Wednesday, March 26, 2025
Homeবিনোদনলাইফস্টাইলধ*র্ষ'ণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ এবং প্রতিরো*ধ

ধ*র্ষ’ণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ এবং প্রতিরো*ধ

বিশেষ প্রতিবেদন,

ধর্ষকরা কেন এই জঘন্য অপরাধ করে, তা বোঝার জন্য তাদের মানসিক গঠন, আবেগ, প্রেরণা, ও সামাজিক পরিবেশ বিশ্লেষণ করা গুরুত্বপূর্ণ। ধর্ষণ কেবল শারীরিক নয়, বরং এটি একটি মনস্তাত্ত্বিক ও সমাজ-নির্ভর অপরাধ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ধর্ষণ ঘটে ক্ষমতা, নিয়ন্ত্রণ ও সহিংসতার মানসিকতা থেকে, যৌন আকাঙ্ক্ষার কারণে নয়।

 

১. ধর্ষকের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য,

ধর্ষকদের মধ্যে কিছু সাধারণ মানসিক বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তবে সকল ধর্ষকের মানসিক গঠন এক রকম নয়। নিম্নলিখিত বিভাগে তাদের ভাগ করা যায়—

 

(ক) ক্ষমতালিপ্সু ধর্ষক,

তারা মূলত শিকারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ধর্ষণ করে। তারা ভিকটিমের ওপর আধিপত্য বিস্তার করতে চায় এবং ক্ষমতা অনুভব করে। তারা সমাজে ক্ষমতাহীনতা বা হীনম্মন্যতা অনুভব করলে, তা ধর্ষণের মাধ্যমে পূরণ করার চেষ্টা করে।

 

(খ) প্রতিহিংসাপরায়ণ ধর্ষক,

এরা নারীদের প্রতি ঘৃণা বা প্রতিশোধ নেওয়ার মানসিকতা থেকে ধর্ষণ করে। অতীতের কোনো ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা (যেমন: প্রেমে প্রত্যাখ্যান) তাদের সহিংস করে তুলতে পারে। ধর্ষণের সময় তারা শারীরিক আক্রমণ বা নিপীড়ন বেশি করে, কারণ তারা ভিকটিমকে কষ্ট দিতে চায়।

 

(গ) স্যাডিস্টিক ধর্ষক

 

এরা ধর্ষণের মাধ্যমে যৌন আনন্দের পাশাপাশি ভিকটিমকে শারীরিক ও মানসিকভাবে কষ্ট দিয়ে তৃপ্তি পায়। এদের মধ্যে সাইকোপ্যাথিক প্রবণতা থাকতে পারে। পরিকল্পিতভাবে অপরাধ করে এবং পুনরায় একই অপরাধ করার ঝুঁকি বেশি থাকে।

 

(ঘ) সুযোগসন্ধানী ধর্ষক

 

এরা সাধারণত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ধর্ষণ করে, পূর্বপরিকল্পিত হয় না। মাদক, অ্যালকোহল বা ভিকটিমের দুর্বলতার সুযোগ নেয়। গ্যাং রেপ বা নির্জন স্থানে ধর্ষণের ঘটনা এদের দ্বারা বেশি সংঘটিত হয়।

 

২. ধর্ষণের মনস্তাত্ত্বিক কারণ,

 

(ক) বিকৃত ক্ষমতার আকাঙ্ক্ষা,

 

অনেক ধর্ষক নারীকে বশীভূত করার মানসিকতা থেকে এই অপরাধ করে। বিশেষত, পুরুষতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় কিছু ব্যক্তি মনে করে যে, নারীর ওপর আধিপত্য বিস্তার করা তাদের অধিকার।

 

(খ) সহানুভূতির অভাব ও ব্যক্তিত্ব ব্যাধি,

কিছু ধর্ষকের মধ্যে সাইকোপ্যাথিক বা নার্সিসিস্টিক ব্যক্তিত্বের বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, যা তাদের অপরাধপ্রবণ করে তোলে।

 

(গ) শৈশবকালীন ট্রমা ও পারিবারিক পরিবেশ,

শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হলে কিংবা পারিবারিক সহিংসতা খুব কাছ থেকে দেখলে। আবার অভিভাবকদের অবহেলা বা অপ্রেমপূর্ণ শৈশব হলে একজন ব্যক্তিকে অপরাধের দিকে ঠেলে দেয়।

 

ধর্ষণের শিকার ভুক্তভোগীর পরিচয় প্রকাশ কি বেআইনি?

(ঘ) সমাজ ও সংস্কৃতির ভূমিকা,

 

সমাজে যৌন সহিংসতাকে প্রশ্রয় দেওয়ার সংস্কৃতি চালু থাকলে। এবং নারীদের অবমাননা ও বস্তুকরণের সংস্কৃতির পাশাপাশি সমাজে অশ্লীল বা সহিংস পর্নোগ্রাফির নেতিবাচক প্রভাব থাকলে অনেক পুরুষ নারীকে শুধু যৌন বস্তু হিসেবে দেখে এবং সহিংস আচরণ করে।

 

(ঙ) মাদক ও অ্যালকোহলের প্রভাব,

অনেক ধর্ষণের ঘটনায় দেখা যায়, অপরাধী মাদক বা অ্যালকোহলের প্রভাবে থাকে, যা তার নৈতিক সচেতনতা ও আত্মনিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

 

৩. ধর্ষকের প্রতিরোধ,

 

(ক) মানসিক চিকিৎসা ও কাউন্সেলিং,

যেসব ধর্ষক মানসিক ব্যাধিতে আক্রান্ত, তাদের জন্য সাইকোথেরাপি ও পুনর্বাসন প্রোগ্রাম দরকার। তবে, সাইকোপ্যাথিক ধর্ষকদের ক্ষেত্রে চিকিৎসা সাধারণত অকার্যকর।

 

(খ) কঠোর আইন ও দ্রুত বিচার,

আইন যত কঠোর হবে, অপরাধের প্রবণতা তত কমবে। তাই দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে, যেন অপরাধীরা সহজে পার না পায়।

 

(গ) সামাজিক সচেতনতা ও শিক্ষার প্রসার,

ছোটবেলা থেকে নারী-পুরুষের সমানাধিকার সম্পর্কে শিক্ষা দিতে হবে। পাশাপাশি যৌন সহিংসতা প্রতিরোধে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।

 

(ঘ) প্রযুক্তিগত নজরদারি ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা,

সিসিটিভি ক্যামেরা, হটলাইন, ও ডিজিটাল ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে অপরাধীদের চিহ্নিত করা সহজ হবে।

 

(ঙ) আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ,

নারীরা নিজেদের রক্ষায় বিভিন্ন ধরনের আত্মরক্ষার প্রশিক্ষণ নিতে পারে। যাতে বিপদে পড়লে নিজেকে রক্ষা করতে পারে।

 

ধর্ষকরা সাধারণত বিকৃত মানসিকতা, ক্ষমতালিপ্সা, বা শৈশবের নেতিবাচক অভিজ্ঞতার কারণে এই অপরাধে লিপ্ত হয়। তাদের মধ্যে অনেকেরই সহানুভূতির অভাব, বিকৃত যৌন প্রবৃত্তি, ও ক্ষমতা দেখানোর মানসিকতা কাজ করে। এই অপরাধ প্রতিরোধে কেবল আইনি পদক্ষেপ যথেষ্ট নয় বরং শিক্ষা, সচেতনতা, সামাজিক মূল্যবোধের পরিবর্তন, ও মানসিক স্বাস্থ্যসেবার প্রসার প্রয়োজন।

 

ধর্ষণ ও সাইকোপ্যাথ: সম্পর্ক ও বিশ্লেষণ,

সাইকোপ্যাথি হল এক ধরনের ব্যক্তিত্ব ব্যাধি, যেখানে ব্যক্তির মধ্যে সহানুভূতি, অনুশোচনা, ও নৈতিকতা কম বা একেবারেই থাকে না। ধর্ষকদের মধ্যে অনেকেই সাইকোপ্যাথিক প্রবণতা দেখায়, তবে সব ধর্ষক সাইকোপ্যাথ নয়।

 

সাইকোপ্যাথিক ধর্ষকের বৈশিষ্ট্য,

১. সহানুভূতির অভাব:

 

ধর্ষণের শিকার ব্যক্তির যন্ত্রণা বা কষ্টের প্রতি কোনো অনুভূতি থাকে না। এরা ভয়ংকর রকম নিষ্ঠুর প্রকৃতির হয়ে থাকে। বিকৃত মানসিকতার প্রকাশ পায় তার সহানুভূতির ক্ষেত্রেও।

 

মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও ধর্ষণ কমছে না কেন?মৃত্যুদণ্ডের বিধান থাকলেও ধর্ষণ কমছে না কেন?

২. ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণের আকাঙ্ক্ষা:

যৌনসুখের চেয়ে ভিকটিমকে নিয়ন্ত্রণ করাই মুখ্য উদ্দেশ্য। যে কোনো ভাবে ভিকটিমকে চরম সহিংসতা প্রকাশের মধ্য দিয়ে তার পক্ষে এ ধরনের অপরাধ সংগঠন করা সম্ভব।

 

৩. অনুশোচনার অভাব:

 

ধর্ষণের পর ধর্ষক অনুতপ্ত হয় না বরং নিজেকে নির্দোষ মনে করে বা অন্যদের দোষারোপ করে। এ ধরনের অপরাধ করার পর কাজটিকে অপরাধ মনে না করা তার জন্য খুবই স্বাভাবিক ব্যাপার বলে বিবেচিত হয়।

 

৪. প্রতারণাপূর্ণ ও চালাক প্রকৃতি:

 

নিজের অপরাধ ঢাকতে মিথ্যা বলে বা পরিস্থিতিকে নিজের পক্ষে ঘুরিয়ে নেয়।

 

৫. ঝুঁকি নেওয়ার প্রবণতা ও উত্তেজনা খোঁজা:

 

ধর্ষণের মতো অপরাধ করতে ভয় পায় না বরং এতে আনন্দ পেতে পারে। বিকৃত মনস্তাত্ত্বিক ভাবনায় তারা এ ধরনের কাজে সুখ খুঁজে পায়।

 

৬. সামাজিক সম্পর্কের অভাব বা ভণ্ডামি:

 

ব্যক্তিগত জীবনে শীতল ও সংবেদনহীন, কিন্তু অনেক সময় সমাজে ভালো মানুষের মুখোশ পরে থাকে। এটা প্রায়শই দেখা যায় মাসকিং করা এ ধরনের ব্যক্তিদের একটি সাধারণ বৈশিষ্ট্য।

 

সাইকোপ্যাথ ও ধর্ষণের সম্পর্ক,

ধর্ষকদের মধ্যে ১০ থেকে ১৫ শতাংশ ব্যক্তির মধ্যে সাইকোপ্যাথিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। সব সাইকোপ্যাথ ধর্ষক নয়, তবে তাদের অপরাধমূলক আচরণের সম্ভাবনা বেশি থাকে। সাইকোপ্যাথরা সাধারণত পরিকল্পিত ধর্ষণ করে এবং তারা পুনরায় একই অপরাধ করার ঝুঁকিতে থাকে।

 

সাইকোপ্যাথ ধর্ষকদের চিকিৎসা বা প্রতিরোধ সম্ভব কি?

সাইকোপ্যাথি সাধারণত চিকিৎসার মাধ্যমে পরিবর্তন করা কঠিন, কারণ তারা নিজের ভুল স্বীকার করতে চায় না। কঠোর আইন, মানসিক মূল্যায়ন, এবং পুনর্বাসন কর্মসূচি কিছু ক্ষেত্রে কার্যকর হতে পারে।

 

সব ধর্ষক সাইকোপ্যাথ নয়, তবে কিছু ধর্ষকের মধ্যে সাইকোপ্যাথিক বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে, যা তাদের অপরাধপ্রবণ করে তোলে। এই ধরনের অপরাধীদের চিহ্নিত করে মানসিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া অপরিহার্য।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments