Sunday, November 24, 2024
Homeইসলামঅদৃশ্য যে তিন শত্রু মানুষের সাফল্যের অন্তরায়

অদৃশ্য যে তিন শত্রু মানুষের সাফল্যের অন্তরায়

 

ইসলামী জীবনঃ

আল্লাহ মানবজাতিকে পৃথিবীতে তাঁর প্রতিনিধি ও ইবাদতকারী হিসেবে প্রেরণ করেছেন। যেন বান্দা জীবনের সর্বত্র আল্লাহর বিধান মান্য করার মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রতিনিধিত্ব করে। আর সে মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ভালোবাসা লাভ করে। পরিণামে অন্তহীন সুখের আবাস জান্নাত লাভ করে।

 

কিন্তু বান্দার জীবনের এই অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে তিনটি বিষয় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। তা হলো রিপু, প্রবৃত্তি ও শয়তান। নিম্নে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো-

রিপু,

 

আরবি ‘হাওয়া’র পরিচয় নির্ধারণে আরবি ভাষাবিদরা বলেন, মানুষ যা আশা করে, প্রত্যাশা করে ও ভালোবাসে এবং মানুষ যার প্রতি ঝুঁকে যায়। মানব মনের এই চাহিদাকে সুফি সাধকরা রিপু বলেন।

 

মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও মুক্তির জন্য আকাঙ্ক্ষা ও রিপু দমন করা আবশ্যক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি লক্ষ্য করেছ তাকে, যে তার খেয়াল-খুশিকে নিজ ইলাহ বানিয়েছে? আল্লাহ জেনে-শুনেই তাকে বিভ্রান্ত করেছেন এবং তার কান ও হৃদয় মোহর করে দিয়েছেন। আর তার চোখের ওপর রেখেছেন আবরণ।’ (সুরা জাসিয়া, আয়াত : ২৩)

রিপুর বহিঃপ্রকাশ

 

মানুষের ভেতরের মন্দ চাহিদা বা রিপু নানাভাবে প্রকাশ পায়।

 

যেমন—

১. হিংসা : রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর আগমনের আগে ইহুদি জাতি একজন নবীর মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করত। কিন্তু তিনি আগমন করার পর তারা হিংসাবশত তাঁর আনুগত্য করতে অস্বীকার করে। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যদিও আগে সত্য প্রত্যাখ্যানকারীদের বিরুদ্ধে তারা এর সাহায্যে বিজয় কামনা করত, তবু তারা যা জ্ঞাত ছিল তা যখন তাদের কাছে এলো, তখন তারা তা প্রত্যাখ্যান করল। সুতরাং অবিশ্বাসীদের প্রতি আল্লাহর অভিশাপ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৯)

 

২. অহংকার : রিপুর আরেক রূপ অহংকার।

 

যা মানুষকে সত্যচ্যুত করে। আল্লাহ বলেন, ‘তকে কি যখনই কোনো রাসুল তোমাদের কাছে এমন কিছু এনেছে, যা তোমাদের মনঃপূত নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ। আর কতককে অস্বীকার করেছ এবং কতককে হত্যা করেছ?’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৮৭)

৩. মোহ : জাগতিক মোহ মানুষকে অন্ধ করে দেয়, ফলে সে ভালো-মন্দের পার্থক্য করে দেয়। যেমন ক্ষমতার মোহ ফিরাউনকে অন্ধ করে দিয়েছিল। ইরশাদ হয়েছে, ‘ফিরাউন বলল, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি মুসাকে হত্যা করি এবং সে তার প্রতিপালকের শরণাপন্ন হোক। আমি আশঙ্কা করি যে সে তোমাদের দ্বিনের পরিবর্তন ঘটাবে অথবা সে পৃথিবীতে বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।’ (সুরা মুমিন, আয়াত : ২৬)

 

৪. ক্রোধ : ক্রোধ ও রাগ রিপুর বিক্ষুব্ধ রূপ। ক্রোধও মানুষকে বিপদগ্রস্ত করে। পবিত্র কোরআনে রাগ দমনের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়েছে, ‘যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সংবরণকারী এবং মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ সৎকর্মপরায়ণদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৪)

 

প্রবৃত্তি,

মানুষের দ্বিতীয় অদৃশ্য শত্রু তাঁর প্রবৃত্তি। পবিত্র কোরআনে প্রবৃত্তি বোঝাতে ‘নফস’ শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। আল্লাহ সৃষ্টিগতভাবে মানুষের ভেতর ভালো ও মন্দ উভয় প্রকার প্রবৃত্তি বা প্রবণতা দান করেছেন। বাংলায় প্রবৃত্তি বলতে মন্দ প্রবৃত্তিকেই বোঝানো হয়। প্রবৃত্তি মানুষকে মন্দ কাজের আদেশ দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘সে বলল, আমি নিজেকে নির্দোষ মনে করি না, মানুষের মন অবশ্যই মন্দ কর্মপ্রবণ। কিন্তু সে নয়, যার প্রতি আমার প্রতিপালক দয়া করেন। আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা ইউসুফ, আয়াত : ৫৩)

 

আছে মানুষের সুপ্রবৃত্তি,

 

মানুষের ভেতর যেমন কুপ্রবৃত্তি রয়েছে, তেমনি রয়েছে সুপ্রবৃত্তিও রয়েছে। তাঁর স্তর দুটি : ক. নফসে লাওয়ামা (মন্দ কাজে তিরস্কারকারী প্রবৃত্তি), খ. নফসে মুতমাইন্না (আল্লাহর দ্বিন পালনে প্রশান্ত প্রবৃত্তি)। মানুষ যখন নফসে আম্মারাহকে দমন করে, তখন তা নফসে লাওয়ামাতে উন্নীত হয়। ফলে সে মন্দ কাজ করতে দ্বিধাগ্রস্ত হয় এবং পাপ কাজ হয়ে গেলে নিজেকে তিরস্কার করে। মহান আল্লাহ এমন সুপ্রবৃত্তির শপথ করেছেন, ‘আরো শপথ করছি তিরস্কারকারী আত্মার।’ (সুরা কিয়ামা, আয়াত : ২)

 

পাপ পরিহারে বান্দার অব্যাহত সাধনায় নফসে লাওয়ামা নফসে মুতমাইন্নাতে উন্নীত হয়। ফলে সে আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং আল্লাহও তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে যান। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘হে প্রশান্তচিত্ত, তুমি তোমার প্রতিপালকের কাছে ফিরে এসো সন্তুষ্ট ও সন্তোষভাজন হয়ে।’ (সুরা ফজর, আয়াত : ২৭-২৮)

 

শয়তা,

মানবজাতির সৃষ্টির সময় থেকে শয়তান তার শত্রু। পবিত্র কোরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ মানবজাতিকে শয়তানের ব্যাপারে নানাভাবে সতর্ক করেছেন। যেমন—

 

১. শত্রুতার সূচনা : আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করার পর আল্লাহ সিজদার নির্দেশ দিলে ফেরেশতারা সিজদা করে কিন্তু শয়তান অহংকারবশত সিজদা থেকে বিরত থাকে। ফলে সে আল্লাহর বিরাগভাজন হয় এবং মানবজাতির সঙ্গে তার চিরন্তন শত্রুতার সূচনা হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সিজদা করো, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করল, সে অমান্য করল ও অহংকার করল। সুতরাং সে অবিশ্বাসীদের অন্তর্ভুক্ত হলো। …কিন্তু শয়তান তা থেকে তাদের পদস্খলন ঘটাল এবং তারা যেখানে ছিল সেখান থেকে তাদের বহিষ্কার করল। আমি বললাম, তোমরা পরস্পরের শত্রুরূপে নেমে যাও, পৃথিবীতে কিছুকালের জন্য তোমাদের বসবাস ও জীবিকা রইল।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ৩৪-৩৬)

 

২. শয়তানের অঙ্গীকার : মানবজাতিকে বিভ্রান্ত ও পথভ্রষ্ট করার ক্ষেত্রে শয়তানের অঙ্গীকার কোরআনে এভাবে এসেছে, ‘সে বলল, তুমি আমাকে শাস্তিদান করলে, এ জন্য আমিও তোমার সরল পথে মানুষের জন্য নিশ্চয়ই ওত পেতে থাকব। অতঃপর আমি তাদের কাছে আসবই তাদের সামনে, পেছনে, ডান ও বাম দিক থেকে এবং তুমি তাদের বেশির ভাগকে কৃতজ্ঞ পাবে না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ১৬-১৭)

 

৩. শত্রুতার ধরন : আল্লাহ মানবজাতির শত্রুতার ধরনও স্পষ্ট করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে মানবসন্তান, আমি কি তোমাদের নির্দেশ দিইনি যে তোমরা শয়তানের দাসত্ব কোরো না। কেননা সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু? আর আমারই ইবাদত কোরো, এটাই সরল পথ।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত : ৬০-৬১)

 

৪. শয়তানের কৌশল : পবিত্র কোরআনে শয়তানের কৌশল বা ফাঁদের ব্যাপারেও মুমিনদের সতর্ক করা হয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘স্মরণ করো, শয়তান তাদের কার্যাবলি তাদের দৃষ্টিতে শোভন করেছিল এবং বলেছিল, আজ মানুষের মধ্যে কেউই তোমাদের ওপর বিজয়ী হবে না, আমি তোমাদের পাশে থাকব। অতঃপর দুই দল যখন পরস্পরের সম্মুখীন হলো, তখন সে পেছনে সরে পড়ল এবং বলল, তোমাদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক রইল না।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৪৮)

 

৫. শয়তানকে বন্ধু বানানোর ক্ষতি : আল্লাহ শয়তানকে বন্ধু বানানোর পরিণতি সম্পর্কে বলেন, ‘আর যে ব্যক্তি আল্লাহকে বাদ দিয়ে শয়তানকে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করবে সে স্পষ্ট ক্ষতির মধ্যে পতিত হবে।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১১৯)

 

আল্লাহ সবাইকে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব শত্রুর হাত থেকে রক্ষা করুন। আমিন

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments