বিশেষ প্রতিনিধি:::
হাওর বেষ্টিত জেলা সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলায় নির্মিত হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর উপর তৃতীয় বৃহত্তম সেতু।
এটি চালু হলে সুনামগঞ্জ টু ঢাকার দূরত্ব কমবে ৬৫ কিলোমিটার। সুনামগঞ্জ টু ঢাকার বিকল্প সড়ক হিসেবে সুনামগঞ্জ টু সিলেট সড়কের কাঠইর এলাকা থেকে —দিরাই, শাল্লা হয়ে হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসূখায় গিয়ে মিলিত হবে। এর পর শাল্লা আজমিরীগঞ্জ সড়কটি লাখাই উপজেলা হয়ে সরাইলে গিয়ে মহাসড়কের সঙ্গে মিলবে এই আঞ্চলিক মহাসড়ক। প্রায় ১৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে এই সড়কের কাজ ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে শেষ হবে।
শাল্লা টু আজমিরিগঞ্জ সড়কের কাজ চল্লিশ ভাগ শেষ হয়েছে। কুশিয়ারা নদীর উপর তৃতীয় বৃহত্তম সেতু নির্মাণের কাজও ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে। এই সড়ক চালু হলে সুনামগঞ্জ—ঢাকার দূরত্ব কমবে ৬৫ কিলোমিটার।
শাল্লা—আজমিরিগঞ্জের দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। এরমধ্যে সুনামগঞ্জ অংশের ১০ এবং হবিগঞ্জের ৬ কিলোমিটার মাঝখানে গ্রাম শাল্লায় হচ্ছে কুশিয়ারা নদীর উপর সেতু। সেতুর হবিগঞ্জ অংশে রয়েছে ফিরোজপুর গ্রাম। সিলেট বিভাগে কুশিয়ারা নদীর উপর এটি তৃতীয় বৃহত্তম সেতু। সেতুসহ এই অংশে ব্যয় হচ্ছে ৭৬৯ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে গ্রাম শাল্লা—ফিরোজপুর সেতুর কাজ ৬০ ভাগ শেষ হয়েছে।
সেতুর পিলারের কাজ শেষ হতেই স্থানীয় লোকজন নতুন সড়কের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন।
শাল্লা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অলিউল হক বললেন, এই আঞ্চলিক মহা সড়ক ও সেতুর স্বপ্ন দেখিয়েছেন এই এলাকার সাতবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। সেতুটির নামকরণ ‘সুরঞ্জিত সেতু’ হলে হাওড় পাড়ের মানুষ খুব খুশি হবে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি শাল্লা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সাত্তার বলেন, যেহেতু প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এই আঞ্চলিক মহাসড়কের মূল পরিকল্পনাকারী তাই শাল্লা পাশের সেতুর নাম চাই সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত সেতু। আমাদের দাবী আসা করি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিবেচনা করবেন।
সুরঞ্জিত সেন গুপ্ত স্মৃতি পরিষদের শাল্লার সদস্য সচিব পিসি দাশ পিযুষ বললেন, প্রয়াত জাতীয় নেতা সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত তার জীবদ্দশায়ই এই সড়কের ফাইলওয়ার্ক করে গেছেন। এজন্য এই সড়কের সবচেয়ে বড় স্থাপনা কুশিয়ারা’র উপর নির্মিত সেতুর নামকরণ তার নামে করার জন্য আমরা আগেভাগেই দাবি তুলেছি এবং সেটি বাস্তবায়ন হবে আমাদের বিশ্বাস। কৃষকলীগ আহবায়ক রনঞ্জিৎ দাস বললেন, এই আঞ্চলিক মহাসড়কের মূল কারিগর প্রয়াত জাতীয় নেতা সবার প্রিয় সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। তিনি জীবদ্দশায় কাজটি সমাপ্ত করতে পারেনি বলে উনার শেষ ইচ্ছা পুরণ হয়নি। তাই আমাদের দাবি এই সেতুর নাম হোক সুরঞ্জিত সেতু ।
শাল্লা—আজমিরিগঞ্জ সড়কে আরও ৩টি ছোট সেতু ও ৮টি কালভার্টের কাজ শেষ হয়েছে। সড়কের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে চার কিলোমিটার মাটি ও স্লোফ প্রটেকশনের কাজ হয়েছে। হবিগঞ্জ অংশের ছয় কিলোমিটারেও মাটির কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে গত ২৮ মে থেকে কাঠইড়—দিরাই—শাল্লা সড়কের কাজ শুরু হয়েছে। ৬২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মদনপুর—দিরাই—শাল্লা মহাসড়কের কাজের শুভ সূচনা করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ড. জয়া সেনগুপ্তা এমপি।
এই সড়কটি বাস্তবায়িত হলে নেত্রকোনার খালিয়াজুড়ি, হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ বানিয়াচং ও কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলাকেও সংযুক্ত করবে। সুনামগঞ্জ—দিরাই—শাল্লা—আজমিরীগঞ্জ ও হবিগঞ্জের মধ্যে সরাসরি সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এলাকাটি কৃষি, মৎস্য সম্ভাবনাময় হওয়ায় এখানকার উৎপাদিত কৃষি পণ্য দ্রুত দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পৌঁছে যাবে।
সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রাং জানালেন, ২০২৫ সালের জুনের মধ্যে এই সড়কের কাজ শেষ হবে। আমরা আশা করছি ২০২৫ সালের জুলাইয়ে এই সড়ক দিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ঢাকা যাবে যানবাহন। তাতে ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের দূরত্ব কমবে ৬৫ কিলোমিটার।
তিনি জানান, এই অর্থ বছরেই এই সড়কের উপরের কার্পেটিংয়ের নীচের লেয়ার পর্যন্ত কাজ শেষ হবে। সড়কটি সুনামগঞ্জের কাঠইড়, দিরাই, শাল্লা থেকে হবিগঞ্জের আজমিরিগঞ্জ ও লাখাই হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল গোল চত্বরে গিয়ে সিলেট— ঢাকা মহাসড়কের সঙ্গে মিলবে বলে জানান তিনি।