Monday, March 10, 2025
Homeসিলেট বিভাগসুনামগঞ্জসুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লায় মাছ লুটের মহোৎসব : নিঃস্ব ইজারাদাররা

সুনামগঞ্জের দিরাই-শাল্লায় মাছ লুটের মহোৎসব : নিঃস্ব ইজারাদাররা

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি,

সুনামগঞ্জের দিরাই ও শাল্লা উপজেলায় কয়েকদিন ধরে চলছে মাছ লুটের মহোৎসব। মাত্র ছয় দিনে লুট হয়েছে ৯টি জলমহালের ৫-৭ কোটি টাকার মাছ। এসব জলমহাল বৈধ ইজারাদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও স্থানীয় হাজারো মানুষের দলবদ্ধভাবে বিলের মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। গত কয়েকদিন ধরে একের পর এক জলমহালে ঢুকে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয়রা। শনিবার কামান বিল, রোববার হাতনী বিল, সোমবার বারোঘর বিল, মঙ্গলবার সতোয়া বিল, লাইরাদিঘাসহ লুট হয়েছে সাতটি বিল। সবশেষ বুধবার (৫ মার্চ) খাড়া বিল ও বেইতর বিল থেকে মাছ লুট হয়েছে।

 

বুধবার দিরাই পৌরসভার সুজানগর শ্যামপুর বেইতর বিলে দেখা যায়, শতশত মানুষ মাছ ধরছেন। কেউ বড় জাল দিয়ে, কেউ পলো ব্যবহার করে, আবার কেউ হাতে ধরছেন মাছ। কেউ আবার এসেছেন পুরো পরিবার নিয়ে।

 

স্থানীয়রা জানান, সকাল থেকে বেইতর বিলে মানুষ মাছ ধরতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে মানুষ আরও বাড়তে শুরু করে। আশপাশের উপজেলার কয়েক হাজার মানুষ এসেছেন। উৎসবের মতো মাছ ধরছে সবাই। লুট হওয়া বিলের ইজারাদার বিভিন্ন সমিতি হলেও মূলত আওয়ামী লীগের প্রভাবশালীরা এসব নিয়ন্ত্রণ করত। সে কারণেই দিনে-দুপুরে উল্লাস করে মাছ লুটতে ব্যস্ত সবাই। আশপাশের ১২-১৫ গ্রামের মানুষ এই লুটপাটে অংশ নিয়েছে।

 

বিলগুলোর ইজারাদাররা বলছেন, মাছ লুটের কারণে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে যাচ্ছেন। প্রশাসনের উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তারা লুট ঠেকাতে পারছে না।

 

খাড়া বিলের ইজারাদার বড়াড়গাঁও কচুয়ে সমবায় মৎস্যজীবী সমিতি। সমিতির এক অংশীদার লিপন হাসান চৌধুরী বলেন, আমরা ছয় বছর মেয়াদে উন্নয়ন স্কিমে এই জলমহাল ইজারা নিয়েছি। এবার চতুর্থ বছর চলছে। গত বছর আমরা ফিশিং করে ফাইল জমা দিয়েছি। একের পর এক জলমহাল যেভাবে লুট হচ্ছে, আমরা বুঝতে পেরেছিলাম আমাদের জলমহালও লুট হতে পারে। তাই আগেই প্রশাসনের সহায়তা চেয়েছিলাম। প্রশাসন আমাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করেছে কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি।

 

তিনি আরও বলেন, ভোর ৬টা থেকেই প্রশাসন উপস্থিত ছিল কিন্তু হাজার হাজার মানুষ দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোঁটা নিয়ে বিলের পানিতে নেমে পড়ে। তাদের আটকানো সম্ভব হয়নি। নাচিনি, ধনপুর, চন্দ্রপুর, সরমঙ্গল, কাইলানি, চরনার চড়, কার্তিকপুর, মাউতি, ভাঙ্গাডর, ডাইয়াগাঁও, নোয়াগাঁও ও ইসলামপুর গ্রামের প্রায় ২০০০ মানুষ মাছ ধরতে নামে।

 

লিপন হাসান চৌধুরী বলেন, আমাদের জলমহালে ছয় জন পাহারাদার ছিল কিন্তু এত বড় জনস্রোতের সামনে আমরা অসহায় হয়ে যাই। আমাদের প্রায় ৭০ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সব শেষ হয়ে গেল।

 

সুজানগর শ্যামপুর বেইতর বিলের ইজারাদার মাছরাঙা মৎস্য সমিতির উবায়দুল বলেন, আমাদের প্রায় ৯০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার আট জন পাহারাদার আছে, প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা খরচ হয় এই বিলে। কিন্তু শ্যামার চরের প্রায় ৫০০০ মানুষ মোটরসাইকেল, লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে রাত থেকে আমাদের বিলে অবস্থান নেয়। প্রশাসন থাকার পরও তারা মাছ ধরে নিয়ে গেছে। আজকের ঘটনায় আমার অন্তত ১ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসন যদি আরেকটু কঠোর অবস্থান নিত তাহলে হয়ত এত বড় ক্ষতি হতো না।

 

জানতে চাইলে দিরাই থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রাজ্জাক ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিরাই ও শাল্লার আশপাশের বিভিন্ন ইজারাকৃত বিলে হাজার হাজার মানুষ একত্রিত হয়ে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে গিয়ে অবস্থান নিয়েছি। আমরা চেষ্টা করেছি, মাইকিং করে তাদের বুঝিয়েছি। কিন্তু বিশাল সংখ্যক মানুষকে আটকানো সম্ভব হয়নি। এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ করেননি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments