোখ ফাঁকি দিতে ব্যবহার করা হয় এসব বাগান। এগুলো সীমান্তের লাগোয়া হওয়ায় অনেক সময় সীমান্তরক্ষীদের কিছুই করার থাকে না। ভারত থেকে এক বস্তা পণ্য নিয়ে এলে বাহক পায় ৫০০ টাকা। ভারতীয় খাসিয়া ও বাংলাদেশি কারবারি মিলে চালান আনা-নেওয়ার কাজ করে।

সচেতন নাগরিকরা বলছেন, শুল্ক ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে নিয়ে আসা পণ্য বাংলাদেশে দ্বিগুণ লাভে বিক্রি করতে পারে চোরাকারবারিরা। এ ছাড়া চোরাচালানের পণ্যের মূল্য ভারতের ব্যবসায়ীদের হাতে চলে যাচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। ফলে সরকার হারাচ্ছে মোটা অঙ্কের রাজস্ব।

চোরাচালান রোধে সীমান্তে বিজিবির টহল আরও জোরদার করা দরকার বলে মনে করেন সিলেট জেলা সুজন সভাপতি ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক প্রশাসক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী।

বিজিবি সিলেট সেক্টরের অধিনায়ক কর্নেল সাইফুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ঈদ সামনে রেখে চোরাচালানিরা গরু, মহিষ ও অন্যান্য সামগ্রী বাদ দিয়ে শাড়ি, থ্রিপিস আনছে। সীমান্তবর্তী এলাকার কিছু লোক পেশা হিসেবে চোরাচালানকে বেছে নিয়েছে। হেডকোয়ার্টার থেকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, কোনোভাবেই যেন বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য আসতে না পারে। এজন্য তিন সেক্টরের ৫৫টি ভিওপিতে জনবল বাড়ানো হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments