Notice: Function _load_textdomain_just_in_time was called incorrectly. Translation loading for the td-cloud-library domain was triggered too early. This is usually an indicator for some code in the plugin or theme running too early. Translations should be loaded at the init action or later. Please see Debugging in WordPress for more information. (This message was added in version 6.7.0.) in /home/sylheterkagoj/public_html/wp-includes/functions.php on line 6121
খাদ্য ও বাসস্থান সংকট : কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনে প্রাণীকূল এখন লোকালয়ে - Sylheter Kagoj : সিলেটের কাগজ |
Thursday, May 1, 2025
Homeসিলেট বিভাগমৌলভীবাজারখাদ্য ও বাসস্থান সংকট : কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনে প্রাণীকূল এখন লোকালয়ে

খাদ্য ও বাসস্থান সংকট : কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া বনে প্রাণীকূল এখন লোকালয়ে

 

পিন্টু দেবনাথ :

 

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে খাদ্য ও বাসস্থান সংকটের কারনে বনে দেখা মিলছে না বন্যপ্রাণীদের। প্রাণীকূল এখন প্রায়ই লোকালয়ে বেরিয়ে পড়ছে।

 

প্রতিবছর বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবসে সচেতনতা ও প্রাণীর সুরক্ষায় নানা কর্মসূচি পালিত হয়। লাউয়াছড়ায়ও এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। তবে কোনো পরিবর্তনের লক্ষণ আজও মিলেনি।

শুধুমাত্র দিবসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে।

 

গত ১ মার্চ বন থেকে দলছুট একটি চিত্রা হরিণ লোকালয়ে বেরিয়ে পড়ে। খাবার না পেয়ে বেরিয়ে পড়া চিত্রা হরিণ কমলগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের কান্দিগাঁও গ্রামের গন্ডামারা এলাকার রাজা মিয়ার বাড়িতে ধরা পড়ে। বিষয়টি বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগকে অবগত করলে বন বিভাগের লোকজনের কাছে চিত্রা হরিণটি হস্তান্তর করা হয়।

 

লাউয়াছড়া বন্যপ্রাণী বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ১৯১৭ সালে আসাম সরকার কমলগঞ্জের পশ্চিম ভানুগাছের ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তী সময় ১৯২৩ ও ১৯২৫ সালে পর্যায়ক্রমে কালাছড়া ও চাউতলী এলাকাকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হয়।

 

১৯৯৬ সালে ১ হাজার ২৫০ হেক্টর এলাকাকে জাতীয় উদ্যান হিসেবে ঘোষণা করা হয়। লাউয়াছড়ায় ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি এবং ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী রয়েছে। আয়তনে ছোট হলেও বিরল প্রজাতির প্রাণীর সংমিশ্রণে এ বনটি জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্ব বহন করে।

 

বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের লাউয়াছড়া রেঞ্জের প্রাক্তন এক কর্মকর্তা বলেন, ৩৫ বছর আগেও লাউয়াছড়ায় যে বন ছিল সেটি এখন আর নেই। বন ফাঁকা হওয়ায় হুমকির মুখে পড়ছে জাতীয় উদ্যানের বন্যপ্রাণী ও জীববৈচিত্র্য।

 

বিশ্বের বিলুপ্তপ্রায় উল্লুকসহ বিরল প্রজাতির বন্যপ্রাণী, উদ্ভিদ ও বৃক্ষরাজি সমৃদ্ধ লাউয়াছড়া উদ্যানটিতে প্রাকৃতিক অনেক গাছ ক্রমাম্বয়ে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুমে বনের ছড়া ও খাল শুকিয়ে বন্যপ্রাণীর খাওয়ার পানি সংকট তীব্র হচ্ছে। পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি ও খাবারের জোগান না থাকার কারণে প্রাণীগুলো লোকালয়ে বেরিয়ে নানা সময়ে মৃত্যুমুখে পড়ছে।

 

স্থানীয়রা জানান, গত কয়েক দশকে লাউয়াছড়া বনের ঘনত্ব অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। এ বনের পুরোনো মূল্যবান গাছ উজাড় হয়েছে। শুকনো মৌসুমে খাল, ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় বন্যপ্রাণী খাওয়ার পানি সংকটে পড়ছে। খাবার ও পানির তৃষ্ণা মেটাতে বন্যপ্রাণী লোকালয়ে চলে আসছে। গাছ পাচার, মাগুরছড়া গ্যাস কূপ দুর্ঘটনা, বনের ভেতর দিয়ে রেল ও সড়ক পথ নির্মাণ, লেবু-আনারসবাগান স্থাপন, পর্যটন কেন্দ্র স্থাপন, অত্যধিক দর্শনার্থীর বিচরণ ইত্যাদি কারণে অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বন।

এছাড়া শুষ্ক মৌসুমে বনে পানির সংকট সৃষ্টি হয়। রেল, সড়কপথ ও বৈদ্যুতিক লাইনের কারণে প্রাণঘাতী হুমকির মুখে পড়েছে অনেক প্রাণী।

 

লাউয়াছড়া বনের ভিতরে যখন রেল যাওয়া আসা করে এবং উচ্চ সুরে হরণ বাজানো হয় তখন বন্যপ্রাণীরা আতংকে দিগবিদিক ছুটাছুটি করে, ভয়ে বাসস্থান হারিয়ে ফেলে লোকালয়ে বের হয়ে আসে।

 

গত ৩ মার্চ ছিল বিশ্ব বন্যপ্রাণী দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল “বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরত্রীর উন্নয়ন”। এ উপলক্ষে র‍্যালি ও আলোচনা সভায় আয়োজন করে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান সহ ব্যবস্থাপনা কমিটি।

আলোচনায় অংশ নেন সহকারী বন সংরক্ষণ কর্মকর্তা (প্রকৃতি ও বন্যপ্রাণী) জামিল আহমদ চৌধুরী। তিনি বলেন, বন্যপ্রাণী রক্ষায় আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে, কোন ভাবেই বন্যপ্রাণীর আভাসস্থল ধ্বংস করা যাবেনা এ বিষয়ে সকলকে সচেতন হতে হবে। লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে আগত পর্যটকরা যেন বন্যপ্রাণীকে বিরক্ত না করে সে বিষয়ে বনকর্মী ও সিপিজি সদস্যদের আরো বেশি দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি আরও বলেন, অনেক সময় লোকালয়ে বেরিয়ে যাওয়া বন্যপ্রাণীকে সচেতনতার অভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়। এটি কোন ভাবেই করা যাবেনা। আমাদের সবাইকে সচেতন হতে হবে এবং একযোগে কাজ করতে হবে।

এসময় আলোচনা অংশগ্রহণ করেন লাউয়াছড়া রেঞ্জ কর্মকর্তা নাজমুল আলম, ট্যাুরিস্ট পুলিশের অফিসার ইনচার্জ কামরুল হাসান চৌধুরী, কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সভাপতি পিন্টু দেবনাথ, কমলগঞ্জ প্রেসক্লাবের সদস্য সচিব আহমেদুজ্জামান আলম, পৌর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহবায়ক শফিকুল ইসলাম,

সিএমসি কমিটির কোষাধ্যক্ষ জনক দেববর্মা, লাউয়াছড়া পুঞ্জি প্রধান ফিলা পত্নী, কমলগঞ্জ রিপোর্টার্স ইউনিটির সাধারণ সম্পাদক নির্মল এস পলাশ, পাহাড় রক্ষা উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি মো. মোনায়েম খান ও বনকর্মী বাবুল মিয়া।

লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল থাকতে হলে পর্যটকদের আনাগোনা বন্ধ করতে হবে। পর্যাপ্ত পানির জন্য লেক স্থাপন, ফলজ গাছ লাগানোসহ নানামূখী পদক্ষেপ নেয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এগিয় আসতে হবে। আগের মতো এখন আর বন্যপ্রাণী নেই। মাঝে মাঝে বানর দেখা যায়, তাও আবার পর্যটকরা আসলে বিভিন্ন খাবার দিয়ে থাকেন।

বন্যপ্রাণী রক্ষায় সকলকে এগিয়ে আসতে হবে, না হলে ভবিষ্যতে প্রাণীকূল বিলুপ্ত হয়ে যাবে এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সচেতন মহল।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments