সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্তে কয়লা চোরাচালানে জড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় শিশুরা। সরেজমিন ওই এলাকার স্কুলের খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এলাকার প্রায় অর্ধেক ছাত্র এমন কাজে জড়িত। লেখাপড়ার বদলে টাকা উপার্জনের দিকেই তাদের মনোযোগ। আর, সেটা তারা করছে অবৈধভাবে। দুর্গম হওয়ায় প্রশাসনের নরজদারিও তেমন নেই।
তাহিরপুর এলাকাটির যোগাযোগ ব্যবস্থা তেমন ভালো নয়। এখানকার মানুষের লেখাপড়ার চেয়ে জীবিকা নির্বাহ করাই প্রধান লক্ষ্য। বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ পার্শ্ববর্তী ভারত থেকে চোরাই পণ্য আনার সাথে জড়িত।
স্থানীয় স্কুল টেকেরঘাট চুনাপাথর খনি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনেক ছাত্র চোরাচালানে জড়িয়ে পড়েছে। এক শিক্ষার্থীর দীর্ঘদিন স্কুলে না আসার কারণ জানতে চাওয়া হয় প্রধান শিক্ষক হালিমা বেগমের কাছে। তিনি বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ছাত্রদের উপস্থিতি কম। স্কুলে আসলেও টিফিনের পর তারা উপস্থিত থাকে না।
এ ব্যাপারে অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলেও তেমন একটা প্রতিকার পাননি বলেও জানান, প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থীরা স্কুলে না আসার ব্যাপারটি অভিভাবকরা জানে বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, কাছেই পাহাড় হওয়ায় স্কুল ফাঁকি দিয়ে পাহাড়ে চলে যায় ছাত্ররা।
স্কুল থেকে বেরিয়ে পাহাড়ি পথে সেই শিক্ষার্থীর খোঁজ নিতে যায় যমুনা টেলিভিশন। দেখা যায় মাথায় কয়লা ভর্তি বস্তা নিয়ে ফিরছে সেই ছাত্র।
সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে সীমান্তে এই শিশুর মত শত শত শিশু এমন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে গেছে। মূলত ভারতের খনি থেকে চোরাই পথে কয়লা আনার কাজ করে তারা। মাঝেমধ্যে শিক্ষকরা ধরে এনে ক্লাসে বসালেও, তাতে কাজ হয় না।
এ ব্যাপারে কারণ ব্যাখ্যা করেন শিশুদের নিয়ে কাজ করা ভারতীয় সমাজকর্মী হাসিনা খারবাহি। তিনি বলেন, এখানে খনিগুলোতে লোভনীয় পারিশ্রমিকে কাজ করে ভারতীয় ও নেপালি শিশুরা। বিভিন্ন সময়ে খনিতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে বহু শিশু। এসব ঘটনা মিডিয়াতে আসে না বলেও জানান তিনি।
সীমান্তে নজরদারির অভাবের অভিযোগ করেন স্থানীয়রা। তবে বিজিবি জানায়, সীমান্তে নজরদারি অব্যাহত আছে।
২৮ বিজিবির সিও লে. কর্নেল এ কে এম জাকারিয়া কাদির বলেন, বাহিনী সার্বক্ষণিক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে যেন কেউ অবৈধভাবে ভারতের অভ্যন্তরে প্রবেশ করতে না পারে। সীমান্তে সচেতনতা বাড়ানোর পাশাপাশি বিভিন্ন জীবিকা নির্বাহের সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
২০২৫ সালের সরকারি জরিপ বলছে, এই টেকেরহাট নামের গ্রামটিতে শিশুর সংখ্যা ৫৬৮ জন। ২০৬ জন স্কুলে গেলেও বাকিরা যায় না।