Wednesday, April 2, 2025
Homeজাতীয়স্বাধীন হইলাম, মুক্তি পাইলাম না’

স্বাধীন হইলাম, মুক্তি পাইলাম না’

কাগজ নিউজ,

১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। একটি জাতির স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন-বিজয়। এই বিজয়ে রক্ত দিয়েছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গভেদে এ ভূখণ্ডের আপামর জনগণ। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যখন স্পর্শ করে বাস্তবের মাটি; তখন এই সংগ্রামের আদর্শকে ঘিরে হাজারও স্বপ্ন জন্ম নেয় লাখো মানুষের মনে। এই স্বপ্নগুলোই এগিয়ে নিয়ে চলে নতুন রাষ্ট্রকে।

 

এ ভূখণ্ডের নারী-পুরুষ সকলের আত্মত্যাগ আছে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে। কিন্তু দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সকল আখ্যানেই নারী কেবলই নির্যাতিত হওয়ার অংশটুকুতে বিরাজমান। সেই অংশটুকুও যেন ঠিকঠাক উঠে আসে না আমাদের আখ্যানে, আমাদের ইতিহাসে, গবেষণায়। যে নারী রাইফেল কাঁধে যুদ্ধ করেছেন, তাঁর স্থান খুবই সামান্য। যে নারী শত্রু শিবিরের খবরা-খবর এনে দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের, তাঁর সাহসী অবদান প্রায় অনুচ্চারিত। যিনি প্রশিক্ষিত নার্স না হয়েও আহত যোদ্ধাদের মায়ের স্নেহে, বোনের মমতায় সেবা করে গেছেন অহর্নিশ, তাঁর ত্যাগ আমাদের শিল্প-সাহিত্যে-গবেষণায় স্বল্প আলোচিত।

 

যে নারী প্রিয়তম স্বামী বা নাড়িছেড়া ধন সন্তানকে চোখে পানি আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, তাঁর ত্যাগ, কষ্ট, বেদনার কতটুকু জানি আমরা? মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাত রেঁধে রাতের পর রাত জেগেছেন যে নারী, নিজের জীবনের পরোয়া না করে ঘরে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন যিনি, তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা নন? কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত বয়ানগুলো শুধু নির্যাতিতা নারীর কথা বলেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে। আবার সে কথাগুলোও ঠিকঠাক বলা হয় না। তাই আমাদের ইতিহাসে নারীর বীরত্বগাথা অবহেলিত।

 

মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই যে পরিসংখ্যানটি আসে, ‘ত্রিশ লক্ষ শহিদ ও দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতা’। নারীর ক্ষেত্রে এ বক্তব্য বড় অপমানজনক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার নারীদের ওপর চালিয়েছিল বিভৎস-বিকৃত যৌন সন্ত্রাস। কেউ নির্মমতা সহ্য করতে না পেরে প্রাণ দিয়েছেন। কাউকে ট্রেঞ্চের ভেতর থেকে, বাঙ্কার থেকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বিবস্ত্র অনাহারী সেইসব নারী দেশের স্বাধীনতার জন্য সব কষ্ট সহ্য করেছেন। তাই বলে তাঁর ‘ইজ্জত’ বা ‘সম্ভ্রম’ হারিয়েছেন–এ কথা বলে তাঁকে হেয় করা হয়েছে যুগের পর যুগ।

 

সম্ভ্রম কিংবা ইজ্জত তো কারও শরীরে থাকে না। আর কোনো মানুষের সম্ভ্রমই এত ঠুনকো কোনো বস্তু নয় যে, কোনো দুর্বৃত্ত আক্রমণ করে তা লুণ্ঠন করবে। ‘নারীর সম্ভ্রমহানী’র এই ন্যারেটিভ যে কত ভুল ও নিজেদের সীমাবদ্ধতার প্রকাশ, তা দেখতে পাই সারা জীবন মাথা উঁচু করে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের নানা আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীকে দেখে।

 

শিরিন বানু মিতিল বা তারামন বিবিদের দেখেই আমরা জানতে পারি মুক্তিযুদ্ধে নারীর বীরত্বগাথা। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে, সমাবেশে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে সেদিনের বিজয়গাঁথা বলে জাগিয়েছেন জনতাকে। এমন কত শত নারী আছেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের ক’জনের খবর আমরা জানি?

 

আমরা বলি সমাজ দিনে দিনে এগিয়ে চলছে উন্নতির পথে। তাই যদি হবে তবে নারীরও তো এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল নিজস্ব চিন্তায়-কর্মে-সম্মানে-জীবনযাপনে-সংসারে। স্বাধীনতার প্রায় ৫৫ বছর পরে আদতে কী তা দেখছি আমরা? নারীর অবস্থান দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে। নারী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার তো হচ্ছেনই, উপরন্তু চারপাশের নানা ঘটনায় নারীকে অপমান করে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ার মতো অপরাধও এখন স্বাভাবিক হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে।

 

চিন্তার সংকীর্ণতা বাড়তে বাড়তে এমনভাবে মগজ ধোলাইটা হয়ে গেছে যে, নারী নিজেই আজ ঘরের শোপিস হয়ে থাকতে অপমান বোধ করছেন না। যদিওবা কর্মস্থলে যাচ্ছেন, সেখানেও নানা ক্ষেত্রে হচ্ছেন তাচ্ছিল্যের পাত্র। সংসারে নারী উন কোটি তেত্রিশ লক্ষ কাজ করবে ঠিকই; কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অধিকার তাঁর থাকা চলে না। সংসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চ আয় করা নারীও নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। পথে হাঁটতে গেলে নানাভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারীরা। তিন বছরের শিশু থেকে তিরাশি বছরের বৃদ্ধা–যৌন সন্ত্রাসীদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের কাছেই অনিরাপদ হয়ে পড়ছে নারী শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন হলো, এ তাহলে কেমন স্বাধীনতা! স্বাধীন দেশে যে সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৭২ সালে, সেখানে তো নারী-পুরুষ ভেদ করা হয়নি। তবে কেন নারীকে আজও ‘মানুষ’ মর্যাদা পাওয়ার লড়াই করতে হয়?

 

তাই বলি, বাংলার নারী আমি “স্বাধীন হইলাম, মুক্তি পাইলাম না”। সময় বয়ে যায় নারী, অধিকার সবসময় লড়েই জিতে নিতে হয়। নিজের অধিকারটি কড়ায়‑গণ্ডায় আদায় করে নেওয়ার সংগ্রামটিও আমাদের করতে হবে। ইতিহাসে নারীর অবদানকে সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরার লড়াইটিও করতে হবে। এ যুদ্ধ কেবল নারীর একার নয়, এ যুদ্ধ সকলের, মুক্তিসংগ্রামের আদর্শের প্রতিটি মানুষের।

 

১৯৭১। মুক্তিযুদ্ধ। বাংলাদেশের জন্ম-ইতিহাসের মাহেন্দ্রক্ষণ। একটি জাতির স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন-বিজয়। এই বিজয়ে রক্ত দিয়েছেন জাতি, ধর্ম, বর্ণ, লিঙ্গভেদে এ ভূখণ্ডের আপামর জনগণ। স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যখন স্পর্শ করে বাস্তবের মাটি; তখন এই সংগ্রামের আদর্শকে ঘিরে হাজারও স্বপ্ন জন্ম নেয় লাখো মানুষের মনে। এই স্বপ্নগুলোই এগিয়ে নিয়ে চলে নতুন রাষ্ট্রকে।

 

এ ভূখণ্ডের নারী-পুরুষ সকলের আত্মত্যাগ আছে স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের ইতিহাসে। কিন্তু দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের প্রায় সকল আখ্যানেই নারী কেবলই নির্যাতিত হওয়ার অংশটুকুতে বিরাজমান। সেই অংশটুকুও যেন ঠিকঠাক উঠে আসে না আমাদের আখ্যানে, আমাদের ইতিহাসে, গবেষণায়। যে নারী রাইফেল কাঁধে যুদ্ধ করেছেন, তাঁর স্থান খুবই সামান্য। যে নারী শত্রু শিবিরের খবরা-খবর এনে দিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধাদের, তাঁর সাহসী অবদান প্রায় অনুচ্চারিত। যিনি প্রশিক্ষিত নার্স না হয়েও আহত যোদ্ধাদের মায়ের স্নেহে, বোনের মমতায় সেবা করে গেছেন অহর্নিশ, তাঁর ত্যাগ আমাদের শিল্প-সাহিত্যে-গবেষণায় স্বল্প আলোচিত।

যে নারী প্রিয়তম স্বামী বা নাড়িছেড়া ধন সন্তানকে চোখে পানি আর ঠোঁটে হাসি নিয়ে যুদ্ধে পাঠিয়েছেন, তাঁর ত্যাগ, কষ্ট, বেদনার কতটুকু জানি আমরা? মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ভাত রেঁধে রাতের পর রাত জেগেছেন যে নারী, নিজের জীবনের পরোয়া না করে ঘরে অস্ত্র লুকিয়ে রেখেছেন যিনি, তিনি কি মুক্তিযোদ্ধা নন? কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের প্রতিষ্ঠিত বয়ানগুলো শুধু নির্যাতিতা নারীর কথা বলেই নিজেদের দায়িত্ব শেষ করে। আবার সে কথাগুলোও ঠিকঠাক বলা হয় না। তাই আমাদের ইতিহাসে নারীর বীরত্বগাথা অবহেলিত।

 

মুক্তিযুদ্ধের কথা উঠলেই যে পরিসংখ্যানটি আসে, ‘ত্রিশ লক্ষ শহিদ ও দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে পাওয়া এ স্বাধীনতা’। নারীর ক্ষেত্রে এ বক্তব্য বড় অপমানজনক। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সাথে রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসরা বাংলার নারীদের ওপর চালিয়েছিল বিভৎস-বিকৃত যৌন সন্ত্রাস। কেউ নির্মমতা সহ্য করতে না পেরে প্রাণ দিয়েছেন। কাউকে ট্রেঞ্চের ভেতর থেকে, বাঙ্কার থেকে অর্ধমৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। বিবস্ত্র অনাহারী সেইসব নারী দেশের স্বাধীনতার জন্য সব কষ্ট সহ্য করেছেন। তাই বলে তাঁর ‘ইজ্জত’ বা ‘সম্ভ্রম’ হারিয়েছেন–এ কথা বলে তাঁকে হেয় করা হয়েছে যুগের পর যুগ।

 

সম্ভ্রম কিংবা ইজ্জত তো কারও শরীরে থাকে না। আর কোনো মানুষের সম্ভ্রমই এত ঠুনকো কোনো বস্তু নয় যে, কোনো দুর্বৃত্ত আক্রমণ করে তা লুণ্ঠন করবে। ‘নারীর সম্ভ্রমহানী’র এই ন্যারেটিভ যে কত ভুল ও নিজেদের সীমাবদ্ধতার প্রকাশ, তা দেখতে পাই সারা জীবন মাথা উঁচু করে মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করে স্বাধীন বাংলাদেশের নানা আন্দোলন-সংগ্রামের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকা ভাস্কর ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিনীকে দেখে।

শিরিন বানু মিতিল বা তারামন বিবিদের দেখেই আমরা জানতে পারি মুক্তিযুদ্ধে নারীর বীরত্বগাথা। জীবনের শেষদিন পর্যন্ত বিভিন্ন আন্দোলনে, সমাবেশে শিরদাঁড়া সোজা করে দাঁড়িয়ে সেদিনের বিজয়গাঁথা বলে জাগিয়েছেন জনতাকে। এমন কত শত নারী আছেন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধা, তাঁদের ক’জনের খবর আমরা জানি?

 

আমরা বলি সমাজ দিনে দিনে এগিয়ে চলছে উন্নতির পথে। তাই যদি হবে তবে নারীরও তো এগিয়ে যাওয়ার কথা ছিল নিজস্ব চিন্তায়-কর্মে-সম্মানে-জীবনযাপনে-সংসারে। স্বাধীনতার প্রায় ৫৫ বছর পরে আদতে কী তা দেখছি আমরা? নারীর অবস্থান দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছে। নারী নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার তো হচ্ছেনই, উপরন্তু চারপাশের নানা ঘটনায় নারীকে অপমান করে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ার মতো অপরাধও এখন স্বাভাবিক হিসেবেই চিহ্নিত হচ্ছে।

চিন্তার সংকীর্ণতা বাড়তে বাড়তে এমনভাবে মগজ ধোলাইটা হয়ে গেছে যে, নারী নিজেই আজ ঘরের শোপিস হয়ে থাকতে অপমান বোধ করছেন না। যদিওবা কর্মস্থলে যাচ্ছেন, সেখানেও নানা ক্ষেত্রে হচ্ছেন তাচ্ছিল্যের পাত্র। সংসারে নারী উন কোটি তেত্রিশ লক্ষ কাজ করবে ঠিকই; কিন্তু সিদ্ধান্ত গ্রহণের কোনো অধিকার তাঁর থাকা চলে না। সংসারে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অনেক উচ্চশিক্ষিত ও উচ্চ আয় করা নারীও নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি। পথে হাঁটতে গেলে নানাভাবে যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছেন নারীরা। তিন বছরের শিশু থেকে তিরাশি বছরের বৃদ্ধা–যৌন সন্ত্রাসীদের হাতে নিগৃহীত হচ্ছেন। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের কাছেই অনিরাপদ হয়ে পড়ছে নারী শিক্ষার্থীরা। প্রশ্ন হলো, এ তাহলে কেমন স্বাধীনতা! স্বাধীন দেশে যে সংবিধান প্রণীত হয় ১৯৭২ সালে, সেখানে তো নারী-পুরুষ ভেদ করা হয়নি। তবে কেন নারীকে আজও ‘মানুষ’ মর্যাদা পাওয়ার লড়াই করতে হয়?

 

তাই বলি, বাংলার নারী আমি “স্বাধীন হইলাম, মুক্তি পাইলাম না”। সময় বয়ে যায় নারী, অধিকার সবসময় লড়েই জিতে নিতে হয়। নিজের অধিকারটি কড়ায়‑গণ্ডায় আদায় করে নেওয়ার সংগ্রামটিও আমাদের করতে হবে। ইতিহাসে নারীর অবদানকে সুস্পষ্ট ভাষায় তুলে ধরার লড়াইটিও করতে হবে। এ যুদ্ধ কেবল নারীর একার নয়, এ যুদ্ধ সকলের, মুক্তিসংগ্রামের আদর্শের প্রতিটি মানুষের।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments