Wednesday, April 2, 2025
Homeইসলামরাজনীতির সাথে কুরআনের সম্পর্ক

রাজনীতির সাথে কুরআনের সম্পর্ক

ইসলাম প্রতিদিন,

সমাজ ও রাষ্ট্রে যদি জুলুম ও দুঃশাসন মুক্ত ন্যায় ও ইনসাফ ভিত্তিক সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা রাজনীতির উদ্দেশ্যে হয় তাহলে বলতে হবে কুরআনের সাথে রাজনীতির গভীর সম্পর্ক সম্পর্ক রয়েছে। কেননা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আল্লাহ তা’য়ালা কুরআনে নির্দেশ দিয়েছেন। কুরআনের ভাষায়,

إِنَّ اللَّهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ.

নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ন্যায় ও ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করতে নির্দেশ দিয়েছেন। (সূরা নাহল ১৬/৯০)

 

মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

إِنَّا أَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ لِتَحْكُمَ بَيْنَ النَّاسِ بِمَا أَرَاكَ اللَّهُ.

(হে নবী) নিশ্চয় আমি তোমার প্রতি যথাযথভাবে কিতাব (আল কুরআন) নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের মধ্যে শাসনকার্য পরিচালনা কর সে অনুযায়ী যা আল্লাহ তোমাকে দেখিয়েছেন। (সূরা নিসা ৪/১০৫)

 

মুমিনগণ রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হলে তাদের করণীয় কি, সে বিষয়ে মহান আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,

الَّذِينَ إِنْ مَكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنْكَرِ ۗ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ.

তারা এমন যাদেরকে আমি পৃথিবীর বুকে রাষ্ট্র ক্ষমতা দান করলে তারা সালাত কায়েম করবে, যাকাত আদায় করবে এবং সৎকাজের আদেশ দেবে ও অসৎকাজ থেকে নিষেধ করবে; আর সব কাজের পরিণাম আল্লাহরই অধিকারে। (সূরা হজ্জ ২২/৪১)

 

যদি রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে কুরআনকে বিচ্ছিন্ন করা হয়, সেক্ষেত্রে কুরআনকেই আঁকড়ে ধরতে হবে এবং নিজের জীবন বাজি রেখে হলেও কুরানের শাসনব্যবস্থা কায়েম করার জন্য রাজনৈতিক কর্ম তৎপরতা চালিয়ে যেতে হবে। হযরত মু’আয বিন জাবাল (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেছেন,

أَلَا إِنَّ رَحَى الْإِسْلَامِ دَائِرَةٌ ، فَدُورُوا مَعَ الْكِتَابِ حَيْثُ دَارَ، أَلَا إِنَّ الْكِتَابَ وَالسُّلْطَانَ سَيَفْتَرِقَانِ، فَلَا تُفَارِقُوا الْكِتَابَ، أَلَا إِنَّهُ سَيَكُونُ عَلَيْكُمْ أُمَرَاءُ يَقْضُونَ لِأَنْفُسِهِمْ مَا لَا يَقْضُونَ لَكُمْ، إِنْ عَصَيْتُمُوهُمْ قَتَلُوكُمْ، وَإِنْ أَطَعْتُمُوهُمْ أَضَلُّوكُمْ .قَالُوا: يَا رَسُولَ اللهِ، كَيْفَ نَصْنَعُ؟ قَالَ: كَمَا صَنَعَ أَصْحَابُ عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، نُشِرُوا بِالْمَنَاشِيرَ، وَحُمِلُوا عَلَى الْخَشَبِ، مَوْتٌ فِي طَاعَةِ اللهِ خَيْرٌ مِنْ حَيَاةٍ فِي مَعْصِيَةِ اللهِ.

জেনে রাখো, ইসলামের চাকা প্রতিনিয়ত ঘুর্নায়মান অতএব তোমরা আল্লাহর কিতাব কুরআনের সাথে ঘুর্নায়মান হও। মনে রাখবে, আল্লাহর কিতাব আল কুরআন ও শাসনক্ষমতা উভয়ই অচিরেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়বে। তবে সাবধান, তোমরা কুরআনের সঙ্গ ত্যাগ করবে না। ভবিষ্যতে এমন সব ব্যক্তি তোমাদের শাসক হয়ে বসবে যারা তোমাদের উপর (কুরআন বিরোধী) শাসন ফায়সালা প্রতিষ্ঠা করবে। তোমরা যদি তাদের মেনে চলো তবে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করবে। আর যদি তোমরা তাদের অমান্য করো তোমাদের মৃত্যুর মুখে নিক্ষেপ করবে। সাহাবীগণ জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল (ﷺ) তখন আমরা কী করব? জবাবে রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেন, তখন তোমরা তাই করবে, যা হযরত ঈসা (আঃ) এর সাথীরা করেছেন। তাঁদেরকে করাত দিয়ে দীর্ণ করা হয়েছে, তাঁরা শুলবিদ্ধ হয়েছেন (তবুও আল্লাহর নাফরমানী করেননি)। কেননা আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত জীবনের চেয়ে আল্লাহর আনুগত্যের মধ্যে মৃত্যুবরণ অনেক উত্তম। (তাবারানী ফিল মু’জামুল কাবীর ২০/৯০, ১৭২; মু’জামুস সাগীর ২/৪২; হিলয়াতুল আউলিয়া ৫/১৬৫; মাজমাউজ জাওয়ায়িদ ৫/২৪১)

 

আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন,

الْإِسْلَامُ وَالسُّلْطَانُ أَخَوَانِ تَوْأَمٌ، لَا يَصْلُحُ وَاحِدٌ مِنْهُمَا إِلَّا بِصَاحِبِهِ، فَالْإِسْلَامُ أُسُّ وَالسُّلْطَانِ حَارِسٌ، وَمَا لَا أُسَّ لَهُ مُنْهَدِمٌ، وَمَا لَا حَارِسَ لَهُ ضَائِعٌ.

ইসলাম ও রাষ্ট্রব্যবস্থা দুই সহোদর ভাইয়ের ন্যায়। তাদের একজন অপরজনকে ছাড়া সংশোধন ও পরিপূর্ণ হতে পারে না। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ইসলাম হচ্ছে কোন অট্টালিকার ভিত। আর রাষ্ট্রশক্তি তার পাহারাদার। যে অট্টলিকার ভিত নেই তা যেমন পড়ে যেতে বাধ্য, তেমনি যার পাহারাদার বা রক্ষক নেই তাও ধ্বংস হয়ে যেতে বাধ্য। (ইমাম দাইলামী, আল ফিরদাউস ১/১১৭; ইমাম সুয়ূতী, জামউল জাওয়ামি হাঃ ১০১২২; কানযুল উম্মাল হাঃ ১৪১৬১৩)

 

আবু হুরায়রা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন,

ﻛَﺎﻧَﺖْ ﺑَﻨُﻮْ ﺇِﺳْﺮَﺍﺋِﻴْﻞَ ﺗَﺴُﻮْﺳُﻬُﻢْ ﺍﻷَﻧْﺒِﻴَﺎﺀُ ﻛُﻠَّﻤَﺎ ﻫَﻠَﻚَ ﻧَﺒِﻲٌّ ﺧَﻠَﻔَﻪُ ﻧَﺒِﻲٌّ ﻭَﺇِﻧَّﻪُ ﻟَﺎ ﻧَﺒِﻲَّ ﺑَﻌْﺪِﻱْ ﻭَﺳَﻴَﻜُﻮْﻥُ ﺧُﻠَﻔَﺎﺀُ فَيَكْثُرُونَ.

বনী ইসরাঈলের নবীগণ তাঁদের উম্মাতদের মাঝে রাজনৈতিক নেতৃত্ব দিতেন ও শাসন করতেন। যখন কোন একজন নবী মারা যেতেন, তখন অন্য একজন নবী তাঁর খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করতেন। আর আমার পরে কোন নবী নেই। তবে অনেক খলীফা হবে (যারা রাজনৈতিক নেতৃত্ব দেবেন)। (সহীহ বুখারী, হাঃ ৩৪৫৫; সহীহ মুসলিম হাঃ ১৮৪২; মুসনাদে আহমাদ, হাঃ ৭৯৪৭; সুনান ইবনে মাজাহ হাঃ ২৮৭১; আইনী, উমদাতুল ক্বারী হাঃ ৩৪৫৫; ইবনে হাজার, ফাতহুল বারী ৬/৪৯৫, ৮/১১০, ১০/৫৭৭)

 

সুতরাং যারা বলে রাজনীতির সাথে কুরআনের কোনো সম্পর্ক নেই; আমরা বলবো, তাদের সাথে ইসলামের কোনো সম্পর্ক নেই।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments