লাইফস্টাইল প্রতিবেদক :
ত্বক এবং চুলের সমস্যায় ভুগতে থাকা রোগীরা আমার কাছে আসেন। ত্বক ও চুলের যত্ন নিয়ে তাদের জানার অনেক উৎসাহ। আজকে আমি এক বিশেষ ধরনের রোগীদের নিয়ে কথা বলবো। কেনো তাদের নিয়ে বলছি, তা পরে ব্যাখ্যা করবো। কিছু রোগী আসেন যারা জানান যে, সাম্প্রতিক সময়ে তাদের অতিরিক্ত চুল পরছে, পাশাপাশি চুল রুক্ষ, ড্যামেজড, ও ব্রেকেজ-প্রবণ হয়ে গেছে।
অনেকেই আবার এর সাথে ত্বক সম্পর্কিত সমস্যার কথাও তুলে ধরেন। তারা দেখছেন হঠাৎ করে তাদের মুখ ও শরীরে বয়সের প্রভাব বেড়ে গেছে, বলিরেখা দ্রুত দেখা দিচ্ছে, স্কিন স্যাগি হচ্ছে এবং টানটানভাব কমে আসছে। সেই সাথে উজ্জ্বলতা কমে গিয়ে ডালনেস দেখা দিচ্ছে। তাদের সাথে কিছুক্ষণ কথা বলে আমরা বুঝতে পারি, তারা মূলত ওজন কমানোর জার্নিতে আছেন বা ছিলেন এবং তাতে কিছু ভুল পদক্ষেপের কারণে এই সমস্যাগুলো তৈরি হচ্ছে। আজ আমি আলোচনা করবো ওজন কমাতে গিয়ে আমরা কী কী ভুল করি এবং তার ফলাফল কী।
ক্র্যাশ ডায়েট বা রেস্ট্রিকটেড মিল ফলো করা :
অনেকেই শরীরকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি থেকে বঞ্চিত করেন, যা শরীরের এনার্জি লেভেল কমিয়ে দেয়। এতে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায়, দুর্বলতা বোধ হয়, কাজের প্রতি অনীহা দেখা দেয়।
মিল স্কিপ করা :
অনেকেই এক বা একাধিক বেলা খাবার বাদ দেন। এর ফলে সেলুলার লেভেলে মাইটোকন্ড্রিয়ার কার্যকারিতা কমে যায়, যা মাইটোকন্ড্রিয়াল ডিসফাংশন ও সেলুলার ইনসাফিশিয়েন্সি তৈরি করে। এর ফলেই চুল ও ত্বকের সমস্যাগুলো প্রকট হয়।
ভুল খাবার নির্বাচন :
পোর্শন কন্ট্রোল করতে গিয়ে অনেকে ভেবে নেন পরিমাণে কম খেলেই হবে। কিন্তু যদি কম ক্যালরির খাবারও বেশি তেলে রান্না করা হয় বা কার্ব একেবারে বাদ দেওয়া হয়, তখন শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি পূরণ হয় না। কমপ্লেক্স কার্ব (যেমন হোল গ্রেইন বা সিদ্ধ মিষ্টি আলু) যদি আমরা ডীপ ফ্রাই করে খাই বা অতিরিক্ত চিনি বা সস খাই তাহলে পুষ্টি কমে যায় এবং ক্যালরি বেড়ে যায়।
খাবার খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি অনুসরণ না করা :
অনেকে খালি পেটে চিনিযুক্ত চা, কফি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খান। এতে সারাদিন গ্লুকোজ লেভেল ওঠানামা করে এবং মিষ্টি খাবারের প্রতি অতিরিক্ত ক্রেভিং তৈরি হয়। অথচ যদি খাওয়ার শুরুতে ভেজিটেবল স্টার্টার বা প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার (যেমন ছোলা বা সিদ্ধ ডিম) খাওয়া হয়, তাহলে এমন সমস্যা অনেকাংশেই কমে যায়।
অনেকে মনে করেন এক্সারসাইজ দিয়ে ইচ্ছেমতো খাওয়ার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব। কিন্তু মনে রাখবেন, আমাদের শরীরের অক্সিডেশন, মিথাইলেশন এবং গ্লাইকেশন অনেক কিছু ঘটে, যেগুলো একটি কমবাইন্ড থেরাপির মাধ্যমে সম্ভব। অতিরিক্ত এক্সারসাইজ শরীরে ইনফ্লামেশন বা নেতিবাচক প্রক্রিয়া বাড়িয়ে দেয় এবং সঠিক বিশ্রাম না পেলে মাসল রিপেয়ার ও রিজেনারেশন ব্যাহত হয়।
অস্বাভাবিক ডায়েট ফলো করা :
অনেকে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ ছাড়া কিটো, প্রোটিন বা সিঙ্গেল ডায়েট, এগ ডায়েট, ভেগান ডায়েট অনুসরণ করেন। এতে শরীরের পুষ্টি ঘাটতি হয়, অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং যা সাময়িকভাবে ওজন কমালেও পরবর্তীতে আবার বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যা সামগ্রিকভাবে শরীর, ত্বক ও চুলেএ ক্ষতি করে ফেলে।
সঠিক পদ্ধতির প্রয়োজন :
ওজন নিয়ন্ত্রণ একটি সমন্বিত প্রটোকলের মাধ্যমে করা উচিত। একজন বিশেষজ্ঞ আপনার স্বাস্থ্যগত অবস্থার ইতিহাস ও পরীক্ষার ভিত্তিতে কাস্টোমাইজড ডায়েট এবং এক্সারসাইজ প্ল্যান তৈরি করে দেবেন। এভাবে সঠিকভাবে ওজন নিয়ন্ত্রণ করলে তা আপনার সামগ্রিক সৌন্দর্য, ওয়েলনেস, ফিটনেস এবং সুস্থতায় সহায়ক হবে। তাই ভুল পদ্ধতি অবলম্বন করে নিজের শরীরের ক্ষতি করবেন না।
ডা. তাওহীদা রহমান ইরিন : বাংলাদেশের বিশিষ্ট ডার্মাটোলজিস্ট।